মুকসুদপুর থানা অপারেশন (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ)
মুকসুদপুর থানা অপারেশন (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) পরিচালিত হয় ৮ই আগস্ট। এতে ৪০-৪৫ জন পাকসেনা, পুলিশ ও রাজাকার নিহত হয়। অপরপক্ষে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
মুক্তিযোদ্ধা জলিল শেখ, মজিদ তালুকদার, জাফর মল্লিক ও তাঁদের গ্রুপ এবং কহিনুরের গ্রুপ মিলিত হয়ে মুকসুদপুর থানা দখলের পরিকল্পনা করে। তাঁরা রেকি পার্টি পাঠিয়ে থানার খোঁজ-খবর নেন। থানা আক্রমণ করার আগের রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ডাকপাড় গ্রামের হাজী নওয়াব আলীর বাড়িতে
অবস্থান করেন।
ঘটনার দিন রাত ৩টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণ করেন এবং সারারাত ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। মুক্তিযোদ্ধারা ভেবেছিলেন পাকসোনা, পুলিশ ও রাজাকাররা অল্পতেই আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু তারা তা না করে যুদ্ধ চালিয়ে যায় এবং গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকসেনাদের জানাতে চেষ্টা করে। কিন্তু টেলিফোন লাইন কাটা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। পরের দিন দুপুর পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ততক্ষণে আজিজ মোল্লা ও আলতাফ কমান্ডারদ্বয়ের কাছে সংবাদ পাঠানো হয়। আজিজ মোল্লা পুরো এক পেটি গুলি পাঠিয়ে দেন, যা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আরো অধিক সময় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হন। কমান্ডার আলতাফ তাঁর পার্টি নিয়ে এসে থানার উত্তর পাশ দিয়ে আক্রমণ করেন। কমান্ডার কহিনুর থানা দখলের এ লাড়াইয়ে বিশেষ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। তিনি তাঁর এলএমজি নিয়ে থানার একতলা ভবনের কাছে গিয়ে আক্রমণ রচনা করেন এবং থানার পুলিশ ও সেনাদের অনেকটা দুর্বল করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি দালানের ছাদে উঠে সেখান থেকে এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে পুলিশের নিরাপদ অবস্থানে আঘাত হানেন। এতে পাকসেনাদের অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিহত হলে তারা একবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা জাফর মল্লিক ও হাবিবুর রহমান ভেতরে ঢুকে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে সবাই আত্মসমর্পণ করে। ৯ই আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে যুদ্ধ শেষ হয়।
থানা দখলের এ-যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। তাঁরা হলেন- বারু খান (বাওশখালি, নগরকান্দা) ও আলতাফ হোসেন (শীতারামপুর, কাশিয়ানী)। অপরপক্ষে পাকসেনাদের কমান্ডার গনি হাবিলদার, থানার ওসি, এবং সেকেন্ড অফিসারসহ প্রায় ৪০-৪৫ জন পাকসেনা, পুলিশ ও রাজাকার নিহত হয়। থানার সকল গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
এ-যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরাট সাফল্য আসে থানা মুক্ত হওয়ায় থানার ব্যাপক এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও একদিন পর গোপালগঞ্জ থেকে লঞ্চে করে বহু পাকসেনা মুকসুদপুরে আসে, কিন্তু তারা পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ফেরত চলে যায়।” এরপর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা থানায় অবস্থান করে তাঁদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকেন। [মো. ফিরোজ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড