মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক মেহেদী
মুজিবুল হক মেহেদী ঝালকাঠি সদর উপজেলার একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের আদিনিবাস ছিল ফরিদপুরে। তাঁর পিতা আবদুল কাদের ব্যবসায় সূত্রে ঝালকাঠিতে এসে বসবাস শুরু করেন।
ঝালকাঠি কলেজের তৎকালীন ছাত্রনেতা মুজিবুল হক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মে মাসের কোনো এক দিনে পাকবাহিনী আটঘর-কুড়িয়ানার বিখ্যাত পেয়ারাবাগান আক্রমণ করলে পাকবাহিনীর সঙ্গে সিরাজ সিকদার বাহিনীর যুদ্ধ হয়। কিন্তু ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর সঙ্গে পেরে না উঠে সিরাজ বাহিনী পিছু হটে। এরই এক পর্যায়ে মুজিবুল হকসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকবাহিনী তাঁদের ঝালকাঠি শহরে নিয়ে যায়। শহরের রাস্তা দিয়ে নির্যাতন কক্ষে নিয়ে যাওয়ার সময় মুজিবুল হক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যার জন্য তাঁকে যখন সুগন্ধাতীর বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনো তিনি উচ্চস্বরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ-সময় পাকবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন মুজিবুল হককে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলার আদেশ দেয়, বিনিময়ে সে তাঁকে মুক্তি দেবে। কিন্তু মুজিবুল হক সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে রাজি হননি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সগর্বে মাথা উঁচু করে বলে গেছেন ‘জয় বাংলা’।
মুজিবুল হক ছিলেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চাও করতেন। স্বাধীনতার পরে অসাধারণ দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ঝালকাঠি শহরে তাঁদের বাসার সামনের রিড রোডের নতুন নামকরণ করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মেহেদী সড়ক। [শ্যামল চন্দ্র সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড