You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুজিব ব্যাটারি

মুজিব ব্যাটারি মুক্তিযুদ্ধকালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ফিল্ড রেজিমেন্ট বা গোলন্দাজ বাহিনী। ২নং সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম ছিলেন এর উদ্যোক্তা। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে থাকেন। পাকিস্তানি বাহিনীর জনবল ও অস্ত্রবল ছিল মুক্তিবাহিনীর তুলনায় বহুগুণ বেশি। একদিকে তাদের ছিল আধুনিক অস্ত্র, অপরদিকে ছিল সুসংগঠিত গোলন্দাজ বাহিনীর সাপোর্ট। তারা শক্তিশালী ঘাঁটি গেড়ে বাঙ্কারে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করত। এমনি অবস্থায় মেজর খালেদ মোশাররফ একটি গোলন্দাজ বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। পাকিস্তান গোলন্দাজ বাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী ৮০ জন বাঙালি সৈনিক এবং নতুন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়ে ১২ই জুলাই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কোনাবনে এর কার্যক্রম শুরু। এর নাম দেয়া হয় ‘মুজিব ব্যাটারি’। প্রাথমিক অবস্থায় ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত ফ্রান্সের তৈরি ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ৬টি কামান এ রেজিমেন্টের জন্য পাওয়া যায়। এর কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ক্যাপ্টেন আব্দুল আজিজ পাশা (৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর খুনি), ক্যাপ্টেন আনোয়ারুল আলম, লে. কাইয়ুম, লে. বজলুল হুদা (বঙ্গবন্ধুর খুনি) প্রমুখ। সার্বিকভাবে ‘মুজিব ব্যাটারি’ মেজর খালেদ মোশাররফের ‘কে’ ফোর্সের অধীনস্ত থাকে। এ ফিল্ড রেজিমেন্টের সৈনিকরা কমান্ডো স্টাইলে কখনো মাথায়, কখনো নৌকায়, কখনো গরুর গাড়িতে করে কামানগুলো বহন করে রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাদান করে। নিরাপত্তার কারণে স্থান পরিবর্তন করতে হয়। পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর গোলা নিক্ষেপের ক্ষমতা মুজিব ব্যাটারির দেড়গুণ-দ্বিগুণ হলেও, মুক্তিযুদ্ধে নতুন এ রেজিমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিশেষ করে ‘কে’ ফোর্সের সহায়তায় কাইয়ুমপুর, কসবা, সালদা নদী, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের নাজিরহাট যুদ্ধে এ বাহিনীর ভূমিকা ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত মুজিব ব্যাটারির কামানগুলো বর্তমানে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে জনসাধারণের দর্শনার্থে উন্মুক্ত রয়েছে। ত্রি এস এম শামসুল আরেফিন ও হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্রঃ খালেদ মোশাররফ, মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্স, প্রথমা ২০১৩, পৃ. ১০৩-১০৬
মুজিবনগর উপজেলা (মেহেরপুর) মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা নামক গ্রামটি ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর- নাম ধারণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান করে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল শত্রুকবলিত দেশের মুক্তাঞ্চল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। এ সরকারের অধীনেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ- বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ করেন মুজিবনগর। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এর পর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এ উপজেলার মানুষও মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি হয়। মেহেরপুর সংগ্রাম কমিটির সদস্য উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের আ কা ম ইদ্রিস ও জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ শাহীদ উদ্দিনের আহ্বানে দোয়াজ আলী মাস্টার (মানিকনগর), আব্দুল মোমিন চৌধুরী, আ. মান্নান মাস্টার, ডা. কমরউদ্দিন (ভবানীপুর, মোনাখালী) প্রমুখের নেতৃত্বে মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ডা. কমরউদ্দীন (ভবানীপুর), হজরত আলী (মোনাখালী), হিফাজউদ্দীন সর্দার (মোনাখালী), নূর মোহাম্মদ (গোপালনগর), শামসুদ্দীন (শিবপুর) প্রমুখকে নিয়ে গঠিত হয় মোনাখালী ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটি। আ ক ম ইদ্রিস (দাড়িয়াপুর), ওয়াজেদ আলী (বিদ্যাধরপুর), দাউদ হোসেন (পুরন্দরপুর), ডা. শামসুল ইসলাম, আলীজান মণ্ডল (দাড়িয়াপুর), ইউনুস মাস্টার (দাড়িয়াপুর), আবদুস সাত্তার (পুরন্দরপুর), ফিরাতুল মিয়া (গৌরীনগর), আবুল হায়াত (গৌরীনগর), হাফিজা আক্তার মনি (গৌরীনগর), আকালি বিশ্বাস (গৌরীনগর), আবদুল বারি (দাড়িয়াপুর), আতাপাল (দাড়িয়াপুর) প্রমুখকে নিয়ে দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। আবদুল মোমিন চৌধুরী, রফিকউদ্দীন ও কেরামত আলী (আনন্দবাস), হজরত আলী (জপুর), রফিজউদ্দিন মাস্টার (রতনপুর), সুশীল মল্লিক (ভবেরপাড়া), ইউনুস মাস্টার (আনন্দবাস), খোকন মণ্ডল (ভবেরপাড়া), আনারুল ইসলাম (বাগোয়ান), থিওফিল (বল্লভপুর), সুশীল মাস্টার (রতনপুর), রুস্তম আলী (সোনাপুর), দোয়াজ আলী মাস্টার (মানিকনগর) প্রমুখকে নিয়ে বাগোয়ান ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। তাছাড়া দোয়াজ আলী মাস্টার বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর থেকেই মুজিবনগরের ছাত্র- যুবক-শ্রমিক-কৃষক দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিপুল সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে এগিয়ে আসে। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনীর গণহত্যার খবর পৌছার সাথে-সাথেই মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শাহীদ উদ্দিন এমএনএ-এর সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। মেহেরপুরসহ বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ছাত্র-যুবকরা এ-সময় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত মুজিবনগরের সন্নিকটস্থ পশ্চিমবঙ্গের চাপড়া থানার সীমান্তবর্তী গ্রাম হৃদয়পুর ক্যাম্পে ব্যাপকহারে আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। মুজিবনগর থেকে ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন গোপালনগরের ফজলুল হক, খবিরউদ্দিন, আবদুর রকিব, গোপালপুরের ছইরউদ্দিন প্রমুখ এবং মুজিব বাহিনী-র সদস্য দড়িয়াপুরের নজরুল ইসলাম ও ফজলুল হক, পুরন্দরপুরের আমজাদ হোসেন প্রমুখ। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পলিটিক্যাল মোটিভেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দড়িয়াপুরের আবদুল হান্নান, আবদুল বারি, কলিমউদ্দীন ও আতাহার আলী।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের দিন অর্থাৎ ১৭ই এপ্রিল থেকে মেহেরপুরের বাগোয়ান ইউনিয়নের বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে পরিণত হয়। প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভবেরপাড়া মিশনের ফাদার ফ্রান্সিস (বরিশাল) এবং সিস্টার তেজরিনা কলাগাছ ও দেবদারু পাতা দিয়ে বাগানের দক্ষিণ প্রান্তে রাস্তার উপর একটি গেইট তৈরি করেন। গেইটের উপর লেখা ছিল স্বাগতম্, জয় বাংলা। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন পাঠ করেন দর্শনা কলেজের ছাত্র মো. বাকের আলী (গৌরীনগর)। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ (বাগোয়ান), পিন্টু বিশ্বাস (ভবেরপাড়া), আসাদুল হক (দারিয়াপুর) এবং কোলকাতা থেকে আগত ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব। গার্ড অব অনার প্রদান করেন ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তাঁর সঙ্গে ঝিনাইদহ থেকে আগত কনস্টেবল মান্নান ও বাসেদসহ ৩ জন পুলিশ এবং স্থানীয় আনসার বাহিনীর ১২ জন সদস্য, যথা- মেহেরপুর জেলার ভবেরপাড়া গ্রামের ফকির মহাম্মদ, নজরুল ইসলাম, সিরাজুল হক, মফিজ উদ্দিন, আজিমউদ্দিন, লিয়াকত আলী, অস্থির মল্লিক, আরজ উল্লাহ ও কিসমত আলী, সোনাপুর গ্রামের সাহেব আলী ও হাসদেল এবং হাসনাবাদ গ্রামের ইয়াদ আলী।
এ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের কোনো কমান্ডার ছিল না। তবে মেহেরপুরের কমান্ডারদের নেতৃত্বে এখানে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। তাছাড়া মেহেরপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহীদ উদ্দিন এমএনএ, আ ক ম ইদ্রিস আলী, দোয়াজ আলী মাস্টার (শিক্ষক), মোমিন চৌধুরী, আ. মান্নান মাস্টার, ডা. কমরউদ্দিন, ওয়াজেদ আলী, আ. রশিদ, ছাত্রনেতা আসাদুল হক, বাকের আলী প্রমুখ সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন।
২৫শে মার্চ কালরাত্রিতে ঢাকাসহ দেশের প্রধান-প্রধান শহরে পাকবাহিনী দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার খবর মেহেরপুরের জনপ্রতিনিধি মো. নুরুল হক এমপিএ-র মাধ্যমে মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর কাছে পৌঁছে। মহকুমা প্রশাসক তৎক্ষণাৎ মোহাম্মদ শাহীদ উদ্দিন এমএনএ ও মেহেরপুরের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুজিবনগরের জনগণ কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক, চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক, দামুড়হুদা-মুজিবনগর সড়কের ব্রিজ ও কালভার্ট ধ্বংস করে এবং রাস্তার ওপর গাছের গুড়ি ফেলে বেরিকেড সৃষ্টি করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
১৮ই এপ্রিল পাকবাহিনী মেহেরপুরে অনুপ্রবেশ করে। মুজিবনগর পুরোপুরি দখলের উদ্দেশ্যে ৩০শে এপ্রিল পাকবাহিনী মানিকনগর এবং ২রা মে নাটুদাতে ক্যাম্প স্থাপন করে। মে মাসের শেষদিকে তারা রশিকপুর আলম বারী বিশ্বাসের বাড়ি ও পশ্চিমপাড়ায় অবস্থিত কয়েকটি বাড়ি নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। ৩রা আগস্ট মোনাখালীতে ক্যাম্প স্থাপন করে।
উপজেলায় পাকবাহিনীকে সহায়তাদানের জন্য শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। আবু বকর (মহাজনপুর), জাকের আলী (মহাজনপুর), মতিন খন্দকার (মহাজনপুর), শাহাদৎ মণ্ডল (গোপালনগর), ছাদের আলী (মোনাখালী), খেদের আলী (মোনাখালী), আরশাদ আলী (মোনাখালী), মালেক জোয়ার্দার (মোনাখালী), আব্দুল গণি মণ্ডল (পুরন্দরপুর), ফখরুল ইসলাম (গৌরীনগর), আজিজুল বিশ্বাস (দাড়িয়াপুর), পাঞ্জাব আলী (দাড়িয়াপুর), জয়বুদ্দীন (দাড়িয়াপুর), সরেমান (দাড়িয়াপুর) প্রমুখ শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিল। মহাজনপুরের আবুল কাশেম, হযরত আলী, আবুল হোসেন, মাবুদ আলী, আবু তাহের, আওলাদ হোসেন, আলাউদ্দীন, ভিকু শেখ, আছান আলী, আমীর আলী, ফজর আলী, জতারপুরের আশকার আলী, রবকুল বিশ্বাস, খোদা নেওয়াজ, খলিলুর রহমান (দশরথ), মোনাখালীর আদম আলী, দিদার আলী, গোলাম মাঝি, ডা. জুবান আলী, হেদায়েত, ভবানীপুরের নায়েব উদ্দীন, আজাদ মোল্লা, বিদ্যাধরপুরের আকর আলী, আইনাল হক, আবদুল কাদের, গোলাম নওদা, দাড়িয়াপুরের গোলাম বিশ্বাস, জাহান আলী, ইব্রাহিম আলী, আলাউদ্দীন, আওলাদ হোসেন, আছের আলী, সিরাজুল ইসলাম, তবারক আলী, নজরুল ইসলাম, ইক্তাল আলী, মুছাব আলী, রুহুল আমিন, বাগোয়ানের মওলানা আজাদুর রহমান আজাদ, গোলাম মাহবুব (মবু), আ. রাজ্জাক (গোপালপুর) প্রমুখ রাজাকার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিল। এছাড়া মোনাখালীর আরশাদ আলী খাঁ ওরফে আচু খাঁ (পিতা আমিন খাঁ) ও আ. সামাদ সার্বক্ষণিক পাকবাহিনীর সঙ্গে থাকত৷
মুজিবনগর উপজেলায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হওয়ায় এখানে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের মাত্রা ছিল বেশি। মহাজনপুরের রাজাকার বাকি, কাফি এবং কাশেমের অত্যাচারে এলাকাবাসীর জীবন ছিল দুর্বিষহ। জুন মাসের মাঝামাঝি কমান্ডার বশীর আহমেদের নির্দেশে যাদুখালী ঘাটের কাছে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার আবুল কাশেমের ওপর গেরিলা আক্রমণ করে একটি রাইফেল এবং ৮ রাউন্ড গুলি কেড়ে নেয়। এ ঘটনার জের হিসেবে পরের দিন বাকি, কাফি, হজরত, আবুল, ভিকু, আশকার, বরকুলসহ ২০ সদস্যের রাজাকার দল পাকবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গোপালপুর এসে সুলতান মাস্টার ও সুরমান আলীসহ কয়েকজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং গরু-ছাগল, ধান-চাল লুট করে। এ-সময় তারা মুক্তিযোদ্ধা লতিফের চাচা সুরমান আলী ও চাচাতো ভাই মসলেমকে ধরে নির্যাতন করে এবং পাকসেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ঐদিনই তারা টঙ্গী গ্রামে হানা দিয়ে কমান্ডার বশীর এবং তাঁর ভাই নজবুল হকের বাড়িতে আগুন দিয়ে উল্লাস করে। জুন মাসের শেষদিকে মহাজনপুর শান্তি কমিটির নেতা আবু বকর এবং তার দুই সন্তান রাজাকার বাকি ও কাফি এবং জতারপুর-মহাজনপুরের রাজাকার বাহিনীকে নিয়ে বাবুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে যায়। কিন্তু সেদিন কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে না পেয়ে তারা ব্যাপকহারে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালায়। এ অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে জুলাই মাসের প্রথমদিকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশীর আহমেদের নির্দেশে একটি গেরিলা দল মহাজনপুরে আবু বকরের বাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনার পরদিন নাটুদা থেকে পাকসেনাদের নিয়ে এসে রাজাকাররা সন্দেহজনকভাবে মহাজনপুরের ফজর আলী, নূর হক, উম্মত আলী, নিয়ামত এবং রফিককে ধরিয়ে দেয় এবং নাটুদা ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে।
কোমরপুরের শান্তি কমিটির নেতা আফতাব বিশ্বাস লুৎফর রহমান লালার বিরদ্ধে আক্রমণের পরিকল্পনা নিলে আগস্টের মাঝামাঝি লুৎফর রহমান লালার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা কমরপুর আসে। কিন্তু নিকটস্থ নাটুদা ক্যাম্প থেকে পাকসেনারা ঐদিনই গ্রামটিতে হামলা চালায়। তারা কমরপুর গ্রামের ওয়াজউদ্দিন এবং পুত্র দাউদ হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মোনাখালী ক্যাম্প স্থাপনের পর ৪ঠা আগস্ট পাকবাহিনী ঐ গ্রামের মানুষ ভূপেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্যকে বাড়ি থেকে ধরে এনে ক্যাম্পে হত্যা করে। ৫ই আগস্ট পাকবাহিনী মোনাখালীর আমানুল হককে হত্যা করে। এ-সময় ঐ গ্রামের নজরুল, নিয়ামত, জসিমউদ্দিন, আওলাদ, রসুল, রেজাউল, মহসিন, মজিবর, মহিবর, মেহরাজ, আদম, কেরামত, আবুল, গোলামসহ বহু মানুষের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে কাঠ, বাঁশ, টিন নিয়ে যাওয়া হয়। ১লা অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন (পিতা হছেন বিশ্বাস, সোনাপুর) নিজ বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মাকে দেখতে এলে কলাইডাঙ্গার রাজাকার নাড়ু মোল্লা পাকসেনাদের খবর দিয়ে তাঁকে ধরে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে। পাকবাহিনী সোনাপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ৪ জন সাধারণ গ্রামবাসী জবেদ আলী দফাদার (পিতা পাঁচু শেখ), আরমান আলী (পিতা ছুবান শেখ), আবুল হোসেন (পিতা সুরমান আলী) ও হিদাতুল্লাহকে (পিতা কুরবান আলী) নির্মমভাবে হত্যা করে। দড়িয়াপুরের রাজাকার গোলাম বিশ্বাস ও আছের আলীর সহযোগিতায় পাকবাহিনী আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম ইদ্রিসের (দড়িয়াপুর) বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ-সময় তারা ওয়াজ চেয়ারম্যানের বাড়িও লুট করে। বিদ্যাধরপুর, দড়িয়াপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই মোনাখালী ক্যাম্পে আক্রমণ চালাতো বলে পাকসেনারাও তাদের দোসরদের নিয়ে সুযোগ বুঝে দুটি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা ধরার নামে হানা দেয় এবং নির্যাতন চালায়। তারা আবু বকর (পিতা দাখিলউদ্দিন) এবং আবদুল বারি গাজী (পিতা গোলাম পঞ্চায়েত)-কে ধরে এনে শান্তি কমিটির সামনে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। এ-সময় পাকসেনাদের গুলিতে অসহায় অপ্রকৃতিস্থ আয়াজান প্রাণ হারান এবং বহু নারী নির্যাতনের শিকার হন।
আগস্ট মাসের শেষদিকে কোলা গণহত্যা সংঘটিত হয়। মহাজনপুরের শান্তি কমিটির নেতা আবু বক্করের প্রত্যক্ষ নির্দেশে পাকবাহিনী এ গ্রামের ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এটি কোলা গণহত্যা নামে পরিচিত।
পাকবাহিনীর মানিকনগর ও মোনাখালী ক্যাম্প ছিল তাদের নির্যাতনকেন্দ্র। উপজেলায় একটি গণকবর রয়েছে সোনাপুর গণকবর।
এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে মুজিবনগর যুদ্ধ, বল্লভপুর বটতলা যুদ্ধ, রতনপুর ঘাট যুদ্ধ, সেগুন বাগান যুদ্ধ, মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণ এবং মোনাখালী পাকসেনা ক্যাম্প যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুজিবনগর যুদ্ধ হয় তিনদিন ২১শে এপ্রিল, ২৪শে এপ্রিল ও ৩রা জুন। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের মুজিবনগর ঘাঁটি দখল করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। তৃতীয় দিনের প্রথম যুদ্ধে তারা ঘাঁটি দখল করে, কিন্তু দ্বিতীয় যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করেন। এ-সময় ২৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। বল্লভপুর বটতলা যুদ্ধ হয় ২৭শে মে। এতে একজন অফিসারসহ ৫ জন পাকসেনা হতাহত হয় এবং তাদের কিছু অস্ত্র ও একটি জিপ গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। রতনপুর ঘাট যুদ্ধ হয় ১৭ই জুলাই। এতে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন এবং তাঁদের গাইড ধরা পড়েন। পাকসেনারা তাকে হত্যা করে। সেগুন বাগান যুদ্ধ হয় ১১ই জুন। এতে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়। মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণ হয় তিনদিন – ২৬শে জুলাই, ১লা আগস্ট ও ৩রা আগস্ট। এতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত এবং তাদের বেশকিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
৫ই আগস্ট বাগোয়ান গ্রাম ও রতনপুর ঘাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয় এবং তাহাজউদ্দিন (পিতা রমজান শেখ, কোমরপুর), আফাজউদ্দিন (পিতা রমজান শেখ, কোমরপুর) সহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, যাঁদের চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়। ৮ শহীদদের সমাধী জগন্নাথপুর আট কবর- নামে পরিচিত|
১০ই আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমেদের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা মহাজনপুর শান্তি কমিটির নেতা অত্যাচারী আবু বকরের বাড়ি আক্রমণ করেন।
১৩ই আগস্ট টহলরত মুক্তিযোদ্ধারা মানিকনগরের দিকে অগ্রসরমান বাগোয়ানের খ্রিস্টানপাড়ায় পাকসেনাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করেন। আক্রমণে একজন পাকসেনা নিহত হয়। এতে সুবেদার মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন।
২১শে আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোমিনুল হক বাচ্চু এবং নজরুল ইসলাম ভোঁদার গেরিলা দল মোনাখালী ফেরিঘাটের বিদ্যাধরপুর অংশের ফেরি বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ২২শে আগস্ট মোনাখালী ঘাটে বাংকার তৈরির কাজে ব্যস্ত এক প্লাটুন পাকসেনার ওপর আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এ আর আজম চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা। এ যুদ্ধে দুজন পাকসেনা নিহত হয় এবং পাকসেনাদের গুলিতে একজন মহিলা প্রাণ হারান।
২৪শে আগস্ট নাটুদা এবং মেহেরপুর থেকে পাকসেনারা মানিকনগরে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ যুদ্ধে একজন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনীর মর্টার শেলের আঘাতে মুক্তিযোদ্ধা আয়াতুল্লাহ মল্লিক (মুজিবনগর) শহীদ হন।
৭ই সেপ্টেম্বর বাগোয়ানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলী (পিরোজপুর) শহীদ হন।
২০শে সেপ্টেম্বর পাকসেনারা গভীর রাতে মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত সোনাপুর-মাঝপাড়ায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ যুদ্ধে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলী (আনন্দবাস) ও রবিউল হক (চুয়াডাঙ্গা) এবং ৩ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে পাকসেনাদের তৎপরতা কমতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের আশ্রয়স্থল থেকে মুক্ত গ্রামাঞ্চলে এসে ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ-সময় তারা রাজাকারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। ২৬শে অক্টোবর মোনাখালীর একজন রাজাকার একটি রাইফেল ও ৫০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। ৬ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা জতারপুর ঘাটে রাজাকার খলিল আসকারসহ (জতারপুর) প্রহরারত দুই রাজাকারকে অস্ত্রসহ আটক করে।
৪ঠা নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহমেদ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মোনাখালী পাকসেনা ক্যাম্পে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং ক্যাম্পের পাশে সন্তোষ মণ্ডলের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রিপোর্টার ছাদের মেম্বর (মোনাখালী) বিশ্বাসঘাতকতা করে পাকসেনা ক্যাম্পে খবর দিলে পাকসেনারা হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। ৫ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি দড়িয়াপুর ফেরিঘাটে পাকসেনাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করলে একজন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়৷
৯ই নভেম্বর মোনাখালী পাকসেনা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা এক সফল অভিযান পরিচালনা করে। এতে অভিযানের নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন এ আর আজম চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, হাবিলদার মতিন পাটোয়ারী প্রমুখ। এ যুদ্ধে বহুসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। দুঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধের পর পাকসেনারা ক্যাম্প গুটিয়ে মেহেরপুর চলে যায়। যুদ্ধের পর পাকসেনা ক্যাম্প থেকে কিছু অস্ত্র ও রসদ সামগ্রী মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
পাকসেনাদের মোনাখালী ক্যাম্প পতনের মাধ্যমেই কার্যত মুজিবনগর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। তবে পার্শ্ববর্তী নাটুদা ক্যাম্প থেকে মাঝেমধ্যে পাকবাহিনীর আনাগোনা চলত। ৬ই ডিসেম্বর মেহেরপুর জেলা হানাদারমুক্ত হলে মুজিবনগর উপজেলাও সম্পূর্ণরূপে হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- ওয়ালিউল হোসেন, বীর প্রতীক (পিতা কানাই শেখ, মোনাখালী)। মুজিবনগর উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- ওয়ালিউল হোসেন, বীর প্রতীক (কুষ্টিয়া জেলার ধর্মদহের যুদ্ধে শহীদ), মহসিন আলী (পিতা ভাদু মণ্ডল, মোনাখালী), রমজান আলী খান (পিতা বেঙ্গু খান, রতনপুর), তাহাজউদ্দিন (পিতা ফকির মোহাম্মদ, কোমরপুর), আফাজউদ্দিন (পিতা রমজান শেখ, কোমরপুর), চিত্ত মল্লিক (পিতা ধীরেন্দ্র মল্লিক, বল্লভপুর), আয়াতুল্লা মল্লিক (পিতা অধর মল্লিক, আনন্দবাস), সিরাজুল ইসলাম (পিতা রব্বানী মণ্ডল, মোনাখালী), আরশাদ আলী (পিতা লুৎফর রহমান, আনন্দবাস), মোক্তার আলী (পিতা হাসেম আলী, সোনাপুর), আফসার আলী (পিরোজপুর), আফসার আলী (আনন্দবাস) ও রবিউল হক (চুয়াডাঙ্গা)। স্বাধীনতার ২৩ বছর পূর্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘বঙ্গবন্ধু তোরণ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীনতার ইতিহাস সম্বলিত মুজিবনগর কমপ্লেক্স। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুজিবনগর ডিগ্রি কলেজ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওলিউলের নামে মোনাখালী গ্রামের একটি ক্লাবের নামকরণ করা হয়েছে। [মো. জামাল উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!