You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. আবুল হোসেন

মো. আবুল হোসেন, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৬) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালের ১লা জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানার চরকুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে পরিবার নিয়ে তিনি খুলনার বাগমারায় স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলেন। তাঁর পিতার নাম এছাহাক গাজী এবং মাতার নাম সোনাই বিবি। তিনি জয়ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।
আবুল হোসেন তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে। তিনি ১৯৭১ সালে ইপিআর-এর নায়েব সুবেদার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। একই বছর হাবিলদার হিসেবে চুয়াডাঙ্গা ৪ নম্বর উইং ‘ডি’ কোম্পানির যাদবপুরে তাঁর কর্মস্থল ছিল। ২৬শে মার্চ তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন।
যশোর জেলার যাদবপুর, চৌগাছা, কোটচাঁদপুর, বেনাপোল, কাশিপুর, বেলতা, ছুটিপুর, মাসলী, বর্ণী, পলায়নপুর; কুষ্টিয়া জেলার দর্শনা, জীবননগর ও খুলনা জেলার মোল্লারহাট, ফকিরহাট, রূপসা, খুলনা সদর ইত্যাদি জায়গা আবুল হোসেনের যুদ্ধ-এলাকা ছিল। তিনি বেনাপোলে পাকবাহিনীর সঙ্গে ৮ ঘণ্টাব্যাপী সংঘটিত যুদ্ধে অংশ নেন এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ছাদেকসহ ৭-৮ জন পাকসৈন্যকে তিনি হত্যা করেন। এখান থেকে পাকবাহিনীর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও একটি জিপ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। আবুল হোসেন এ যুদ্ধে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ এবং মাথায় ও মেরুদণ্ডের ডান দিকে মর্টার শেলের আঘাতে আহত হন। তাঁকে ভারতের বনগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন কে এন হুদার অধীনে ৮ নম্বর সেক্টরে পুনরায় যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ছুটিপুর বাজারে লুণ্ঠনরত পাকসেনাদের একজনকে হত্যা ও অন্য একজনকে আটক করেন। এছাড়া পাকবাহিনীর গাড়ি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ তাঁরা দখল করতে সক্ষম হন। কাশিপুর বেলতায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে পাকবাহিনী ব্যাপক হামলা চালালে আবুল হোসেন ও তাঁর মুক্তিযোদ্ধা দল তাদের হটিয়ে দেন। এখানে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ও একজন ল্যান্স নায়েক আটক হয় এবং একজন পাকসেনার লাশ কব্জা করা হয়। শত্রুবাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যানবাহন নিজেদের দখলে নিয়ে আবুল হোসেন সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আবুল হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪৫৯, খেতাবের সনদ নম্বর ২০৯)। মুক্তিযুদ্ধের পর আবুল হোসেন বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগদান করেন। ২০০৩ সালে তিনি বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর জীবনে তিনি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। অন্যদের সহযোগিতায় তিনি বাগমারায় একটি আদর্শ স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আফরোজা হোসেন। মো. আবুল হোসেন বর্তমানে খুলনার বাগমারায় বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!