You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা (বরিশাল) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা (বরিশাল)

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা (বরিশাল) ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মেহেন্দীগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ (‘পিস্তল মহিউদ্দিন’ নামে সর্বাধিক পরিচিত) বিপুল ভোটে এমপিএ নির্বাচিত হন। সারা দেশেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু তাদের সরকার গঠন করতে না দেয়ায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম থেকেই পাতারহাট বন্দরের পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। ৩রা মার্চ ছাত্র সমাবেশে বন্দরের তেমুহনি চত্বরে ছাত্রলীগ-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রব সিকদার পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দেন এবং ছাত্রলীগ সভাপতি সরদার আনিছুর রহমান মানচিত্র অঙ্কিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পরদিন বেতারে প্রচারিত হলে সাধারণ মানুষ মুক্তিসংগ্রামে যোগদানের সংকল্প করে।
১১ই মার্চ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। ১৩ই মার্চ সংগ্রাম কমিটির প্রথম বৈঠকে বাহাউদ্দিন খানকে থানা প্রশাসক নিযুক্ত ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৫ই মার্চ ৭০-৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে পুরাতন হাসপাতাল মাঠে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গঠন করা হয়। ২৪শে মার্চ জেলা কমিটির নির্দেশে আ. জলিল বেপারীকে কমান্ডার করে মেহেন্দীগঞ্জ থেকে ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে বরিশালের তৎকালীন বেলসপার্কে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান) পাঠানো হয়। ২৫শে মার্চ রাত ১টার দিকে ঢাকার মগবাজার ওয়ারলেস গেট থেকে গণহত্যার খবর আসে। মেহেন্দীগঞ্জ টিএন্ডটি অফিসে কর্মরত মুজিবর রহমান এ খবর বাহাউদ্দিন খানসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের জানান। এরপর ঢাকা থেকে লোকজন গ্রামে আসতে শুরু করে। তাদের মুখে ঢাকার নৃশংস গণহত্যার কথা শুনে সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান শুরু করে।
১১ই মার্চ সংগ্রাম কমিটি গঠন করার পর ১৫ই মার্চ পাতারহাট বন্দরস্থ পুরাতন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আনসার, ইপিআর, ছুটিতে আসা অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য, কৃষক-শ্রমিক ও ছাত্র-যুবক সহ ৭০-৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ল্যান্স নায়েক আব্দুল খালেক জমাদ্দার (কমান্ডার), আব্দুল মকিম তালুকদার, জয়নাল আবেদিন মিয়া, সাইদুর রহমান ওরফে রেনু মিয়া, আব্দুল বাতেন। সহযোগী হিসেবে ছিলেন আনসার আব্দুল জব্বার বেপারী (পরে তাকে বরিশালে স্থানান্তরিত করা হয়) ও খোরশেদ আলম। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন সুবেদার রফিকুল ইসলাম। দুদিন পর জায়গার স্বল্পতার কারণে ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়া ও সার্বিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে পাতারহাট জুবলি ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থানান্তরিত হয়। ২৪শে মার্চ ২০০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মেহেন্দীগঞ্জ থেকে বরিশাল বেলসপার্কে জমায়েত হন।
মে মাসের শেষদিকে আনসার সদস্য খোরশেদ আলম (‘বিচ্ছু’ উপাধিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা) বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ২টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও ২ বাক্স বুলেট নিয়ে পালিয়ে আসেন। এ খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে সরদার আনিছ, আব্দুল রব, সৈয়দ জামান বেপারী প্রমুখ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর আগে ২৬শে এপ্রিল হরিনারায়ণ নাথ তাঁর উত্তরবাজার কালীমন্দিরের পেছনের বাসভবনে ১ বাক্স বুলেট ও ৫ বাক্স গ্রেনেড সংগ্রহ করে রাখেন। ২৫শে এপ্রিল সন্ধ্যায় বরিশাল শহরে পাকহানাদার বাহিনীর দখলদারিত্বের সংবাদ পেয়ে সরদার আনিছ, আব্দুল রব, ইউনুস বেপারী, মৃণাল কান্তি কর্মকার, শহীদ শাহ্, মিলন কুমার কর্মকার, গিয়াসউদ্দিন মুতী, কামাল উদ্দীন খান, মদন মোহন পাল ও হরিনারায়ণ নাথ একটি নৌকায় করে চরশ্যামরা গ্রামের এক বাড়িতে অস্ত্রগুলো সংরক্ষণ করেন। এরপর উলানিয়ার আব্দুল খালেক জমাদ্দারকে কমান্ডার করে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়।
মেহেন্দীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন আব্দুল খালেক জমাদ্দার (প্রথম কমান্ডার), সৈয়দ জামান বেপারী, আবদুস সত্তার দেওয়ান, সৈয়দ আহমেদ ভূঞা, সৈয়দ সিকদার, হরিনারায়ণ নাথ, নিত্যানন্দ পাল, খলিলুর রহমান মোল্লা, নুরুল হুদা, আব্দুল মালেক মুন্সী, তোফায়েল আহম্মদ মানিক (৯ই মে পাকহানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়, তাঁর আর সন্ধান পাওয়া যায়নি), জয়দেব চন্দ্র হালদার, সরদার আনিছুর রহমান, আব্দুল রব সিকদার, মদনমোহন পাল, আব্দুল মকিম তালুকদার, আব্দুল রব ওরফে কাঞ্চন সিফাই, গোলাম আজম চৌধুরী ও আবুল হাসেম পঞ্চাইত। এছাড়া চরএক্কারিয়া ইউনিয়নে আ. মতিন, গাজী তালুকাদার ও মজিবল হাওলাদার; দক্ষিণপারে ডা. মজিবুর রহমান, আব্দুল খালেক মাতব্বর, নজীর আহম্মেদ হাওলাদার ও সিদ্দিক চেয়ারম্যান; ভাষানচরে আনিছুর রহমান চৌধুরী ও সেকান্দার মৃধা; বিদ্যানন্দপুরে আব্দুস জব্বার খান; কাজীর হাটে আব্দুল খালেক মাস্টার এবং আন্ধারমানিকে মাহাবুল আহম্মদ খান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে বাম ধারার সংগঠনগুলোর আব্দুল রব হাওলাদার, মজিবর রহমান কালু, নবরাজ ও আবদুস সত্তার আসকারী সংগঠক হিসেবে কিছুটা দায়িত্ব পালন করেন। মে মাসে ১৭ জন বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর সদস্য নিয়ে আব্দুস সত্তার দেওয়ানকে মুক্তিযোদ্ধা সহায়ক পরিষদের আহ্বায়ক ও আব্দুল খালেক জমাদ্দারকে কমান্ডার করে মেহেন্দীগঞ্জে প্রথম একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়।
জুন-জুলাইর দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে আবদুল খালেক জমাদ্দার, মকিম তালুকদার, সরদার আনিছ এবং আব্দুল বাতেন পুনরায় তাঁদের সংগঠিত করেন। আগস্ট মাসে সানু কমান্ডারের নেতৃত্বে ৭০-৭৫ জনের একটি দল ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর এ এম জি কবির ভুলুর নেতৃত্বে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪০-৫০ জনের আর একটি দল আসে। ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর বরিশাল জেলার দায়িত্বে এসে মুলাদির কুদ্দুস মোল্লাকে হিজলা-মুলাদি-মেহেন্দীগঞ্জের বেইজ কমান্ডার করে মেহেন্দীগঞ্জে পাঠান। কুদ্দুস মোল্লা তাঁর দল নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জে এসে এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। এঁদের সমন্বয়ে মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদিতে যুদ্ধ চলে। পরবর্তীতে মেহেন্দীগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট- ছোট উপদল গঠন করে একজনকে কমান্ডার করে অপারেশনে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে ভাষানচরে কাশেম কমান্ডার, উলানিয়ায় খালেক কমান্ডার এবং সৈয়দ আলী ভূঞার দল উল্লেখযোগ্য। তিন থানার মূল কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা।
মেহেন্দীগঞ্জে উল্লেখযোগ্য কোনো স্থানীয় বাহিনী ছিল না। তবে কয়েকটি উপদলের মধ্যে সৈয়দ আলী ভূঞার নেতৃত্বে সৈয়দ ভূঞা গ্রুপ, ভাষানচরে কাসেম কমান্ডার গ্রুপ, উলানিয়ায় খালেক কমান্ডার গ্রুপ, পরবর্তীতে ভারত থেকে আসা ৪০-৫০ জনের করিম এন্ড ভুলু গ্রুপ, মজিবুর রহমান সানুর নেতৃত্বে ৭০-৭৫ জনের সানু গ্রুপ তৎপর ছিল। হিজলা-মুলাদি-মেহেন্দীগঞ্জে বেইজ কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার নিজস্ব একটি বাহিনী ছিল। এছাড়া পাতারহাট বাজারের কুলিদের একাংশের একটি ক্ষুদ্র দল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৯ই মে বাজিৎখাঁ লঞ্চঘাট দিয়ে প্রথম মেহেন্দীগঞ্জে অনুপ্রবেশ করে। শান্তি কমিটির সভাপতি ডা. মোশারেফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল রাজাকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে। গোপন সূত্রে এ খবর পেয়ে আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক অবস্থানে থাকেন। তখন গ্রেনেড ছাড়া মুক্তিবাহিনীর কাছে অন্য কোনো অস্ত্র ছিল না। প্রাথমিকভাবে মুক্তিবাহিনী কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটালে বিপরীত দিক থেকে হানাদার বাহিনীর মেশিনগানের গুলি ছুটে আসে। ফলে মুক্তিবাহিনী দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর ১৩ ও ১৪ই আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা উলানিয়া বন্দরের দিকে অগ্রসর হন এবং বন্দরের ৫ জন নিরীহ হিন্দুকে বিনা দোষে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর অপরাধে উলানিয়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সভাপতি নাগর মিয়াকে হত্যা করেন। এছাড়া সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার দালালদের গতিবিধির ওপর নজর রেখে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় পাকহানাদারদের অনুপ্রবেশের আগেই জামায়াতে ইসলামী – ও মুসলিম লীগ-এর নেতা-কর্মী এবং স্থানীয় বিহারি সম্প্রদায়ের কিছু লোক রাজাকার বাহিনী গঠন করে। মেহেন্দীগঞ্জ থানা সংলগ্ন পাতারহাট মুসলিম হাইস্কুলে রাজাকাররা ঘাঁটি স্থাপন করে। ৯ই মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মেহেন্দীগঞ্জে অনুপ্রবেশ করলে শান্তি কমিটি ও মুসলিম লীগের সভাপতি ডা. মোশারেফ হোসেন তাদের পাতারহাট মুসলিম হইস্কুলে নিয়ে আসে। এটাই ছিল পাকবাহিনী ও রাজাকারদের প্রথম ক্যাম্প। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিসংযোগ-খুন-ধর্ষণ-লুটপাট করার সময় পাকবাহিনী স্থানীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতাদের বাড়িতে অবস্থান নিত। মেহেন্দীগঞ্জে প্রবেশ করেই পাকহানাদাররা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তোফজ্জেল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করে এবং পরে বরিশাল নিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হানাদাররা গানবোটে করে চারদিক থেকে মেহেন্দীগঞ্জকে ঘেরাও করে বিভিন্ন এলাকায় গুলিবর্ষণ করে।
মেহেন্দীগঞ্জে পাকহানাদার বাহিনী খুব বেশিদিন অবস্থান করেনি। এখানে অধিক তৎপর ছিল রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির লোকেরা। তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিল ডা. মোশারেফ হোসেন ও এ কে ফজলুল হক তালুকদার ওরফে নয়া মিয়া। এরা ছিল স্বাধীনতা ও গণবিরোধী সমস্ত কর্মকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এদের সহায়ক ছিল চানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন তালুকদার। মেহেন্দীগঞ্জে ১১১ সদস্যের শান্তি কমিটি ছিল। এর সভাপতি ছিল ডা. মোশারেফ হোসেন (পিতা নুরুজ্জামান খান, চরহোগলা, মুসলিম লীগের সভাপতি) এবং সাধারণ সম্পাদক ছিল এ কে ফজলুল হক তালুকদার (পিতা আ. ওয়াহেদ তালুকদার, বদরপুর; মুসলিম লীগ নেতা)। সদস্যদের মধ্যে ছিল- মাওলানা হাসান আল মামুন (পিতা নাজমুল ইসলাম, হাসানপুর; আলবদর বাহিনীর জেলা কমান্ডার), আমিনুল ইসলাম (হাসানপুর), নাছির উদ্দিন তালুকদার, জাহাঙ্গীর সিকদার (পিতা তফিন আহম্মদ সিকদার, রামনাথপুর; চানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও রাজাকার কমান্ডার), বাদশা আলম (কোর্টের হাট), রাট্টি দেওয়ান, আ. জব্বার রাঢ়ি (পিতা আ. রহমান রাঢ়ি, নয়নপুর; উলানিয়া ইউনিয়ন আলবদর নেতা), আ. রব মৃধা (রুকুন্দি), ইয়াকুব আলী ঢালি (রুকুন্দি), মোহাম্মদ আলী (দুর্গাপুর), আ. রশিদ (কালিকাপুর), আব্দুল হক মাস্টার (রুকুন্দি), আ. খালেক বেপারী (চরহোগলা), আ. জলিল মাতুব্বর (খন্তাখালী), আ. ওয়াহিদ সিকদার (চানপুর ইউনিয়ন), আ. হাফেজ মুন্সী (লস্করপুর ইউনিয়ন), আ. খালেক মোল্লা (কাচিয়ার চর), মো. নগর মিয়া (উলানিয়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সভাপতি, পরে মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত), মো. হিরু মিয়া (চরহোগলা), আ. জলিল জমাদ্দার (বদরপুর), আনোয়ার হোসেন খান ওরফে আনু খাঁ (বদরপুর), তোফাজ্জেল হক সিকদার (রামনাথপুর) প্রমুখ। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে শান্তি কমিটির শাখা ছিল। সেসব শাখা কমিটির সদস্য ছিল— আলাউদ্দিন চাপরাশি (রুকুন্দি), মৌলভী আ. মান্নান (উলানিয়া ইউনিয়ন), মাওলানা আ. সত্তার (নলগোড়া, গোবিন্দপুর ইউনিয়ন), তোফাজ্জেল মিয়াজী (বদরপুর), হারুন খান (পিতা ডা. মোশারেফ হোসেন, থানা শান্তি কমিটির সভাপতি, চরহোগলা; পরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত) প্রমুখ।
মেহেন্দীগঞ্জে স্বাধিনতাবিরোধী দলগুলোর মধ্যে মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল। এই দুই দলের নেতা-কর্মীরা স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারীকে নিয়ে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী এবং শান্তি কমিটি গঠন করে। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, লুট-তরাজ, ধর্ষণ, ডাকাতি এবং ধর্মান্তরিত করার মতো সব ধরনের অন্যায় সংঘটিত হয়। শান্তি কমিটির সভাপতি ডা. মোশারেফ হোসেন ও তার ছেলে হারুন রাজাকার, শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে ফজলুল হক তালুকদার, রাজাকার কামন্ডার নাছির উদ্দিন তালুকাদার, মোহাম্মদ আলী, বাদশা আলম ও জলিল রাজাকার অধিক তৎপর ছিল। এদের মধ্যে ডা. মোশারেফ হোসেন, তার ছেলে হারুন রাজাকার ও এ কে ফজলুল হক তালুকদার ওরফে নয়া মিয়া সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করার সময় এরা বোরখা পরে মেয়েদের জুতা পায়ে দিয়ে ছদ্মবেশে গ্রামে ঢুকত।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকাররা পাতারহাট বন্দরে রাস্তার মোড়ে-মোড়ে হেরিকেন ও হেজাক লাইট জ্বালিয়ে অবস্থান করত এবং পথচারীদের কাছ থেকে অর্থকড়ি লুণ্ঠন করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করত। হত্যার পর লাশগুলো থানা ক্যাম্পের পাশের খালে অথবা বালিকা বিদ্যালয়ের পেছনের খালে ফেলে দেয়া হতো। শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা- কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ-এর সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি, অফিস ও দোকানপাট লুণ্ঠনের পর জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া মেহেন্দীগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র পাতারহাটের ৯৯ শতাংশ এবং উলানিয়া ও পুরনো কালিগঞ্জ বাজারের ৯০ শতাংশ দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়।
রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পাতারহাট রসিক চন্দ্র কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক আব্দুল মান্নান, পাতারহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আব্দুল হাসেম মাস্টার, পাতারহাট জুবলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অতীন্দ্রলাল চট্টোপাধ্যায় ও কালিকাপুর সিকদার বাড়ির চার ভাই সামসুদ্দিন আহম্মেদ সিকদার, আবুল বাশার সিকদার, খোরশেদ আলম সিকদার ও ফরিদ উদ্দিন সিকদার এবং ইয়ারবাগের সুলতান জমাদার ও আবদুর রব জমাদারকে এক রশিতে বেঁধে ১৭ই সেপ্টেম্বর ভোররাতে হত্যা করে, যা ইয়ারবাগ গণহত্যা- নামে পরিচিত। ১৭ই নভেম্বর পাতারহাট বন্দরের ব্যবসায়ী সারদা কান্তি বিশ্বাস (বদরপুর), নূর মোহাম্মদ জমাদ্দার (অম্ভিকাপুর), গোষ্ঠবিহারী নন্দী (অম্ভিকাপুর) এবং বদরপুরের দলিল উদ্দিন বেপারীসহ শতাধিক বেসামরিক লোককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা পাতারহাট বন্দর গণহত্যা নামে পরিচিত। পাতারহাট বন্দরের চিস্তি মার্কেটের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ ছিল হানাদারদের নির্যাতনকেন্দ্র। এখানে কাকলী রাণী নাথ, আরতি রাণী মাঝি (খরকী), সুনি মাঝি (খরকী), গীতা রাণী মাঝি (খরকী), মন্দলী রাণী সাদনী (পূর্বহর্নি), ছাবের বেগম (বদরপুর), জরিনা (বদরপুর), পুষ্পরাণী (তেতুলিয়া)-সহ উলানিয়া, কালিগঞ্জ ও মেহেন্দীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অর্ধশত নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। ১৬ই সেপ্টেম্বর বাম ধারার গেরিলা নেতা আব্দুল রব হাওলাদারের বাড়িসহ গুরুকুন্দি গ্রামের ২৫ ভাগ ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি সরদার আনিছের এলাকা সাদেকপুরের ৩০ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ জামান বেপারীর বাড়িসহ বদরপুর গ্রামের ৩৫ শতাংশ ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়। এছাড়া হিন্দুপ্রধান গ্রাম খরকী, কালিকাপুর, দুর্গাপুর, কাশিপুর, অম্বিকাপুর ও চরহোগলা গ্রামের ৪০ শতাংশ ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়। দলিল উদ্দিন বেপারী (বদরপুর) নামে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারানো এক ব্যক্তি যেখানে-সেখানে ‘জয় বাংলা’ বলে চিৎকার করত। পাকসেনারা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন ঘাঁটি কাশিপুরকে লক্ষ করে পাকহানাদার বাহিনী বুলেট ও ডিনামাইট নিক্ষেপ করে।
পাতারহাট বন্দরে অবস্থিত মেহেন্দীগঞ্জ থানা সংলগ্ন পাতারহাট মুসলিম হাইস্কুলকে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। স্কুলের কিছু কক্ষও তারা বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহার করে। আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের সমর্থক এবং সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের সদস্যদের এসব ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। পরে তাদের হত্যা করা হতো কিংবা বরিশালে চালান দেয়া হতো। পাতারহাট বালিকা বিদ্যালয়, পুরনো হাসপাতালের পুকুরপাড়, হাসাপাতলের সামনে অবস্থিত কবরস্থানের দক্ষিণ-পূর্ব পাশ, আব্দুল হাসেম হাওলাদের বাড়ির সামনের খালপাড়ও ছিল পাকহানাদার ও তাদের দোসরদের নির্যাতনকেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের এসব স্থানে ধরে এনে বেয়নেট চার্জ করে বা অন্য উপায়ে হত্যা করা হতো। আব্দুল্লাহপুর জামে মসজিদের পশ্চিম পাশের খালপাড়েও মানুষ হত্যা করা হতো। স্বাধীনতার পরে এখানে বেশকিছু মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। এছাড়া বদরপুর পুলের নিচে শতাধিক মানুষের মাথার খুলি ও কঙ্কাল পাওয়া যায়।
২৭শে নভেম্বর হানাদার বাহিনী মেহেন্দীগঞ্জ থানা গণহত্যা- চালায়। এ গণহত্যায় শতাধিক মানুষ শহীদ হন। পাতারহাট বন্দরে অবস্থিত পুরনো হাসপাতাল এবং বালিকা বিদ্যালয়ের পেছনে অবস্থিত পুকুর ও পুকুর সংলগ্ন স্থান এবং খালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা করে তাদের মৃতদেহ ফেলে রাখত। এছাড়া কালিকাপুর হাসেম হাওলাদারের বাড়ির সামনে অবস্থিত খালপাড়, থানা ক্যাম্পের দক্ষিণ পাশের খালপাড়, পাতারহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের খালপাড়ে হিজলা, মুলাদি, নোয়াখালী, ভোলা ও রামদাশপুর থেকে বাণিজ্য করতে আসা লোকদের অর্থ-সম্পদ লুট করে তাদের বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করা হতো। হাসপাতাল রোডে অবস্থিত মুসলিম কবরস্থানের একাংশ এবং কালিকাপুর সিকদার বাড়ির সামনে চার ভাই ও অন্য এক জনের কবর রয়েছে।
মেহেন্দীগঞ্জে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয় জুলাই মাসের শেষদিকে। এ-সময় কমান্ডার কুদ্দুস মোল্লার মুক্তিবাহিনী ‘ময়ূরপঙ্খী’ নামে ৪টি নৌকা নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদির বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত। উলানিয়া থেকে ভাষানচরের কাশেম কমান্ডারের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ শ্রীপুর অপারেশনে যাওয়ার পথে পাকবাহিনীর একটি স্পিড বোট দেখতে পায় এবং স্পিড বোট লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। স্পিড বোটের চালক ছিল বাঙালি। সে স্পিড বোটটি চরের সঙ্গে আটকে দেয়। এ- সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ৫ জন পাকসেনা নিহত ও একজন বন্দি হয়। বন্দি পাকসেনাকে মুক্তিযোদ্ধারা উলানিয়া বাজারে ঘুরিয়ে পরে হত্যা করেন। এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের স্পিড বোট, একটি এলএমজি এবং বেশকিছু গোলা-বারুদ উদ্ধার করেন।
হানাদার ও রাজাকাররা মিলে সাদেকপুর-রুকুন্দি-খন্তাখালী থেকে মালামাল লুট ও কয়েকজন নিরীহ লেককে বন্দি করে খরকীর ভেতর দিয়ে পাতারহাট ক্যাম্পে যাচ্ছিল। পথে পার্শ্ববর্তী কালিকাপুর গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই অতর্কিত আক্রমণে হানাদাররা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে এবং অস্ত্র ও লুট করে আনা মালামালসহ বন্দিদের রেখে পাতারহাট ক্যাম্পে পালিয়ে যায়। এরপর ১৭ই নভেম্বর ভারত থেকে আগত কমান্ডার মজিবুর রহমান সানুর নেতৃত্বে তাঁর গ্রুপ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মিলে থানা আক্রমণ করেন এবং রাজাকারদের ঘাঁটি সেক্টর মিয়ার পানের গুদামে আগুন দেন। একদিন একরাত যুদ্ধ করার পর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ফুরিয়ে যায় ও সানু কমান্ডার গুলিবিদ্ধ হন। গুরুর আহত সানু কমান্ডারকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এরপর ২০শে নভেম্বর সন্ধ্যায় সরদার আনিছ, আবদুস সত্তার দেওয়ান, খোরশেদ আলম ও কমান্ডার খালেকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মেহেন্দীগঞ্জে আসেন। পরদিন তাঁরা রাজাকারদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে শান্তি কমিটির সভাপতি ডা. মোশারেফের ছেলে রাজাকার কমান্ডার হারুন খান-সহ দুজন রাজাকারকে ধরে আনেন। পরে তাদের হত্যা করে তাদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ে আসেন।
১২ই ডিসেম্বর কমান্ডার কুদ্দুস মোল্লার নেতৃত্বে ২৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা চারদিক থেকে পাতারহার বন্দর ঘেরাও করে রাজাকার ও পুলিশ বাহিনীকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেহেন্দীগঞ্জ থানা ক্যাম্প, রাজাকার ক্যাম্প, পাতারহাট মুসলিম হাইস্কুলের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের চওড়া খাল, পূর্বপাশের আব্দুল্লাপুর জামে মসজিদ, উত্তরে বাজার ও খাল, মুসলিম হইস্কুলের ছাদের ওপর বালুর বস্তা এবং তিনদিকে বাংকার থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালাতে ব্যর্থ হন। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৭ই ডিসেম্বর গুরুকুন্দির আলতাফ ডাক্তারের মাধ্যমে রাজাকার ফজলুল হক ওরফে মাইজ্জা দারোগাকে আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু সে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করলে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্রতর হয়। টানা দুদিন যুদ্ধ করার পর ১৯শে ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করেন। এ-সময় মাইজ্জা দারোগা ফজলুল হক বাদে অন্য সব রাজাকার ও পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ যুদ্ধে রাজাকার ও পুলিশের গুলিতে খলিল মোল্লা, কালিকাপুরের মো. শাহজাহান, মুলাদির কবির উদ্দিন খান মানিক, আব্দুর রশিদ হাওলাদার ও আব্দুল জলিল (শফিপুর ইউনিয়ন) শহীদ হন। এছাড়া মেহেন্দীগঞ্জ থানা ক্যাম্প অপারেশনে আরো কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৯শে ডিসেম্বর মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা হানাদারমুক্ত হলে সরদার আনিছুর রহমান থানা কমপ্লেক্সে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কাওছার আহমেদ (পিতা খোরশেদ আলম আকন, চানপুর), হারুন আর রশিদ (পিতা বেলায়েত হোসেন, দড়িচর খাজুরিয়া), মতিউর রহমান (পিতা মজিদ হাওলাদর, দশ হাজার বিঘা), মো আব্দুস সালাম (পিতা রহমন আলী ফকির, মাদারবুনিয়া), মোখলেছুর রহমান (পিতা আইজ উদ্দিন, মতক্তা), নূর মোহাম্মদ মীর (পিতা কাশেম আলী মীর, তেতুলিয়া), শাহে আলম চৌধুরী (পিতা আব্দুল হক চৌধুরী, উলানিয়া), মোর্শেদ আলম চৌধুরী (পিতা শাহে আলম চৌধুরী, উলানিয়া), আবুল কাশেম (পিতা নূর মোহাম্মদ বেপারী, চরহোগলা), শামসুল হক (পিতা আবদুর রশিদ শরিফ, আমলি), আজিজুর রহমান (পিতা আ. হক সিকদার, সলদী), হাবিবুর রহমান (পিতা ফজলুর রহমান খান, আমলি), আবুল কাশেম (পিতা রহমত আলী মোল্লা, কোলচড়ী), আব্দুল মতিন (পিতা আহাম্মদ আলী আকন্দ, পূর্ব ইয়ারবেগ), গোলাম রাব্বানী (পিতা খলিলুর রহমান, লস্করপুর), লেফাজ উদ্দীন বেপারী (পিতা ওতর আলী বেপারী, সোনাপুর), মো. মহসীন হাওলাদার (পিতা মকবুল আহাম্মদ হাওলাদার, চারহোগলা), আ. আজিজ রাঢ়ি (পিতা আলী আসগর রাঢ়ি, রুকুন্দি), মো. আলী বেপারী (পিতা কাজেম আলী বেপারী, ভাঙ্গা), তোফাজ্জেল হোসেন মানিক (কালিকাপুর), শাহজাহান (পিতা গোলাম রহমান তালুকদার, কালিকাপুর), খলিল মোল্লা, কবির উদ্দিন খান মানিক (মুলাদি), আব্দুর রশিদ হাওলাদার ও আব্দুল জলিল|
২০১৪ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল হাইস্কুল (চানপুর), মুক্তিযোদ্ধা মকিম তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (লস্করপুর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং মেহেন্দীগঞ্জ পুরনো হাসপাতাল মাঠে একটি কাঠের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। [আতিকুর রহমান হিমু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড