মির্জাপুর দাড়িয়া দিঘি গণহত্যা (আটোয়ারী, পঞ্চগড়)
মির্জাপুর দাড়িয়া দিঘি গণহত্যা (আটোয়ারী, পঞ্চগড়) ২৮শে অক্টোবর সংঘটিত হয়। এ গণহত্যায় ১১ জন শহীদ হন। তাঁদেরকে দিঘির পাড়ে গণকবর দেয়া হয়। এর পূর্বে সংঘটিত যুদ্ধে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
২৮শে অক্টোবর সকালে পাকসেনাদের সাঁজোয়া গাড়ি পাটশিরি মাদ্রাসা সংলগ্ন হাইওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পোতা মাইনের বিস্ফোরণে উড়ে যায়। গাড়িতে থাকা ৪ জন পাকসেনা ঘটনাস্থলে নিহত হয়। পেছনের গাড়িতে থাকা পাকসেনারা ওয়ারলেসের মাধ্যমে ডাঙ্গী, আটোয়ারী থানা, রুহিয়া ও পঞ্চগড় ক্যাম্পে এ খবর জানালে বিপুলসংখ্যক হানাদার সৈন্য আশপাশের গ্রামগুলো ঘিরে আক্রমণ চালায়। এলাকায় থাকা মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। পাকসেনাদের বিশাল বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে-করতে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে পিছু হটেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকবাহিনী বারঘাটি পর্যন্ত অগ্রসর হয়। এ-যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হলেও ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানিরা ঝলঝলী, তেলিপাড়া ও মির্জাপুর গ্রামের আশপাশের বহু নিরপরাধ বাঙালিদের ধরে আনে। তাদের মধ্যে ১১ জনকে মির্জাপুর দাড়িয়ার দিঘির পাড়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে এবং গণকবর দেয়।
মির্জাপুর দাড়িয়া দিঘি গণহত্যায় শহীদরা হলেন- মো. রফিকুল ইসলাম (মহসীনপাড়া) মো. তছলিম উদ্দীন (পিতা কনি হাজী, মহসীনপাড়া), মো. সাহাদুল ইসলাম (পিতা মজিতুল্লাহ, মহসীনপাড়া), মো. সানু (পিতা ধনে আলী, মহসীনপাড়া), মালী (পিতা বিশুয়া, নয়াদীঘি), মো. চৌধুরী (পিতা মহরবুল্লাহ, নয়াদীঘি), মো. কাশেম আলী (নয়াদীঘি), মো. পহির উদ্দীন (পিতা ভুইশালু, ঝলঝলী), মো. রফিজ উদ্দীন (পিতা মজির উদ্দীন, ঝলঝলী), মো. খাকারু (ঝলঝলী) ও দর্শন চন্দ্র বর্মণ (পিতা লালু বর্মণ, ওলুয়ারচাপ)। এ গণহত্যায় নিহতদের দাড়িয়া দিঘির পাড় গণকবরে দাফন করা হয়। এখানে নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি ফলক স্থাপিত হয়েছে। [মো. রমজান আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড