You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত, ব্যক্তি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের একমাত্র কৃতিত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে উজ্জ্বল এবং গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো অধ্যায় নেই। ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং কয়েক লক্ষ নারীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিনিময়ে অর্জিত বাঙালির স্বাধীনতা। এ মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনীর কিছু দোসর ছাড়া বাঙালি জাতির অন্য সকলে ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। এজন্য তাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। প্রবাসী বাঙালি, বিদেশী নাগরিক এবং মিডিয়াগুলোর অংশগ্রহণে এটা হয়েছিল ৭১-এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বৈশ্বিক ঘটনা। স্বাধীনতালাভের পর বাঙালির বেদনা ও গৌরবের এ ইতিহাস সংরক্ষণের চেষ্টা ছিল খুবই অপ্রতুল। জাতীয় জাদুঘরের একটি অংশ, সেনা ও পুলিশ সদর দপ্তরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং একক উদ্যোগে কিছু স্মারক সংরক্ষণের চেষ্টা হয়েছে। সেখানে ব্যক্তি উদ্যোগে একাত্তরের স্মৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের একমাত্র উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বর্তমানে ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। এটি আজ আন্তর্জাতিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত|
ডা. সারওয়ার আলী, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, মফিদুল হক, রবিউল হুসাইন, আলী যাকের, সারা যাকের, আক্কু চৌধুরী এবং আসাদুজ্জামান নূর এই আটজন বিশিষ্ট নাগরিক মিলে ১৯৯৫ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাস্ট’ গঠন করেন। এ ট্রাস্টের আওতায় ১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ ঢাকায় উদ্বোধন হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম অর্চি হাসানের “শিখা চিরন্তন’ প্রজ্বালনের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ৫ সেগুন বাগিচার একটি পুরাতন দোতলা বাড়িতে শুরু হয় এ জাদুঘরের কার্যক্রম। ট্রাস্টিবোর্ড মাসে একবার সভায় মিলিত হয়ে পরিচালনা সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সকল ট্রাস্টির ক্ষমতা সমান, তবে পাঁচ বছরের জন্য একজন সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে জাদুঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪০ এবং এর কার্যক্রমে সহায়তা করে একদল নিবেদিত প্রাণ স্বেচ্ছাসেবক। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি প্রচলিত ধারার নয়। এর কার্যক্রম দেশব্যাপী বিস্তৃত। ট্রাস্টিবৃন্দ মনে করেন, দর্শনার্থীরা যেন স্মারক দর্শনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শটিও উপলব্ধি করতে পারেন। ফলে ছয়টি প্রদর্শনকক্ষের প্রথমটি প্রাচীন বাংলার উদারনৈতিক সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের নিদর্শন দিয়ে শুরু। ‘এই জাদুঘর বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণ এবং ধর্ম-জাতিসত্তা ও সার্বভৌমত্বের নামে নৃশংসতার শিকার সকল মানুষের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধ এবং এর আদর্শিক ভিত্তিসমূহ অর্জনে দেশবাসীর ত্যাগ ও বীরত্বের ঘটনাবলি হৃদয়ঙ্গম করতে উৎসাহিত করে। এই ইতিহাসের আলোকে চলমান সামাজিক ও মানবাধিকারের বিষয়-বিবেচনায় সচেষ্ট রয়েছে।’ এ জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন অবধি সংঘটিত ঘটনাবলির স্মারকসমূহ।
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সংরক্ষণ ও প্রদর্শন জাদুঘরের প্রধান বিষয়। চারটি বিভাগীয় শহরের বধ্যভূমি থেকে রক্তভেজা মাটি সংগ্রহ দিয়ে শুরু করার মানসে প্রথমে খুলনার গল্লামারী বধ্যভূমি থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়। খুলনার বারাকপুরের দিঘীহাটা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের চার মাসের শিশু কন্যা রেহানাকে পাকিস্তানি সেনারা বুটে পিষে হত্যা করে। তখন রেহানার গায়ে থাকা সেই জামাটি তার পিতা স্মারক হিসেবে জাদুঘরে দান করেন। জামাটি জাদুঘরের প্রথম স্মারক। বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের একাত্তরের স্মৃতিচিহ্ন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমানে স্মারক সংখ্যা ২৫ হাজার। এর বেশির ভাগ দলিলপত্রাদি, কিছু মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক, তৈজসপত্র ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর কোট (মুজিব কোট), পাইপ, চিঠি ও অটোগ্রাফ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার নিয়াজির বাংকার থেকে উদ্ধার করা যুদ্ধকালে ব্যবহৃত ম্যাপ, ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার, জর্জ হ্যারিসন-এর লেখা গান, শহীদ ডা. ফজলে রাব্বীর গাড়ি, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ইত্যাদি। দেশ-বিদেশ থেকে স্মারক সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। জনগণের পৃষ্ঠপোষকতাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম পুঁজি। এজন্য এটি সর্বজনের সহায়তাধন্য নাগরিকজনের প্রতিষ্ঠান।
১৯৯৮ সাল থেকে বিভিন্ন সরকার বাজেটে জাদুঘরের জন্য থোক বরাদ্দ প্রদান করে আসছে। যে কেউ জাদুঘরে অর্থ সহায়তা প্রদান করতে পারেন।
ভাড়া করা অস্থায়ী বাড়িতে স্মারক প্রদর্শন এবং পরিচালনা বিঘ্নিত হওয়ায় ট্রাস্টিবোর্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬-৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেরেবাংলা নগর থানার আগারগাঁওয়ে ০.৮২ একর জমি বরাদ্দ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নামে। সরকারি মূল্যে ক্রয় করা এ স্থানে ২০১১ সালের ৪ঠা মে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০১৭ সালের ১৬ই এপ্রিল নবনির্মিত জাদুঘরের নিজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ভবনের স্থপতি তানজিম হাসান সেলিম এবং নাহিদ ফারজানা দম্পতি। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক জনগণ এবং বাকি অংশ বহন করেছে সরকার। নয় তলা ভবনের তিন তলা ভূগর্ভস্থ। এক লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুট পরিসরের অত্যাধুনিক ভবনে রয়েছে দুটি অস্থায়ীসহ চারটি স্থায়ী প্রদর্শনশালা। স্থায়ী প্রদর্শনশালার প্রথমটি ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’-এ আছে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালির আবহমান সহাবস্থান ও সম্প্রীতির নিদর্শন, দ্বিতীয়টি ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ’-এ আছে একাত্তরের প্রতিরোধ-প্রশিক্ষণের নিদর্শন, তৃতীয়টি ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’ কক্ষে সার্বিক যুদ্ধ ও মিত্রবাহিনীর স্মারক এবং চতুর্থটি ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’ কক্ষে নৌকমান্ডো ও মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মারকসমূহ। এ ভবনে রয়েছে মিলনায়তন, উন্মুক্ত মঞ্চ, পাঠাগার, গবেষণাগার, সম্মেলন কক্ষ, প্রক্ষেপণ কক্ষ, খাবার ঘর, বিক্রয়কেন্দ্র, আড্ডাঘর ইত্যাদি। ভবনটির নকশাও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। ভবনের মাঝখানে গোলাকার ফাঁকা অংশ আকাশ-মাটির সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে- মাটির কবরে শুয়ে আছেন শহীদরা, তাঁদের আত্মা মিশে আছে অনন্ত আকাশে। ফাঁকা অংশের নিচে ফোয়ারা থেকে অবিরাম কোমল ধারায় গড়িয়ে পড়ছে জল, ৩০ লক্ষ শহীদের শোকে যেন বাঙালির মানস চক্ষু অবিরল অশ্রুতে সিক্ত। ফোয়ারার মাঝখানে ‘শিখা চিরন্তন’ বাঙালির চেতনায় ৭১-এর আদর্শ ও শক্তিস্বরূপ জ্বলছে অনির্বাণ। নকশায় অমসৃণ বহির্দেয়াল একাত্তরের মৃত্যু- যন্ত্রণা আর স্বাধীনতার জন্য কষ্ট সহ্যের অটুট মনোবলের রূপক। ছাদে-দেয়ালে উল্লম্ব এবং আনুভূমিক স্তম্ভ ৬৯-এর বাঁশের লগিসহ আন্দোলন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, বাঙালির প্রতিরোধের ঐতিহ্যের প্রতীক।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সোসাইটিস অ্যাক্ট ১৮৬০-এর অধীনে অলাভজনক হিসেবে নিবন্ধিত কর্মসূচিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এটি ‘আমেরিকান এসোসিয়েশন অব মিউজিয়ামস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আর্কাইভিস্ট কাউন্সিল’-এর প্রাতিষ্ঠানিক সদস্য এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইট অব কনসিয়েন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জাদুঘরের কর্মকাণ্ডের মধ্যে ‘শিক্ষা কর্মসূচি’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ। এছাড়া রয়েছে ৭১-এর বধ্যভূমি সংরক্ষণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে সহায়তা, গণহত্যা সম্পর্কিত ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিস’ পরিচালনা, শ্রুতি- দৃশ্য কেন্দ্র পরিচালনা, গবেষণা সহায়তা, মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দিবসে অনুষ্ঠানের আয়োজন ইত্যাদি। প্রতিদিন প্রবেশ মূল্য ২০ টাকার বিনিময়ে দেশ-বিদেশের প্রায় দুশ দর্শনার্থী জাদুঘর প্রদর্শন করে থাকেন।
শিক্ষা কর্মসূচি ঢাকা শহরে ‘আউটরিচ’ এবং দেশ জুড়ে “রিচআউট’ কর্মসূচি নামে পরিচিত। আউটরিচ কর্মসূচি শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। এ কার্যক্রমে ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের বাসে করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নিয়ে আসা এবং পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়া হয়। পরিদর্শনের সময় তারা প্রামাণ্যচিত্র ‘বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস ১৯৪৭-১৯৭১’, গ্যালারির স্মারক এবং মানবাধিকার ও শান্তি-সম্প্রীতি বিষয়ক পোস্টার দেখে। কুইজে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনকে পুরস্কারও প্রদান করা হয়। প্রতিবছর আউটরিচ কর্মসূচির ১০-১৫ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মিলনমেলা ‘মুক্তির উৎসব।’
রিচআউট কর্মসূচি শুরু হয় ২০০৪ সালে। যোগাযোগের মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পনামতো ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নিয়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রদর্শনির আয়োজন হচ্ছে রিচআউট কর্মসূচি। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের সর্বশেষ পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাইপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে তা দেশময় অব্যাহত রয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় কর্মসূচি পরিচালনার পর পুনরাবর্তন চলছে। জেলাভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য সংগ্রহ। শিক্ষার্থীরা ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্মারক, সুবিধাজনক কক্ষে উল্লিখিত প্রামাণ্যচিত্র এবং পোস্টার দেখে থাকে। এ-সময় তাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে নানা ঘটনা শুনে তার বিবরণ লিখে একজন শিক্ষকের কাছে জমা দিতে বলা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জাদুঘরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ‘নেটওয়ার্ক হচ্ছে শিক্ষক। তিনি নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য জাদুঘরে প্রেরণ করেন। এভাবে ৫০ হাজারের বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য সংগৃহীত হয়েছে। এতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিক ইতিহাস। নেটওয়ার্ক শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘নেটওয়ার্ক শিক্ষক সম্মিলন।’
৭১-এর বধ্যভূমি সংরক্ষণে জাদুঘর মিরপুর, সেকশন ১০-এ অবস্থিত জল্লাদখানা বধ্যভূমি সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে ২০০৭ সালের ২১শে জুন থেকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রকাশনার মধ্যে এ পর্যন্ত রয়েছে ২৫টি গ্রন্থ। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের সংগৃহীত মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ৭ খানা এবং ভাষ্য সংগ্রাহক শিক্ষার্থীদের নাম সংবলিত ‘সংগ্রাহক তালিকা’ ২৪ খণ্ড। গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত রিপোর্ট নিয়েও প্রকাশনা রয়েছে। শ্রুতি-দৃশ্য কেন্দ্র থেকে আয়োজিত হয় প্রামাণ্যচিত্র বিষয়ক কর্মশালা এবং প্রদর্শনী। ২০টির অধিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে এ কেন্দ্র থেকে। ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিস’ নিয়মিত আয়োজন করে আসছে সার্টিফিকেট কোর্স এবং উইন্টার স্কুল। এর লক্ষ্য, বিশ্বে সংঘটিত গণহত্যার ওপর শিক্ষা, গবেষণা ও উপাত্ত লিপিবদ্ধ করে যোগাযোগ বৃদ্ধি, গণহত্যা প্রতিরোধ, সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নির্যাতিতদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনা। ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ)-এ অনেক দলিলপত্র দিয়ে বিচারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কেন্দ্রটি। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার’-এ, স্বীকৃতি পাওয়ার নেপথ্যেও ভূমিকা রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশেষ করে এর অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দিবসে, যেমন বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা, নববর্ষ, হিরোশিমা দিবস, বিশ্ব জাদুঘর দিবস, বজলুর রহমান স্মৃতিপদক প্রদান, বিশ্ব শরণার্থী দিবস, সুফিয়া কামাল এবং জাহানারা ইমাম স্মরণ, তাজউদ্দীন আহমদ শ্রদ্ধাঞ্জলি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর শাহাদাৎ বার্ষিকী, বিশ্ব অহিংসা দিবস, আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান দিবস, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক স্মরণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস ইত্যাদি অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে প্রদর্শনীর আয়োজন নিয়মিত থাকে। জাদুঘরের গ্রন্থাগারে দেশ-বিদেশে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রকাশনা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে গ্রন্থাগারে রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার গ্রন্থ। আগ্রহী যে কেউ এ গ্রন্থ এবং সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে গবেষণায় সহায়তা পেতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিপুল স্মারক প্রদর্শন এবং এই ব্যাপক কর্মকাণ্ড ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকে একটি অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে পথ নির্দেশ করবে। [সত্যজিৎ রায় মজুমদার]
তথ্যসূত্র: সারওয়ার আলী, পেরিয়ে এলাম অন্তবিহীন পথ, ঢাকা, ডা. মাখদুমা নার্গিস ২০১০; একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব, ঢাকা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ২০০৭; রবিউল হুসাইন, একবিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব, ঢাকা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ২০১৭; সত্যজিৎ রায় মজুমদার, স্থানীয় ইতিহাস, সংখ্যা ৮, মার্চ ২০১৩; মফিদুল হক, দ্বাবিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব, ঢাকা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ২০১৮

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!