You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনী

‘আনসার’ আরবি শব্দ। এর অর্থ সাহায্যকারী। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৪৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি এক নতুন আইন বলে ‘পূর্ব পাকিস্তান আনসার বাহিনী’ গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর সৈন্যরা নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসলীলা চালায়। এ অবস্থায় বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ দুর্জয় সাহসে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এ-যুদ্ধ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে আনসার বাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। উল্লেখ্য, ৫২-র ভাষা-আন্দোলন-এর অন্যতম ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার ছিলেন একজন আনসার কমান্ডার।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ- এককভাবে বিজয় অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ হঠাৎ করে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন-এর ডাক দেন। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে’ শত্রুর মোকাবেলা এবং ঘরে-ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধ যে অনিবার্য তা বঙ্গবন্ধুর ঐ ভাষণ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। সারা দেশে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতাদের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। সম্ভাব্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় এবং অস্ত্র সংগ্রহের কাজও চলতে থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বিবেচনা করে জনগণ এলাকার বন্দুকের মালিক, বন্দুকের দোকান, রাইফেল ক্লাব ও অন্যান্য স্থান থেকে বন্দুক ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে। ছাত্র, যুবক ও অন্যান্যদের লাঠি, কাঠের ডামি রাইফেল এবং বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত সীমিত সংখ্যক বন্দুক দিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন প্রধানত আনসার ও অবসরপ্রাপ্ত ইপিআর সদস্যরা। মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে সেনাবাহিনীতে চাকরিরত বাঙালি অফিসার ও সৈনিকরা প্রায় অবরুদ্ধ ছিলেন। সেনা ছাউনির বাইরে সাধারণ মানুষের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ তাঁদের খুব কম ছিল। চাকরিরত ইপিআর ও পুলিশরাও ছিলেন নানা বিধিনিষেধের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে আনসাররা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্য হওয়ায় তারা ছিলেন অনেকটা সুবিধাজনক স্থানে। তাই তাঁরা ঐসব প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ-সময় আনসার বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা তাঁদের নিজেদের অস্ত্র, যা সরকারের তত্ত্বাবধানে পুলিশের অস্ত্রাগারে (কোত) রক্ষিত ছিল, পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করেন।
তৎকালে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে কিছু বড়বড় কল-কারখানা ছিল। সেসব কল-কারখানায় নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে আনসাররা চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের শুরুতে দেশের চলমান অবস্থাদৃষ্টে কারখানার শ্রমিকরা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। তাঁরাও দেশের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ শুরু করেন। প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে কল-কারখানায় নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত আনসাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন আর্মি গ্যারিসনে অবস্থানরত বাঙালি সৈনিকদের সুপরিকল্পিতভাবে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন স্থানে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়। ইপিআর এবং সে-সময়ে প্রশিক্ষণরত (শীতকালীন প্রশিক্ষণ) আনসার বাহিনীর সদস্যদের নিকট থেকেও পাকসেনারা অস্ত্র তুলে নিতে থাকে। এতে আনসার কর্মকর্তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাঁরা উপলব্ধি করেন যে, আনসারদের ব্যবহৃত ৪০ হাজার রাইফেল, যা দেশের বিভিন্ন জেলা এবং মহকুমা শহরে পুলিশ ম্যাগাজিনে সংরক্ষিত আছে, তা এবং চলতি প্রশিক্ষণ শিবিরের সমস্ত রাইফেল যদি পাকসেনা কর্তৃপক্ষ তুলে নেয়, তাহলে বাঙালিদের বড় একটি শক্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট আনসার কর্মকর্তারা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনসারদের প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র দেয়া সম্পর্কে এক আদেশ জারি করান। এর ফলেপুলিশ প্রশাসন তাদের ম্যাগাজিনে (কোত) রক্ষিত আনসারদের ৪০ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী কার্যত পূর্ব বাংলার প্রশাসন চলে। প্রশাসনের ওপর আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে রক্ষিত রাইফেল আনসার-মুজাহিদদের হাতে তুলে দেয়া সহজ হয়। পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ যুদ্ধে এসব অস্ত্র মুক্তিবাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এভাবে আনসারদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে। অসহযোগ আন্দোলন-উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সে-সময় দেশে আনসার ক্যাম্পসমূহ চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখপূর্বক এক আদেশ জারি করা হয়|
এছাড়া ১৫ই মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ন্যূনতম প্রশাসন ব্যবস্থা চালু ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে ৩৫টি বিধি জারি করা হয়, তার মধ্যে ৩নং বিধির ‘খ’ উপ-বিধিতে বলা ছিল ‘আনসার বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে’। এ নির্দেশ আনসাররা যথাযথভাবে কাজে লাগান। তাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য নিজেদের এবং জনগণকে প্রস্তুত করতে থাকেন।
লক্ষণীয় যে, অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই বাঙালিদের মধ্যে এক ধরনের যুদ্ধ-প্রস্তুতি চলছিল। এ প্রস্তুতি ২৫শে মার্চের পর আরো বেগবান হয় এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আনসাররা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট হন। এর পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী জনতা ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে আনসাররাও প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণহত্যার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিক, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস-এর সদস্য, পুলিশ এবং আধা-সামরিক আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যগণ। কিন্তু ২৫শে মার্চ রাতে তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ইপিআর সদর দপ্তর আক্রমণ করলেও আনসার সদর দপ্তর তখন আক্রান্ত হয়নি বা তারা আক্রমণ করার সুযোগ পায়নি। এ-সময় ঢাকার সাভারে অবস্থিত আনসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ২ হাজার আনসার সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ২৫শে মার্চ ঢাকা আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে তাঁরা দ্রুত অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ একাডেমি ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন এবং প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আনসার বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেননি। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে অনেক আনসার শহীদ এবং অনেকে আহত হন। যেহেতু আনসাররা এককভাবে বা নিজস্ব কমান্ডে যুদ্ধ করেননি, সেহেতু দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে কোথায় কখন কোন আনসার সদস্য যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী, তা নিরূপণ করা কঠিন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বিভিন্ন কারণে চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিছুদিনের জন্য এ দুটি স্থান হানাদারমুক্ত ছিল। চুয়াডাঙ্গায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী হবে এরকম একটি চিন্তাভাবনা নেতৃবৃন্দের মধ্যে পূর্ব থেকেই ছিল। ১৫ই এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সংসদ অধিবেশন বসা এবং মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের কথা চিন্তা করা হচ্ছিল। ১১ই এপ্রিল থেকে ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী গোলাবর্ষণ শুরু করে এবং পরপর কয়েকদিন একাধিকবার এ অঞ্চলে স্টাফিং করে। এর ফলে চুয়াডাঙ্গার ইপিআর ছাউনিতে আগুন লেগে তা পুড়ে যায় এবং কয়েকজন ইপিআর সদস্য হতাহত হন। এভাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ব্যাপক বোমা হামলার কারণে নিরাপত্তার শঙ্কা দেখা দিলে চুয়াডাঙ্গায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। ফলে মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলাকে স্বাধীন বাংলাদেশ-এর প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারণ করা হয়। ১৭ই এপ্রিল ঐ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত হাজার-হাজার মুক্তিকামী বাঙালি জনতার সামনে সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ- বৈদ্যনাথতলাকে ‘মুজিবনগর’ নামে নামকরণ করেন এবং এ স্থানটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী মর্মে ঘোষণা দেন। তখন থেকে এ স্থান মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে।
যুদ্ধের প্রথম দিকে (২৬ মার্চ থেকে ৩০শে মার্চ) কুষ্টিয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয় অর্জনে আনসার বাহিনীর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২৫শে মার্চের পর কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙালিদের ওপর হত্যাসহ নানা অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে থাকে। তখন চুয়াডাঙ্গায় ৪র্থ উইং ইপিআর ছিল। তাঁদের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং সহকারী কমান্ডিং অফিসার ছিলেন ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরী। এঁরা উভয়েই ছিলেন দেশপ্রেমিক বাঙালি সৈনিক। চুয়াডাঙ্গার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁরা স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। অতঃপর গ্রামাঞ্চল থেকে আনসার সদস্যদের সংগ্রহ করে তাঁদের ইপিআর সৈনিকদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ঐ দুজন বাঙালি সামরিক অফিসার। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আনসারের কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান ও আবুল কাশেম। অতঃপর ২৯শে মার্চ রাত ৯টায় কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে তাঁরা যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু যুদ্ধের কৌশলগত কারণে ঐদিন আক্রমণ করা সম্ভব হয়নি। পরের দিন ৩০শে মার্চ শেষরাতে তাঁরা কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজে অবস্থানরত পাকসেনাদের আক্রমণ করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সৈন্যরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে এবং পরাজিত হয়। তাদের অনেকে নিহত ও আহত হয় এবং কিছু সংখ্যক গ্রামাঞ্চলের দিকে পলায়নকালে তাদের ১১ জনকে আটক করা হয়। এভাবে যুদ্ধের শুরুর দিকে কুষ্টিয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে তা মুক্ত রাখার ক্ষেত্রে আনসার সদস্যরা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। কুষ্টিয়ায় পরাজিত হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঝিনাইদহের পথ ধরে যশোর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পালাতে শুরু করে। পথিমধ্যে ঝিনাইদহ অঞ্চলের শৈলকুপা থানার নিকট গারাগঞ্জ ব্রিজের সামনে মুক্তিবাহিনীর তৈরি করা ফাঁদে পড়ে হানাদারদের কয়েকটি গাড়ি নদীতে পড়ে যায়। উল্টোদিকে ট্রেঞ্চে থাকা ঝিনাইদহের মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে যানবহরের অনেক সৈন্য নিহত হয় অথবা তাদের সলিল সমাধি ঘটে। সারারাত পাকিস্তানি বহরের অন্য সৈন্যরা গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পরদিন জীবিত সকল পাকিস্তানি সেনা স্থানীয় জনগণের লাঠি, খুন্তা, কুড়াল, রাম দা, ট্যাটা, শাবল, গাইতি আর বাঁশের আঘাতে মৃত্যুবরণ করে। গোলাবারুদ, রিকয়েলল্যাস রাইফেল (Jeep Mounted RR Gun)সহ তাদের সকল অস্ত্র ও যানবাহন মুক্তিযোদ্ধাদের করায়ত্ত হয়। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ঝিনাইদহের মহকুমা পুলিশ প্রধান (এসডিপিও) মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বীর বীক্রম। এই ভয়াবহ যুদ্ধ তিনদিন ধরে চলে এবং পাকিস্তানি বাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্থ হয়। ফলে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা, নড়াইল, রাজবাড়ীসহ যশোর ক্যান্টনমেন্টের পার্শ্ববর্তী অধিকাংশ এলাকা মুক্ত হয়। এ অবস্থা ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকে। এদিন সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট, পাকসী এবং গোয়ালন্দঘাটে পাকিস্তানিদের ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৬ই এপ্রিল মধ্যরাতের পর মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের মুক্তিযোদ্ধা ও অধিকাংশ জনগণ পিছু হটে মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী ভারতের বেতাই বিএসএফ ক্যাম্পের চারদিকে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ অবস্থায় ভারতীয় সীমান্তের নিকটবর্তী মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা নামক স্থানে বাংলাদেশ সরকার-এর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অঞ্চল তখনো শত্রুমুক্ত ছিল। মার্চের প্রথম দিকেই মেহেরপুরে সীমান্ত সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। বিশেষ করে বাগোয়ান ইউনিয়নের ভবেরপাড়া গ্রামে এর তৎপরতা ছিল সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় অধিকাংশ আনসার এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহে আনসার ও মুজাহিদদের একটি শীতকালীন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল।
ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন আহমদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ঝিনাইদহের যুবকদের ঐ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। ফলে ঝিনাইদহের অনেক ছাত্র, যুবক, জনতা আনসার ও মুজাহিদদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা সবাই ২৫শে মার্চ মধ্যরাতেই ঝিনাইদহ পুলিশের অস্ত্রাগারে রক্ষিত থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল সংগ্রহ করে প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করেন। এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান ছিলেন ঝিনাইদহ মহকুমার আনসার এডজুট্যান্ট রাইসুল কাদের। তাঁর আদি নিবাস ছিল মুর্শিদাবাদ জেলায়। ১৯৬২ সালে ঝিনাইদহে তিনি স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ঝিনাইদহ আনসার অস্ত্রাগারে রক্ষিত সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ ২৭শে মার্চ স্থানীয় এসডিপিও মাহবুব উদ্দিনের নিকট হস্তান্তর করেন। ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত তিনি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দান উভয় ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিকূল অবস্থায় ১৪ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জনগণের অনেকের সঙ্গে তিনি ভারত সীমান্তের দিকে পশ্চাদপসরণ না করে ঝিনাইদহে থেকে যান। ফলে ১৬ই এপ্রিল ঝিনাইদহ পাকিস্তানি হানাদারদের দখলে চলে যাওয়ার পর পাকবাহিনী স্বপরিবারে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে সকলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়াও যশোরের সাবেক আনসার এডজুট্যান্ট হাবিবুর রহমান (বাদেকারা, বাঘেরহাট; তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত ছিলেন) ঝিনাইদহের প্রতিরোধ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৬ই এপ্রিল ঝিনাইদহ শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখলে আসার পর তাঁকেও হানাদাররা ধরে নিয়ে যায় এবং ৯ই মে বিষয়খালীর নিকট তেঁতুলতলা নামক স্থানে তাঁকে বেয়নেট চার্জ করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৫ই এপ্রিল ভারতের হৃদয়পুর ক্যাম্পের বিএসএফ-এর সশস্ত্র প্রহরায় ক্যাপ্টেন মনসুর আলী – ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৭৬নং ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল চক্রবর্তী ভবেরপাড়া ও বৈদ্যনাথতলা সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাংলাদেশের রাজধানী করার স্থান নির্ধারণ করেন। এর পরপরই শপথ অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় প্রস্ততি চলতে থাকে। ১৬ই এপ্রিল থেকে পুরো এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের ছত্রছায়ায় কড়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর লে. কর্নেল চক্রবর্তী এর সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেন মেহেরপুর মহকুমার তখনকার এসডিও মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম- (স্বাধীনতাপরবর্তী সরকারের সচিব ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা) এবং এটি পরিচালনা করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র- পরিচালনার সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত আবদুল মান্নান এমএনএ (স্বাধীনতা-পরবর্তী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)। ১৭ই এপ্রিল সকাল থেকে এখানে নিকটবর্তী এলাকার প্রচুর লোকজনের সমাগম ঘটে। বিদেশী সাংবাদিকরাও আসেন। তাঁদের সকলের উপস্থিতিতে সেদিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। নবনিযুক্ত সরকারের রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দীন আহমদ। সৈয়দ নজরুল ইসলাম— হন উপ-রাষ্ট্রপতি। তবে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ ও নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন পুলিশ কর্মকর্তা এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন আহমদ। ১২ জন আনসার ও অন্তত ৩ জন পুলিশের একটি চৌকস দল ঐ গার্ড অব অনার প্রদান করে। ১২ জন আনসার সদস্য হলেন- ১. ইয়াদ আলী (পিতা ইনসান আলী, হাসানাবাদ, বাড়াদি, মেহেরপুর), ২. মো. মহিউদ্দিন শেখ (পিতা আলীজান, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ৩. মো. হামদেল হক, (পিতা নওকর আলী, সোনাপুর, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ৪. মো. লিয়াকত আলী (পিতা মফিজ উদ্দিন, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ৫. মো. সিরাজউদ্দিন (পিতা নূর মহম্মদ, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ৬. মো. মফিজ উদ্দিন (পিতা মঙ্গল দফাদার, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ৭. মো. ফকির মোহাম্মদ (পিতা সুলতান, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ৮. মো. সাহেব আলী (পিতা উকিল আলী শেখ, সোনাপুর, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ৯. মো. নজরুল ইসলাম (পিতা মোক্তার আলী, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ১০. মো. আজিমুদ্দিন শেখ (পিতা আবু তালেব, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর), ১১. কেছমত বিশ্বাস (পিতা মো. আব্দুস সালাম বিশ্বাস, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর) এবং ১২. মো. অস্থির মল্লিক (পিতা জুড়ান মল্লিক, ভবেরপাড়া, মুজিবনগর, মেহেরপুর)|
মুজিবনগর সরকার নামে খ্যাত মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হওয়ার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দেশবাসীর প্রতি ১৭ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। সেসব নির্দেশনার সারাংশ আকাশবাণী ও বিবিসি সহ বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। এই নির্দেশনার ১৫নং দফায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র আনসারদেরও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। উল্লেখ্য, পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের সেক্রেটারিয়েটের দপ্তরসমূহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে ১৩ জন আনসার কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়। ১৭ দফা নির্দেশনার ১৫নং দফায় আনসারদের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ থাকায় এর ফল হয় সুদূরপ্রসারী। মূলত এরপর আনসাররা পূর্ণোদ্যমে অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ও স্বাধীনতাকামী জনতার সঙ্গে মিশে সশস্ত্র ট্রেনিং ও অস্ত্রের জন্য ভারত গমন এবং ফিরে এসে দেশের অভ্যন্তরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, আনসারদের আধাসামরিক প্রশিক্ষণ থাকায় তাঁরা যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নেন। তদুপরি তাঁদের কাছে ছিল ৪০ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আনসারদের নিয়ে সর্বত্র খুব দ্রুত মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাধারণ জনগণের কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল না। তারা সাধারণ রাইফেল পর্যন্ত ধরতে জানত না। ঠিক এ-সময় অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আনসাররা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের যতটুকু সম্ভব ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের জন্য সক্ষম করে তোলেন।
জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলছিল অনেকটা স্তিমিতভাবে। কারণ তখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, কমান্ড ইত্যাদির অনেকটাই অভাব ছিল। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। এ-সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন এবং ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রসহ দেশে প্রবেশ করতে থাকেন। অতএব জুলাই মাসে মুক্তিযুদ্ধের গতি অনেকটা বৃদ্ধি পায়। সুষ্ঠুভাবে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সমস্ত রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক সেক্টরের জন্য একজন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। এতে যুদ্ধের ব্যাপকতা আরো তীব্র হয়। তখন মুক্তিযুদ্ধ একটা সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে চলে আসে। ফলে ব্যাপক আকারে ছাত্র, যুবক, আনসার, পুলিশ, ইপিআর ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এ পর্যায়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আনসার বাহিনী বিলুপ্ত করতে তৎপর হয়। একই লক্ষ্যে লে. জেনারেল টিক্কা খান জুন মাসে পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স, ৭১ জারি করে। এ অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতাবলে ১৯৪৮ সালের আনসার এ্যাক্ট বাতিল করে আনসার নাম বদল করে রাজাকার বাহিনী নামকরণ করা হয়। আনসার-মুজাহিদ বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় সম্ভবত পাকিস্তানি দখলদার সরকার এ নতুন আইন জারি করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু এতে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
১১টি সেক্টরের প্রত্যেকটিতে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের (গণবাহিনী) পাশাপাশি বেশ সংখ্যক নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। তাঁদের একটি অংশ ছিল আনসার। এমনকি মুক্তিযুদ্ধকালে যে ৩টি ফোর্স গঠন করা হয়েছিল (‘কে’ ফোর্স, ‘এস’ ফোর্স ও ‘জেড’ ফোর্স) তাতেও আনসার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে ৯ জন অফিসারসহ ৬৭০ জন আনসার শহীদ এবং বহুসংখ্যক আহত হন। সফিপুর আনসার-ভিডিপি একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মিত স্মৃতিফলকে শহীদদের নাম পাথরে খচিত রয়েছে (বিস্তারিত তথ্যের জন্য দ্রষ্টব্য, মো. মাহবুবর রহমান ও মীর ফেরদৌস হোসেন, মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনী, সুবর্ণ, ঢাকা ২০১৩)। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সঙ্গে এ বাহিনীর সদস্যদের রক্ত মিশে আছে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য ১৫৮ জন আনসারকে বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক প্রদান করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ৩ জন যথা এলাহী বক্স পাটোয়ারী পিসি (চাঁদপুর)-কে ‘বীর বিক্রম’, মো. গোলাম ইয়াকুব পিসি (মাগুরা)-কে ‘বীর প্রতীক’ এবং ওয়ালিউল হোসেন (মেহেরপুর)-কে ‘বীর প্রতীক’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আনসারদের স্মরণে সফিপুর (গাজীপুর) আনসার একাডেমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আনসারদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। [হারুন-অর-রশিদ ও মীর ফেরদৌস হোসেন]

তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ৩৯তম জাতীয় সমাবেশ ২০১৯ (স্যুভ্যেনির), ঢাকা, প্রশিক্ষণ পরিদপ্তর ২০১৯; মো. মাহবুবুর রহমান ও মীর ফেরদৌস হোসেন, মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনী, ঢাকা, সুবর্ণ ২০১৩; মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার, ১৮/১২/১৮

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!