You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে মিঠাপুকুর উপজেলা (রংপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে মিঠাপুকুর উপজেলা (রংপুর)

মিঠাপুকুর উপজেলা (রংপুর) নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান। এ এলাকার ছাত্র-জনতা ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন থেকে শুর করে ১৯৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-র ছয়দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। তাদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থনে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মতিউর রহমান এমএনএ ও হামিদুজ্জামান সরকার এমপিএ নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে রংপুর জেলা সদরকে কেন্দ্র করে এখানে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়।
১৯৭১ সালের ১লা জানুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলামকে সভাপতি ও নির্মল কুমার বর্মণকে সম্পাদক করে মিঠাপুকুরে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের অন্য সদস্যদের মধ্যে আব্দুল ওয়াহেদ, সৈয়দ আহম্মেদ সামদানী, শাহাজাদ হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, আফজাল হোসেন, আব্দুস সালাম, আব্দুস সবুর, রুহুল আমিন দুলু, নন্দ সরকার, আব্দুর রশিদ, ব্রজেন বাবু, নূরুল ইসলাম (নরুদা ), যাদব বাবু, মোস্তফা, আজগর, ক্ষিতীশ, শাহজাহান, ধীরেন্দ্রনাথ হাজরা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। পরিষদের উদ্যোগে মিঠাপুকুর কলেজ প্রাঙ্গণে ভাষা-শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার নির্মিত হয় এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি এখানে ভাষা দিবসের কর্মসূচি পালিত হয় (মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররা শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলে)। সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নির্মল কুমার বর্মণ ও সদস্য সৈয়দ আহম্মেদ সামদানীর উদ্যোগে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করে ১৫ই মার্চ স্থানীয় বিএডিসি ভবনে উত্তোলন করা হয়। ২০শে মার্চ মতিউর রহমান এমএনএ ও হামিদুজ্জামান সরকার এমপিএ-এর উপস্থিতিতে মিঠাপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের এক বিশাল কর্মী-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিনই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ কে এম হানিফ (তিলকপাড়া)-কে সভাপতি ও মো. হবিবর রহমান (দেউল মির্জাপুর)-কে সম্পাদক করে ১০ সদস্য-বিশিষ্ট একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। সংগ্রাম কমিটির সদস্যগণ হলেন মজিবর রহমান প্রধান (বড়মির্জাপুর), আফসার আলী বাদশা মিয়া (কাফ্রিখাল), নূর মহাম্মদ বানিয়া (নিশ্চিন্তপুর), রইচ উদ্দিন সরকার (দুর্গাপুর), আজগর আলী (রূপসী), মকবুলার রহমান (বালুয়া মাসিমপুর) ও আজগর সর্দার (বালারহাট)। ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সংগ্রাম কমিটি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এলাকার সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে শহীদ মিনার, থানা ও সরকারি অফিসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মিঠাপুকুরের ভারপ্রাপ্ত সার্কেল অফিসার আব্দুল আজিজ, থানার ওসি রেজা করিম এবং দারোগা রফিকুল ইসলাম মুক্তিকামী জনতার এ আন্দোলনে সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতা করেন। সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে মিঠাপুকুর অঞ্চলের জনগণ পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এখানকার ছাত্র-যুবকরা ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে হারেছ উদ্দিন সরকার, বীর প্রতীক (পিতা সিরাজউদ্দিন সরকার, বলদিবাথান) ও শহিদুর রহমান (পিতা বশির উদ্দিন আহমেদ, ইসলামপুর) কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। মিঠাপুকুরবাসী রংপুর সেনানিবাস অবরোধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখে। ২৭শে মার্চ রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ থানাসহ সর্বত্র খবর রটে যে, রংপুর সেনানিবাসে বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র ও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাঁদের মুক্ত করতে পারলে তাঁরা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন। এ সংবাদ মিঠাপুকুরের রাণীপুকুর, খোড়াগাছ, ময়েনপুর ইউনিয়নেও ছড়িয়ে পড়ে। ২৭শে মার্চ বিকেলে রাণীপুকুর হাটে ঢোল পিটিয়ে পরদিন রংপুর সেনানিবাস অবরোধ করার কথা জানিয়ে দেয়া হয়। ২৮শে মার্চ মিঠাপুকুরের মুক্তিকামী জনতা সকাল থেকেই রাণীপুকুর হাটে জমায়েত হতে থাকে। বাঙালিদের পাশাপাশি এ অঞ্চলের আদিবাসীরাও তীর-ধনুক, বল্লম ইত্যাদি নিয়ে প্রতিরোধে অংশ নেয়। তাদের মধ্যে বুদু ওঁরাও, স্টিফিন মিনজি, চাইতু ওঁরাও, বান্দা সিং, মঙ্গল সিং প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। মুক্তিকামী জনতা সেনানিবাস অবরোধ করতে গেলে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ওপর মেশিনগানের গুলি বর্ষণ করে। এতে রাণীপুকুরের নূরপুর গ্রামের আইনুল হক, হরনারায়ণপুরের শাহজাহানসহ বহু লোক শহীদ হন। আহত হন রূপসীর আব্দুল খালেকসহ অনেক সাধারণ মানুষ। সেনানিবাস অবরোধে নেতৃত্ব দেন এডভোকেট আব্দুল গণি, নহর উদ্দিন মণ্ডল, সিদ্দিক মণ্ডল, নূরুল ইসলাম বরেন্দী, আব্দুল হক, সোহরাব মানিক, লতিফ সরকার, আজগর আলী প্রমুখ। পাকবাহিনী এপ্রিল মাসের শেষদিকে মিঠাপুকুরে অনুপ্রবেশ করে। মিঠাপুকুর রংপুর শহরের নিকটবর্তী এবং রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় পাকবাহিনী এখানে কোনো স্থায়ী ক্যাম্প না করে প্রতিদিন রংপুর সদর থেকে এসে হামলা করত। তবে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ী হাইস্কুল, দমদমা প্রাইমারি স্কুল ও মির্জাপুর আদর্শ বাজারে রাজাকারদের ক্যাম্প স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে জুলাই মাসে কাশিপুর গ্রামের দবিরউদ্দিন ও ওসমান গণির বাড়িতে এবং দুলহাপুর গ্রামে আরো দুটি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়।
মিঠাপুকুরে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের নিয়ে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। শান্তি কমিটির সদস্যদের মধ্যে আকমল হোসেন (মিঠাপুকুর, রংপুর জেলা শান্তি কমিটির নেতা), মো. গিয়াস উদ্দিন শাহ ফকির (মিঠাপুকুর থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান), ডা. তোজাম্মল হোসেন, মওলানা তোফাজ্জল হোসেন (ইউনিয়ন শান্তি কমিটির নেতা), আলতাফ হোসেন (মিঠাপুকুর, কুখ্যাত দালাল), মওলানা আব্দুল বারী (মুসাপুর, মিঠাপুকুর থানার রাজাকার কমান্ডার), নছিম উদ্দিন (রশিদপুর, ইউনিয়ন রাজাকার কমান্ডার), সেরাজুল ইসলাম (দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাজাকার কমান্ডার), রওশন জামান রাঙ্গা (মির্জাপুর ইউনিয়নের রাজাকার কমান্ডার) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। রাজাকারদের মধ্যে ওসমান গণি (তিলকপাড়া), ফুলচৌকি গ্রামের মজিবর রহমান, সোহেব আলী, মোফাজ্জল হোসেন (চিথলী পশ্চিমপাড়া), সাখাওয়াত হোসেন (জগদীশপুর), নূরপুরের আজিজুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, তোফাসেল হোসেন (নিঝাল), জাফরপুরের মজিবর রহমান, মাহবুবুর রহমান, আব্দুর রহমান (গুটিবাড়ি), আব্দুল খালেক (রশিদপুর), ইমাদপুরের আনসার আলী, এ টি এম এ কাদের, নূরুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, হাবিবুর রহমান, (রাঙাপুকুর), আব্দুর রব (বেতগাড়া), নবীর উদ্দিন (রামনাথপুর), আব্দুর রাজ্জাক (কাশিপুর), রেহান আলী (রূপসী), আজগার আলী (রাণীপুকুর), কছির উদ্দিন (রঘুনাথপুর), সামছুল হক (বড়বালা), সাইদুর রহমান (গিরাই), ফজলুল হক (খোদ কাশিনাথপুর), আব্দুস সাত্তার (চিথলী দক্ষিণপাড়া), লুৎফর রহমান (জারচল্যাপুর), নেসার আহমেদ (পিতা আব্দুল করিম, ভাংগনি কাজীপাড়া), আব্দুর রশিদ (পিতা আজাদ বকস, খোড়াগাছ উত্তরপাড়া), মনসুর আলী (পিতা মো. হোসেন, খোড়াগাছ উত্তরপাড়া), আমজাদ আলী (পিতা আজগর আলী, সোলেঙ্গা), প্রসন্ন ওরফে পাচন চৌধুরী (পিতা আহমেদ সিরাজউদ্দিন, ভক্তিপুর), আনিছুর রহমান (পিতা সিরাজ উদ্দিন, রহমতপুর) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। নেসার আহমেদসহ এদের অনেকেই স্বাধীনতার পরে দালাল আইনে অভিযুক্ত এবং কেউ-কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছিল। এরা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের, বিশেষত হিন্দুদের পরিবারগুলোর ওপর নির্যাতন ও বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়েছিল।
২২শে এপ্রিল মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের জয়রামপুর আনোয়ার গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে ১১ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, যা জয়রামপুর আনোয়ার গণহত্যা নামে পরিচিত। একই দিন লহনী গ্রামে ১৫ জনকে হত্যা করে। এ ঘটনা লহনী গ্রাম গণহত্যা নামে পরিচিত। মে মাসের শেষদিকে রংপুর জেলা শান্তি কমিটির নেতা মিঠাপুকুর গ্রামের মো. আকমল হোসেন ও আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে দালালরা খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে ১৮টি বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। এ-সময় পাশের গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ ও সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিহত করতে এগিয়ে আসে। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের সময় হাছিনা বেগম (স্বামী এলাহী মিয়া) নামে একজন গৃহবধূ দালালদের গুলিতে নিহত হন। ৬ই জুন ভক্তিপুর গ্রামে পাকবাহিনী লুণ্ঠন শুরু করে। গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের বাধা দিলে পাকবাহিনীর গুলিতে আবু আলী পাটোয়ারী ও আব্দুস সামাদ চৌধুরী নামে দুজন গ্রামবাসী শহীদ হন। ১৪ই জুলাই পাকিস্তানি বাহিনী মিলনপুর ইউনিয়নের চৌধুরী গোপালপুর গ্রামের ব্যবসায়ী প্রিয়নাথ সরকারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁর স্ত্রী, ভ্রাতুষ্পুত্রবধূ, দুই শিশুকন্যা এবং টুলি রাণী দাস নামে অপর একজন মহিলাকে গুলি করে হত্যা করে। পাকবাহিনীর ভয়ে প্রাণরক্ষার্থে গ্রামের মানুষজন কেউ নদী সাঁতরে, কেউ নৌকাযোগে যমুনেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় পাকবাহিনী এলোপাতাড়িভাবে গুলি করে তাদের হত্যা করে। এ ঘটনা চৌধুরী গোপালপুর গণহত্যা নামে পরিচিত। নভেম্বর মাসে পাকিস্তানি বাহিনী জগদীশপুরের রাজাকার সাখাওয়াত হোসেনের সহযোগিতায় মিঠাপুকুর উপজেলার ফুলচৌকির ফাতেমা বেগম, রশিদা বেগম, জগদীশপুরের মোমেনা খাতুন, অহিতন বিবি-সহ ১৪-১৫ জন নারীর সম্ভ্রমহানি করে। সম্ভ্রমহারা এসব নারীকে গ্রাম্য ডাক্তার মকবুল হোসেন (গেনারপাড়া) প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর হাসপাতালে পাঠান|
মিঠাপুকুর উপজেলায় একটি বধ্যভূমি ও দুটি গণকবর রয়েছে- দমদমা ব্রিজ বধ্যভূমি, জয়রাম আনোয়ার গণকবর এবং লহনী গ্রাম গণকবর। দমদমা ব্রিজ বধ্যভূমিতে কয়েকজন শিক্ষকসহ অনেককে হত্যা করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা আক্কাছ আলী তাঁর গ্রুপ নিয়ে মিঠাপুকুরে প্রবেশের পর প্রথম যুদ্ধ হয় ভেন্ডাবাড়ীতে। নভেম্বর মাসের শেষদিকে ভোররাতে এখানকার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করলে রাজাকাররা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। এখান থেকে ১০টি অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন। ২৫শে নভেম্বর গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মিঠাপুকুরের মির্জাপুর আদর্শ বাজারস্থ রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন চালান। এতে ১৯ জন রাজাকার নিহত হয় এবং আবুল হোসেন (উত্তর ইমাদপুর) নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ঘটনা মির্জাপুর আদর্শ বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন নামে পরিচিত|
১২ই ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী পীরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে বড় দরগা নামক স্থানে এসে পৌঁছায়। এখানে তাঁরা এক কঠিন প্রতিরোধের মধ্যে পড়েন। সারারাত ধরে পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চলে। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়। উভয় পক্ষে অনেক সৈন্য হতাহত হয়। ১৩ই ডিসেম্বর দুপুর বেলা তুমুল যুদ্ধের পর পাকসেনারা পিছু হটে রংপুরের উপকণ্ঠে দমদমা ব্রিজের কাছে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী মিঠাপুকুর উপজেলায় ক্যাম্প স্থাপন করে এবং এদিনই এ উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- হারেছ উদ্দিন সরকার, বীর প্রতীক (পিতা সিরাজ উদ্দিন সরকার, বলদিবাথান)।
মিঠাপুকুর উপজেলায় ৬জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা যায়। তাঁরা হলেন আবুল হোসেন (পিতা আছির উদ্দিন, উত্তর ইমাদপুর; মির্জাপুর আদর্শ বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনে শহীদ), গোলাম গোউস (পিতা নজমউদ্দিন আহমেদ, দৌলত রসুলপুর; পঞ্চগড় জেলার অমর খানা, শালমারা ব্রিজ ও ভেতরগড় এলাকায় অনেকগুলো সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে টোকাপাড়া ক্যাম্পে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ, ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় সমাহিত), পুলিন চন্দ্ৰ বৰ্মণ (পিতা অলঙ্ক চন্দ্র বর্মণ, ছড়ান বড়বালা; এ মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে ঝাড়ুয়ার বিলে গুলি করে হত্যা করা হয়), ওয়াজেদ শাহ (পিতা সোলায়মান শাহ, বুজরুক সন্তোষপুর; কয়েকজন রাজাকারকে বন্দি করার সময় তাদের গুলিতে শহীদ), সোলায়মান জামান (পিতা বদিউজ্জামান, ঠাকুরবাড়ী; ভাংনী যুদ্ধে শহীদ) এবং হাসিমউদ্দিন আহম্মেদ (পিতা আতিম উদ্দিন মুন্সী, কোমরপুর; কোমরপুর ফকিরের হাট যুদ্ধে শহীদ)।
চৌধুরী গোপালপুর গণহত্যায় শহীদ শান্তি রাণী সরকার, ভবতারিণী সরকার, নীলিমা রাণী সরকার, বেবি রাণী সরকার ও টুলি রাণী দাসের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মিঠাপুকুর উপজেলার চৌধুরী গোপালপুর যমুনেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজটির নামকরণ করা হয় ‘শহীদ স্মৃতি ব্রিজ’। দমদমা ব্রিজ বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে রংপুর সদর উপজেলার সীমান্তে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। [মো. নজরুল ইসলাম চাঁদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড