মৃধাবাড়ি গণহত্যা (রাজৈর, মাদারীপুর)
মৃধাবাড়ি গণহত্যা (রাজৈর, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ২০শে মে। এতে ১০ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলাধীন কদমবাড়ি ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত মৃধাবাড়ি গ্রাম ৩ বার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের আক্রমণের শিকার হয়। প্রথমবার শুধু পাকিস্তানি সেনারা এসেছিল। অন্য দুবার স্থানীয় রাজাকাররা লুটপাট শেষে পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। কদমবাড়ির পাশেই মৃধাবাড়ি গ্রামের অবস্থান। ২০শে মে সকালবেলা টেকেরহাট থেকে আসা পাকিস্তানি হানাদার সেনা ও স্থানীয় রাজাকাররা গোপালগঞ্জের চামটা ঘাটে নেমে পূর্বদিকের মৃধাবাড়ি গ্রামে প্রবেশ করে। তারা ভীত ও পলায়নরত গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে ৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়। তাদের এক সঙ্গে গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে গণকবর দেয়া হয়। এদিন অনেকে মারাত্মকভাবে আহত হয়। ভরত বাড়ৈর ছেলে মনোরঞ্জন বাড়ৈ হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা মৃধাবাড়ি গ্রামে ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। গ্রামের বাড়ৈ বাড়ি, ভক্ত বাড়ি, বসু বাড়ি, গাইন বাড়িসহ সকল হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে শ্মশানে পরিণত করে। শ্যামা চরণ নামে একজন গ্রামবাসী নিজবাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়। সে পাকসেনাদের দেখে দূর থেকে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে হাতজোড় করে দাঁড়ালে তাকে তারা গুলি করে হত্যা করে। মৃধাবাড়িতে নিহতরা হলেন- মুকুন্দ বাড়ৈ (পিতা বৃন্দাবন বাড়ৈ), উপেন বাড়ৈ (পিতা বৃন্দাবন বাড়ৈ), পরীক্ষিত বাড়ৈ (পিতা বৃন্দাবন বাড়ৈ), হরিচাঁদ বাড়ৈ (পিতা গোবিন্দ বাড়ৈ), আদিত্য বাড়ৈ (পিতা আনন্দ রাড়ৈ), মরু বাড়ৈ (পিতা যতীন বাড়ৈ), নিখিল গাইন (পিতা নিশিকান্ত গাইন), সবিতা রানী (স্বামী নেপাল, আডুয়াকান্দি), শ্যামাচরণ বিশ্বাস (পিতা গিরিধর বিশ্বাস, আনন্দপুর) ও নবকুমার (মানসিক প্রতিবন্ধী, রথবাড়ি)। [শেখ নাছিমা রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড