You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. আবদুল মতিন

মো. আবদুল মতিন, বীর প্রতীক (১৯৪২-২০০৯) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪২ সালের ২৭শে জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. আলফু মিয়া এবং মাতার নাম সাফিনা খাতুন। তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৬২ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। কাকুলস্থ পাকিস্তান
মিলিটারি একাডেমি থেকে সফলতার সঙ্গে কোর্স সমাপ্তির পর তিনি ১৯৬৫ সালের ১৮ই এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিল্লা সেনানিবাসে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ১০৫ স্বতন্ত্র ব্রিগেড গ্রুপ গ্রেড-৩-এ স্টাফ অফিসার হিসেবে পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর সেনানিবাসে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ আবদুল মতিন পুনরায় ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন পদে কুমিল্লা সেনানিবাসে পোস্টেড হন। অপারেশন সার্চলাইট নামে ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচার গণহত্যা আর নির্যাতন শুরু করলে বাঙালি সামরিক, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণ প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করে। আবদুল মতিনও এ যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। অতঃপর তিনি কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে-সবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য চট্টগ্রামের মস্তাননগর প্রতিরোধযুদ্ধ -। আবদুল মতিন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের ওপর দায়িত্ব পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলসড়ক বন্ধ করে দেয়ার। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে তাঁরা প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন কুমিল্লা ও ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজের মাঝামাঝি জায়গায়। চারদিন পর এখান থেকে সরে গিয়ে সীতাকুণ্ডে তাঁদের ডিফেন্স নিতে হয়। এখানে এক সপ্তাহ থাকার পর তাঁদের ডিফেন্স নিতে হয় মস্তাননগরে এখানে তাঁরা প্রায় সাতদিন ডিফেন্স নেন। এটাই ছিল আবদুল মতিনের জীবনের স্মরণীয় ডিফেন্স। একদিন পাকিস্তানি সেনারা খুব ভোরবেলা মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্সের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবেলা করতে থাকেন। সারাদিন যুদ্ধ করার পর সন্ধ্যার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ডিফেন্স ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে আবদুল মতিন আগরতলার মেলাঘরে অবস্থিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দফতরে স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে ২নং সেক্টরে ব্রিগেড মেজর হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১০নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, জুন মাসে আবদুল মতিনের স্ত্রী এবং দুই সন্তানও মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। জুলাই মাসে তাঁর বড় মেয়ে ভারতের মেঘালয়ে মারা যান এবং তাঁকে সেখানেই সমাহিত করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আবদুল মতিনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ২৫১, খেতাবের সনদ নং ১)।
মুক্তিযুদ্ধপরবর্তীকালে আবদুল মতিন তাঁর কর্মস্থল বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮১ সালে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে ১৯৮২ সালে তিনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর প্রথম মহাপরিচালক (চুক্তিভিত্তিক) হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি এ-পদ থেকে অবসর গ্রহণ করে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করেন। ব্যক্তিজীবনে আবদুল মতিন দুই কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আরজুমান্দ আরা চৌধুরী। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ২০০৯ সালের ১৯শে আগস্ট পরলোক গমন করেন। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!