মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হত্যাকাণ্ড (মণিরামপুর, যশোর)
মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হত্যাকাণ্ড (মণিরামপুর, যশোর) সংঘটিত হয় ১০ই অক্টোবর। এদিন যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত তাহেরপুর গ্রামের মানুষ এক রাজাকারএর নির্মম অত্যাচারের ঘটনায় নির্বাক হয়ে পড়ে। কৃষিতে ডিপ্লোমা করা শেখপাড়া-খানপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনের পুত্র আকরাম হোসেন একটি ফার্মে চাকরি করতেন। পাকবাহিনী ২৫শে মার্চ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে দেশের হাজারো প্রতিবাদী যুবকের মতো আকরামও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাতনের ইয়াকুব কবিরাজের ছেলে কুখ্যাত রাজাকার মেহেরুল ইসলাম আকরামের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয়। ৭ই অক্টোবর আকরামকে তাঁর বাড়ি থেকে সে ধরে নিয়ে আসে এবং ৩ দিন স্থানীয় রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রাখে। সেখানে মুক্তিবাহিনীর তথ্য উদ্ধারে তাঁর ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু আকরাম রাজাকারদের কোনো তথ্য না দেয়ায় ১০ই অক্টোবর তাঁকে তাহেরপুর মোড়ে ধরে নিয়ে আসে। সেখানে বাঁশ পুতে হাত-পা বেঁধে তাতে আকরামকে ঝুলিয়ে দেয়। তারপর শুরু হয় রাজাকার মেহেরুলের প্রকাশ্য নির্মম নির্যাতন। সে আকরামের শরীর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। এতে সে জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফিরলে আবার শুরু হয় নতুন করে নির্যাতন। কেউ যেন আকরামের মতো মুক্তিবাহিনীতে নাম না লেখায় সেজন্য রাজাকার সরদার মেহের চিৎকার দিয়ে জানান দিত। সে আকরামের সারা শরীরের ক্ষত স্থানে লবণ লাগিয়ে বর্বরতা প্রকাশ করত। আকরাম তখন জবাই করা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকলে মেহেরুল সহ অন্য রাজাকাররা উল্লাস করত। বারবার পানি চাইলেও তাঁকে পানি দেয়া হয়নি। বরং পানির বদলে রাজাকার মেহেরুল তাঁর মুখে প্রস্রাব করে দেয়। এভাবে দিনভর নির্যাতনের এক পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর ওপর মেহেরুলের বর্বরতা এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে, তার নাম হয় মেহের জল্লাদ।
আলতাফ হোসেনের ৮ সন্তানের মধ্যে আকরামই ছিলেন একমাত্র পুত্র সন্তান। তাঁর মা জোহরা খাতুন যে-কোনো মূল্যে আকরামের জীবন ভিক্ষা দেয়ার জন্য অনেক আকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু তাতে রাজাকারদের মন গলেনি। পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পেরে তিনি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। পুত্রশোকে ধুকতে-ধুকতে এক পর্যায়ে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। দেশ স্বাধীন হলে এলাকাবাসী আকরাম হত্যার স্থানটির নামকরণ করে আকরাম মোড়। [আমিনুর রহমান মামুন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড