You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম মো. আবিদুর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম মো. আবিদুর রহমান

মো. আবিদুর রহমান, বীর বিক্রম (১৯৪৮-২০১০) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অপারেশন জ্যাকপট-এর সাব- মেরিনার। তিনি ১৯৪৮ সালের ৭ই নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম আনোয়ারা বেগম এবং পিতার নাম সফিকুর রহমান। তিনি নাগরপুর ও টাঙ্গাইলে পড়াশুনা করেন।
পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে আবিদুর রহমান কর্মজীবন শুরু করেন। পাকিস্তান নৌবাহিনী ফ্রান্স থেকে ৩টি সাবমেরিন ক্রয় করলে সেগুলোর একটি পিএনএস ম্যানগ্রো-তে তিনি নিযুক্ত হন। করাচিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ মো. আবিদুর রহমান সাবমেরিনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৯ সালে আবিদুর রহমানকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ফ্রান্সে পাঠানো হয়। তিনি ফ্রান্সে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি অন্য কয়েকজন বাঙালি সাবমেরিনারের সঙ্গে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে ভারতের দিল্লিতে আসেন। ভারতে আসার পর তাঁদের সঙ্গে জেনারেল এম এ জি ওসমানী-র যোগাযোগ হয়। মুক্তিবাহিনী নৌকমান্ডো দল গঠন করলে আবিদুর রহমান প্রথম দিকে তাতে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। নৌকমান্ডো দল দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যেসব আক্রমণ করে, সেগুলোর কয়েকটিতে আবিদুর রহমান নেতৃত্ব প্রদান করেন। বিশেষ করে অপারেশন জ্যাকপট-এর অধীনে ১৫ই আগস্ট নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর অপারেশনে তিনি সাহস, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বের কারণে কমান্ডোরা গভীর রাতে পানিতে নেমে জাহাজে মাইন স্থাপন করতে সক্ষম হন। এদিন এক সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ বন্দরে ১৫টি মাইন বিস্ফোরিত হয়। এ সফল অপারেশনের খবর সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর অপারেশন ছাড়া আবিদুর রহমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ খাদ্যগুদাম অপারেশন, মেঘনা ফেরিঘাট আক্রমণ, পাকিস্তানিদের রসদবাহী তুরাগ জাহাজে আক্রমণ, তারাবো ফেরিঘাট অপারেশন, কাঁচপুর ব্রিজ অপারেশন ইত্যাদিতে নেতৃত্ব দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. আবিদুর রহমানকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হামিদা রহমান। মো. আবিদুর রহমান ২০১০ সালের ২০শে অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড