You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম মো. আবু ইউসুফ খান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম মো. আবু ইউসুফ খান

মো. আবু ইউসুফ খান, বীর বিক্রম (১৯৩৭-১৯৯৯) কর্নেল আবু তাহেরের অগ্রজ ও ১১নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৭ সালের ১লা জানুয়ারি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মহিউদ্দীন আহমেদ ও মাতার নাম আশরাফুন্নেছা। আবু ইউসুফ খান পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রকৌশল শাখার সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি সৌদি আরবে প্রেষণে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের পরিবার ছিল খুবই রাজনীতি সচেতন। বিদেশের মাটিতে থেকেও তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিপুল বিজয়ের মধ্যে তিনি অন্যান্য বাঙালিদের মতো পূর্ববাংলার জনগণের মুক্তির স্বপ্ন দেখছিলেন। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর ও বাঙালির জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ছয়দফা কর্মসূচি-র তিনি একজন ঘোর সমর্থক ছিলেন। ৭১-এর মার্চের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি দেশের মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ হন। ২৫শে মার্চের কালরাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা শুরু হলে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে মনস্থির করেন এবং সৌদিআরব থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি তাঁরই সহোদর ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ সেক্টরের অধীন জামালপুরের কামালপুর যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ঘটনা। এখানে পাকহানাদার বাহিনীর একটি অত্যন্ত শক্ত ঘাঁটি ছিল। ঐ ঘাঁটি দখলের লক্ষে ১৪ই নভেম্বর সংঘটিত যুদ্ধে কর্নেল আবু তাহের গুরুতর আহত হন এবং তিনি একটি পা হারান। চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতের হাসপাতালে নেয়া হলে তাঁর অনুপস্থিতিতে আবু ইউসুফ খান পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী বিভিন্ন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর মধ্যে বকশিগঞ্জ ও জামালপুর যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতীয় মিত্রবাহিনী-র মাউন্টেন ব্রিগেডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশের পথে গাজীপুরের মৌচাকে ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার আব্দুল কাদের খানকে তিনি বন্দি করেন। ১৬ই ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণকালে তিনি মিত্রবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. আবু ইউসুফ খানকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ফাতেমা ইউসুফ। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু ইউসুফ খান ১৯৯৯ সালের ৩রা জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড