You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম মো. আব্দুল মালেক - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম মো. আব্দুল মালেক

মো. আব্দুল মালেক, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৫০) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার সাইকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম কুলসুম বেগম এবং পিতার নাম মৌলভী সৈয়দ আহমেদ। ছাত্রজীবন থেকে তিনি রাজনীতি-সচেতন ও স্বাধীনচেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
নৌবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে মো. আব্দুল মালেকের কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে এ বাহিনীতে যোগ দেন। পশ্চিম পাকিস্তানে তিনি দুবছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে নৌবাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে করাচিতে তিনি কর্মে নিযুক্ত হন। পশ্চিম পাকিস্তানে থাকাকালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি তাঁর দৃষ্টি ছিল। আগরতলা মামলা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, আইয়ুব সরকারের পতন এবং বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর উত্থান ইত্যাদি ঘটনা তাঁকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি দেশে আসেন। একই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ- জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় আব্দুল মালেক মনে-মনে খুবই বিক্ষুব্ধ হন। ৭১-এর মার্চে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। আব্দুল মালেক মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢাকার সদরঘাটে অবস্থান করেন। সদরঘাটস্থ নৌবন্দরের বাঙালি অফিসারদের সহায়তায় তিনি নৌবন্দর সম্পর্কিত অনেক ম্যাপ, চার্ট ও অন্য দলিলপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর এসব নিয়ে তিনি ভারতে যান। তিনি এবং তাঁর সংগৃহীত ম্যাপ ও দলিলপত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নৌ-আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করে। আব্দুল মালেক নৌ-কামান্ডো বাহিনীর একজন সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন। মংলা বন্দরে কার্গো শিপ আক্রমণ, আশুগঞ্জ ফেরিঘাট, কুমিল্লার বাতাকান্দি বাজার, ঢাকার যাত্রাবাড়ি যুদ্ধ ইত্যাদি অপারেশনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. আব্দুল মালেককে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধের পর আব্দুল মালেক নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আনোয়ারা মালেক। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড