বীর প্রতীক মো. আব্দুল আজিজ
মো. আব্দুল আজিজ, বীর প্রতীক (১৯৫০-১৯৯৯) বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল সেক্রেটারি। তিনি ১৯৫০ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ষাটশালা
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এম এ মজিদ এবং মাতার নাম সুফিয়া মজিদ। আব্দুল আজিজের পৈতৃক বাড়ি ষাটশালায় হলেও তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকার ধানমণ্ডিতে বসবাস করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ধানমণ্ডি বয়েজ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে এইচএসসি এবং স্বাধীনতার পর একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। আব্দুল আজিজ অসীম সাহসী ও রাজনীতি- সচেতন ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর অনুসারী হিসেবে ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগ-এর নেতা ছিলেন। ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।
ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে আব্দুল আজিজ স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঢাকায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ-এর সকল কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি অন্য নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার এবং ঢাকায় পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর আব্দুল আজিজ ভারতে যান। আগরতলায় গিয়ে তিনি মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। মেলাঘরে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আব্দুল আজিজ ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে আত্মঘাতী গেরিলা দলের সদস্য হন। এ দলের সদস্য হিসেবে তিনি ঢাকা শহর, নারায়ণগঞ্জ, আড়াইহাজার ইত্যাদি এলাকায় পরিচালিত বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকা শহরের পরিবেশ শান্ত ও স্বাভাবিক দেখানোর জন্য বিদেশী সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করত। জুন মাসে জাতিসংঘের একটি দল এরূপ পরিদর্শনে এলে মুক্তিযোদ্ধারা ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের নির্দেশে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনা করেন। আব্দুল আজিজ যাত্রবাড়ির বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ধ্বংস করার অপারেশনে অংশ নেন। পাকসেনা ও রাজাকারদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা এ অপারেশন সফল করেন। এছাড়া, আব্দুল আজিজ ঢাকার গ্রিন রোড, সায়েদাবাদ, নারায়ণগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার কয়েকটি অপারেশনে অংশ নিয়ে প্রচণ্ড সাহসিকতা প্রদর্শন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আব্দুল আজিজকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা এবং তাঁদের স্বার্থে কাজ করার জন্য আত্মনিয়োগ করেন। তিনি কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগতভাবে তিনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একজন সৎ ও দক্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। ১৯৯৯ সালের ১০ই আগস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নিলুফার আজিজ। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড