You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. আনোয়ার হোসেন

মো. আনোয়ার হোসেন, বীর প্রতীক (১৯৫৪-২০১৬) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৪ সালে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আমির হোসেন, মাতার নাম আমেনা বেগম।
১৯৭১ সালে মো. আনোয়ার হোসেন সিলেট ওয়াপদায় চাকরি করতেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালিদের ওপর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে তিনি ৯নং সেক্টরের টাকী সাব-সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে নিজ এলাকায় এসে কুদ্দুস মোল্লা, বীর প্রতীকএর দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, গৌরনদী, মুলাদী প্রভৃতি স্থানে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জুলাই মাসের শেষদিকে তাঁরা বরিশাল সদর থেকে উত্তরদিকে গৌরনদী এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এ এলাকার নদীপথে পাকবাহিনীর রসদবাহী লঞ্চ চলাচল করত। মিলিশিয়া ও -রাজাকর-রা পাহারা দিয়ে এসব লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করত। দলনেতা কুদ্দুস মোল্লার নির্দেশে মো. আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকবাহিনীর রসদবাহী লঞ্চ আসার সংবাদে তা আক্রমণ করার জন্য নদীর তীরে সুবিধাজনক স্থানে ওঁৎ পেতে থাকেন। রসদবাহী একটি লঞ্চ তাঁদের গুলির আওতায় এলে একযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। লঞ্চে থাকা পাকবাহিনী ও পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া মিলিশিয়ারাও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি চালায়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা গানবোট লক্ষ করে মর্টার থেকে ২-৩টি গোলা ছুড়লে পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা ভয় পেয়ে লঞ্চ থেকে নেমে গানবোটে পালিয়ে যায়। আগস্ট মাসে মো. আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাতারহাটে হানাদার বাহিনীর একটি গানবোট আক্রমণ করেন। পাকবাহিনীও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা গুলি চালায়। এ পর্যায়ে তারা নদীর তীরে নেমে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভাঙ্গার চেষ্টা চালায়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে ৩-৪ পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্য পাকসেনারা গানবোটে পালিয়ে যায়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. আনোয়ার হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি ওয়াপদার চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থায় ২০১৬ সালে তে যোগদান তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মোসা. দেলোয়ারা বেগম। মো. আনোয়ার হোসেন, বীর প্রতীক ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!