You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.29 | মুলাডুলি প্রতিরোধযুদ্ধ (ঈশ্বরদী, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

মুলাডুলি প্রতিরোধযুদ্ধ (ঈশ্বরদী, পাবনা)

মুলাডুলি প্রতিরোধযুদ্ধ (ঈশ্বরদী, পাবনা) সংঘটিত হয় ২৯শে মার্চ সন্ধ্যা রাতে। এ যুদ্ধে পাকসেনাসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রতিরোধকারী ও সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। পাকবাহিনী এখানে এয়াররেইড চালায়।
২৯শে মার্চ সকালে ঈশ্বরদীর মাধপুর নামক স্থানে পাবনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে প্রত্যাগত পাকহানাদাররা জনতার প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন প্রতিরোধযোদ্ধা তাদের হত্যার শিকার হন। মাধপুর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পাকসেনারা সন্ধ্যার দিকে পাকশীর কয়েক মাইল পূর্বে দাশুরিয়ায় এসে পৌঁছে এবং বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ে। আশপাশের গ্রাম থেকে দেশী অস্ত্রশস্ত্র ও দোনলা বন্দুকসহ হাজার- হাজার জনতার প্রতিরোধ ও গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে পাকসেনারা হতচকিত হয়ে পড়ে। ক্রুদ্ধ জনতা তাদের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর পাকসেনারা প্রতিরোধযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ না চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারা চুপিচুপি নাটোর সীমান্তবর্তী ঈশ্বরদী থানার একটি ইউনিয়ন মুলাডুলিতে উপস্থিত হলে আবারো জনপ্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ইতোমধ্যে দাশুরিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। এখানে প্রতিরোধযোদ্ধাদের গুলিতে পাকসেনাদের কয়েকজন হতাহত হয়। প্রতিরোধযোদ্ধা ও জনতা রেলওয়ে ওয়াগন দিয়ে নাটোর-রাজশাহী রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং রাজাপুরের ধানাইদহ সড়ক সেতু ধ্বংস করে দেয়। এখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পাকসেনারা রাস্তা থেকে নেমে মাঠের ভেতর দিয়ে গোপালপুরের (অধুনা আজিমনগর) দিকে অগ্রসর হয়। মুলাডুলিতে প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক সিরাজুল ইসলাম মন্টু কিছু অস্ত্রসহ পাকবাহিনীর একটি ওয়ারলেস সেট উদ্ধার করেন। এ-সময় পাকসেনাদের দলছুট একজন সৈন্যকে জনতা রেললাইনের কালভার্টের নিচ থেকে ধরে এনে মুলাডুলি বাজারের বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
মুলাডুলিতে নাটোর-রাজশাহী সড়ক পথে রেলওয়ে ওয়াগন দিয়ে যে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল, মুলাডুলি প্রতিরোধ যুদ্ধের ঠিক পাঁচদিন পর অর্থাৎ ২রা এপ্রিল বিকেলে পাকবাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান থেকে ওয়াগনগুলোর ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। এর একটি বোমা বিস্ফোরিত হলে রেল গেটের দক্ষিণ পাশের বিভিন্ন দোকানে অবস্থানরত কয়েকজন সাধারণ মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়৷ ঘটনাস্থলে একটি বাবলাগাছের নিচে কর্মরত একজন চর্মকার নিহত হয়। ৭-৮ জন আহত মানুষকে হসপিটালে নেয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত একটি ট্রাক সংগ্রহ করে আহতদের নাটোরের দিকে পাঠানো হয়। স্থানীয় ন্যাপ নেতা অসীম কুমার সেন রায় ও তার সহকর্মীদের সহযোগিতায় রেল গেটের উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি গর্ত করে নিহত চর্মকারকে সমাহিত করা হয়। রাত আড়াইটার দিকে নাটোরে পাঠানো ট্রাকটি রাজাপুরের দুজন নিহত ব্যক্তিকে নিয়ে ফেরত আসে। নিহত দুজনের একজন ছিলেন মুলাডুলি কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রুস্তম আলী। অপরজনের নাম মোরশেদ। বোমা হামলায় আহত মহিরউদ্দিন নামে একজন স্থানীয় তার দুটি পা হারিয়ে এখনো হুইল চেয়ারে চলাচল করছেন। ভোর নাগাদ রাজাপুরহাটের অদূরে গোরস্থানে দুজন শহীদকে সমাহিত করা হয়। ৩রা এপ্রিল স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণ অবিস্ফোরিত দুটি বোমা রেল গেটের পূর্ব- দক্ষিণে একটি খাদের পাশে বালির বস্তা দিয়ে মাটির আরো গভীরে পুঁতে রাখে। [আবুল কালাম আজাদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড