You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মুনির আহমেদ

মুনির আহমেদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৩৯ ) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৯ সালের ৬ই মে নোয়াখালী সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার
নাম আলী আহমেদ, মাতা নভস মনোফা খাতুন।
মুনির আহমেদ ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। চট্টগ্রামের ইবিআরসিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর তাঁর পদায়ন হয় ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি জয়দেবপুরে ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে ৩নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এরপর তিনি ‘এস’ ফোর্সের অধীন ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভৈরব, আখাউড়া ও আশুগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধ করে সাহসিকতার পরিচয় দেন।
২৮শে এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল মাধবপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সংঘটিত এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসী ভূমিকা পালন করেন। সকাল ৮টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ করে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা বাংকারের ভেতর থেকে রাইফেল, মেশিনগান, মর্টার, রাইফেল প্রভৃতি দিয়ে হানাদারদের মোকাবিলা করতে থাকেন। ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সত্ত্বেও হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দলের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান দিয়ে সামনে এগিয়ে আসে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সংকটের মধ্যে পড়ে যান। তখন লেফটেন্যান্ট মোর্শেদ, ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন মতিন, সুবেদার নুরুল আমীন, সুবেদার আবদুল করিম, হাবিলদার কেরামত, হাবিলদার আরশাদ, হাবিলদার মুনির আহমেদ, ল্যান্স নায়েক মান্নান, সিপাহি মান্নান, সিপাহি শাহজাহান, সিপাহি খায়রুজ্জামান, সিপাহি ওয়াহেদ প্রমুখ অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। তাঁদের আক্রমণে হানাদার বাহিনীর অগ্রযাত্রা থেমে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে পিছু হটেন। যুদ্ধে ২৭০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ যুদ্ধে মুনির আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্ব দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুনির আহমেদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন। অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে ১৯৮৪ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রী জাহান আফরোজ বেগম। তাঁরা ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক-জননী [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!