বীর প্রতীক মো. আনোয়ার হোসেন
মো. আনোয়ার হোসেন, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৫) কলেজের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর পাকিস্তানি দালাল মোনায়েন খানের অন্যতম হত্যাকারী। তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা জেলার গুলশান থানার কালাচাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল কাদির এবং মাতার নাম জহুরা খাতুন। আনোয়ার হোসেন এসএসসি পাস করার পর কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাসে ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
স্কুলে ছাত্র থাকা অবস্থায় আনোয়ার হোসেন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। পাকিস্তানি ও অবাঙালিরা বাঙালিদের প্রতি যে অপমান ও বৈষম্যমূলক আচরণ করত, তা আনোয়ার হোসেনের কিশোর মনকে বিক্ষুব্ধ করে। সে-সময় থেকে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করার ইচ্ছা তাঁর মনে জাগ্রত হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় সারাদেশে যে বিক্ষোভ, আন্দোলন এবং সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে, তা আনোয়ার হোসেনকেও প্রভাবিত করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭১-এর মার্চে অনুষ্ঠিত – অসহযোগ আন্দোলন-এ তিনি যোগ দেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা এবং এরপর দেশব্যাপী দখলদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান। আগরতলায় গিয়ে তিনি ও তাঁর মামাতো ভাই মোজাম্মেল হক, বীর প্রতীক ২ নম্বর সেক্টরে যুক্ত হন। মেলাঘর ও মতিনগরে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তাঁকে ঢাকা শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গেরিলা অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ গ্রুপের সদস্য করা হয়। ২ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স থেকে ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার আনোয়ার হোসেন ও মোজাম্মেল হককে কুখ্যাত দালাল ও পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েন খানের ওপর আক্রমণ করার দায়িত্ব দেন। ১৩ই অক্টোবর তাঁরা এ আক্রমণ পরিচালনা করেন। মোনায়েম খানের বাড়িতে চাকরিরত শাহজাহান ও মোখলেসের সহায়তায় তাঁরা এ অপারেশন সফল করেন। ঢাকার বনানীর বাড়িতে ড্রয়িং রুমে আলাপরত অবস্থায় মোনায়েন খানের ওপর আক্রমণ করা হয়। মোজাম্মেল হক স্টেনগান দিয়ে গুলি করেন এবং আনোয়ার হোসেন ফসফরাস বোমা নিক্ষেপ করেন। অপারেশন সফল হয় ও মোনায়েম খান নিহত হয়। পরদিন এ খবর সারাবিশ্বে প্রচারিত হয় এবং চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনা দ্বারা মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হন। এ অপারেশন ছাড়া আনোয়ার হোসেন কালীগঞ্জের ইছাপুরসহ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আনোয়ার হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মাহিনুর হোসেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড