মুশুরীভুজা ক্যানেল যুদ্ধ (ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
মুশুরীভুজা ক্যানেল যুদ্ধ (ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২রা আগস্ট। এতে ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট থানার অন্তর্গত মুশুরীভুজা একটি গ্রাম। এ গ্রামের কাছে ভোলাহাট-রহনপুর সড়ক ভেদকারী একটি ক্যানেল রয়েছে। এ ক্যানেলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক যুদ্ধ হয়। তবে প্রধান যুদ্ধ হয় ২রা আগস্ট।
১১ই জুলাই পঞ্চনন্দপুর যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী খুবই সতর্ক ছিল। ১৪ই জুলাই বুধবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও মনোয়ারকে রেকিতে পাঠিয়ে ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা টহলে বের হন। টহল দলের প্রধান কমান্ডার ছিলেন আ. রাজ্জাক রাজা। রেকিশেষে মুক্তিযোদ্ধারা ময়ামারী মোড়ে ফাইটিং পেট্রোল পার্টি (লড়াকু টহল দল)-র কাছে রিপোর্ট করেন। মুক্তিবাহিনী দ্রুত মুশুরীভুজা ক্যানেলে গিয়ে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা ফলতান সকাল ১০টার দিকে শত্রু কমান্ডারকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে যুদ্ধ শুরু হয় এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে।
এরপর ১৯শে জুলাই সোমবার মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। এদিন সকাল ১১টার দিকে বোয়ালিয়ার আনজার হোসেন নিপুল ভোলাহাট থানা কার্যালয় ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীকে পাকবাহিনীর অগ্রসর হবার সংবাদ দেন। এরপর মতি মাইছাকে রেকিতে পাঠিয়ে মুক্তিবাহিনীর ১৫ সদস্যের ফাইটিং পেট্রোল পার্টি বের হয় এবং মুশুরীভুজা ক্যানেলে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনীর এ দলে কমান্ডার ছিলেন ইপিআর সদস্য খলিল। শত্রুবাহিনী মুশুরীভুজা ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং মুক্তিবাহিনীর আর্টিলারি মান্নান দুই ইঞ্চি মর্টারের ৩ রাউন্ড গোলা ছুড়লে ৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। এরপর রাত ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে।
২৬শে জুলাই মুক্তিবাহিনীর ১৬-১৭ জন সদস্যের লড়াকু টহল দলের কমান্ডার ইপিআর সুবাদার গফুর মণ্ডলের নেতৃত্বে মুশুরীভুজায় যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনীর নেতৃত্বে ছিল মেজর ইউনুস। এ যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ২ জন সৈনিক গুরুতর জখম হয় এবং তারা পিছু হটে। ২রা আগস্ট সোমবার পাকবাহিনীর অগ্রসর হওয়ার খবর পেয়ে ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি লড়াকু টহল দল বের হয় এবং মুশুরীভুজা ক্যানেলে অবস্থান নেয়। ৩টি দলে বিভক্ত মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন ওয়াশিল মোল্লা, রাজা মিয়া ও আতাউর। বেলা ১টার দিকে গোলাগুলি শুরু হয় এবং মুক্তিবাহিনীর আর্টিলারি মান্নান দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করেন। এ যুদ্ধে ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ছত্রভঙ্গ শত্রুপক্ষ লাশ নিয়ে পিছু হটে। মুক্তিবাহিনী শুকুরকে রেকিতে পাঠিয়ে অগ্রসর হয় এবং কাশিয়াবাড়িতে রাজাকার কমান্ডার খালেককে হত্যা করে। এ যুদ্ধের পর পাকবাহিনী ও রাজাকাররা আতংকিত হয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী দলদলীতে ঘাঁটি স্থাপন করে। [মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড