মীরগঞ্জ বিওপি রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঘা, রাজশাহী)
মীরগঞ্জ বিওপি রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঘা, রাজশাহী) পরিচালিত হয় আগস্ট মাসে। এতে ৮ জন রাজাকার নিহত ও ২০ জন আহত হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াতের জন্য মীরগঞ্জ বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) ব্যবহার করতেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইপিআর বাহিনীর পরিত্যক্ত মীরগঞ্জ বিওপিতে রাজাকাররা ঘাঁটি নির্মাণ করে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের অভ্যন্তরে চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। এ পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের যাতায়াত পথের নিরাপত্তা বিধান ও নির্বিঘ্নে দেশের অভ্যন্তরে অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে কাজিপাড়া সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রশিদের নির্দেশনায় মীরগঞ্জ বিওপিতে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা মোতাবেক তাঁরা ৩ বার এ ক্যাম্পে আক্রমণ পরিচালনা করেন। মুক্তিযোদ্ধা মো. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা পদ্ধতিতে প্রথমবার বিওপিতে আঘাত হানেন। তাঁরা কিশোরপুরের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে রাত ১২টার দিকে বের হয়ে আলাইপুর হয়ে হরিরামপুর পৌঁছান। সেখান থেকে নদীর ঘাট পার হয়ে মাহদিপুর হয়ে মীরগঞ্জ ক্লাবের পেছনে মাটির তৈরি প্রাচীরের বাইরে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং সুযোগ বুঝে আক্রমণ পরিচালনার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। তাঁরা বিওপির দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে রাজাকারদের অবস্থানের ওপর ৭-৮টি গ্রেনেড চার্জ করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। এ অপারেশনে শত্রুপক্ষের ৮ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়|
দ্বিতীয়বার মীরগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনে নেতৃত্ব দেন সুবেদার মুজিবর রহমান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আজাদ আলীসহ ১৬০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা। ভারতের কাজিপাড়া ক্যাম্প থেকে রাত ৮.৩০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ৪টি বড় নৌকায় করে মীরগঞ্জ বিওপির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে তাঁরা মীরগঞ্জ বিওপির দেড় মাইল ভাটিতে নিরাপদ স্থানে নদীর তীরে নৌকা ভেড়ান। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জাহাঙ্গীরের এসএমজি থেকে অসতর্কভাবে এক রাউন্ড গুলি বেরিয়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে হরিরামপুর গ্রামের একদল লোক সেখানে এসে উপস্থিত হয় এবং সুবেদার মুজিবর রহমানকে সেদিনের জন্য অভিযান পরিচালনা না করার অনুরোধ করে। কারণ এরপর পাকিস্তানি হানাদাররা তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাবে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবে, হত্যা ও লুটতরাজ সংঘটিত করবে। গ্রামবাসীর অনুরোধে সুবেদার মুজিব সেদিনের মতো অপারেশন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন এবং খাজুরারথাক বিওপি ক্যাম্পে তাঁর দল নিয়ে ফিরে যান।
২২শে আগস্ট রাতে সুবেদার মুবাসারুল ইসলামের নেতৃত্বে এক প্ল্যাটুন মুক্তিযোদ্ধা নৌকাযোগে পদ্মা নদী পার হয়ে মীরগঞ্জে আসেন। এরপর তাঁরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং একযোগে রাজাকার ক্যাম্পের ওপর গুলিবর্ষণ করেন। হঠাৎ আক্রমণে রাজাকাররা হতচকিত হয়ে যায়। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অবস্থান গ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা বেশিক্ষণ না থেকে পশ্চাদপসরণ করেন। এ-সময় রাজাকারদের একটি ছোট টহল দল তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা এ আক্রমণ প্রতিহত করে ক্ষিপ্র গতিতে পিছু হটতে সক্ষম হন। এ অপারেশনে তাঁদের কোনোরূপ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এসব অপারেশনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সর্বদা ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে সক্ষম হন। [মোস্তফা কামাল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড