You dont have javascript enabled! Please enable it!

মির্জাপুর যুদ্ধ (মির্জাপুর, টাঙ্গাইল)

মির্জাপুর যুদ্ধ (মির্জাপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১৮ই নভেম্বর ও ১২ই ডিসেম্বর দু-দফায়। ৭ই মে পাকবাহিনী টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানায় ঘাঁটি স্থাপন করে। সেখান থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার চেষ্টা করেন, কিন্তু অবস্থা অনুকূলে না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ১৮ই নভেম্বর সূর্যাস্তের সঙ্গে-সঙ্গে কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার আবদুস সবুর, বীর বিক্রম-, কোম্পানি কমান্ডার সাইদুর রহমান, বীর প্রতীক, কোম্পানি কমান্ডার আজাদ কামাল ও কোম্পানি কমান্ডার রবিউল আলম গেরিলার নেতৃত্বে প্রায় ৪০০ মুক্তিযোদ্ধা থানার চতুর্দিকে অবস্থান নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত বারুখালী খালের পূর্বপাশে গোরস্থানে পজিশন নেয়া কোম্পানি কমান্ডার আজাদ কামালের গ্রুপ প্রথম পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে। এরপর চতুর্দিক থেকে শুরু হয় সাঁড়াশি আক্রমণ। এ আক্রমণে ভোর ৬টার পূর্বেই হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়ে মির্জাপুর থানা ত্যাগ করে। এ-যুদ্ধে ২৮ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয় এবং ৭ জন পাকসেনাসহ ১৫০ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়। হানাদার বাহিনীর গুলিতে জাহাঙ্গীর হোসেন খান নামে ঘাটাইলের লোকেরপাড়া গ্রামের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এর দুদিন পর ২১শে নভেম্বর দুপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত বিপুল সংখ্যক পাকসেনা এসে আবার মির্জাপুর দখল করে। কিন্তু ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে মুক্তিযোদ্ধারা কোনোরূপ প্রতিরোধের চেষ্টা না করে মির্জাপুর ত্যাগ করেন।
বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক আক্রমণে নভেম্বর মাসের শেষদিকে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুর থানায় অবস্থানকারী পাকবাহিনীর শেষ আশ্রয়স্থলটি দখলে নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ লক্ষ্যে তাঁরা থানা সদরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। অবশেষে ১২ই ডিসেম্বর রাতে কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার আজাদ কামাল, কমান্ডার আবদুস সবুর খান, কমান্ডার রবিউল আলম গেরিলা এবং কমান্ডার ফেরদৌস আলম রঞ্জুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে মির্জাপুর সদরে অবস্থান নেয়া পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান। পরের দিন বেলা ১২টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলার পর সার্কেল অফিসের (সিও অফিস) ছাদের ওপর অবস্থানরত পাকসেনাদের শেষ দলটি মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুরের আকাশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!