You dont have javascript enabled! Please enable it!

মিনি পরিষদ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)

মিনি পরিষদ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গঠিত একটি স্থানীয় প্রশাসনিক পরিষদ। ৮ই এপ্রিল চাঁদপুর জেলা পাকবাহিনীর দখলে যাওয়ার পর শীর্ষস্থানীয় নেতাগণ ফরিদগঞ্জ থানার পাইকপাড়া হাইস্কুলে এক সভায় সমবেত হন। সভায় উপস্থিত ছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট আব্দুল আওয়াল, এম ওয়ালি উল্লাহ, আব্দুর রব মিয়া, এডভোকেট আবু জাফর মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন, রাজা মিয়া পাটোয়ারী, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এ বি সিদ্দিক, গোলাম মোর্শেদ ফারুকী, এম শফিউল্লাহ, আব্দুল করিম পাটোয়ারী, রফিউদ্দিন (সোনা আখন্দ), জীবন কানাই চক্রবর্তী প্রমুখ। মিজানুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় এবং সুবেদার জহিরুল হক পাঠান ও বি এম কলিমউল্যাহ ভূঁইয়াকে তাঁদের বাহিনীসহ মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিছুদিন পর জহিরুল হক পাঠান ও কলিমউল্যা ভূঁইয়াকে সংগ্রাম পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের স্ব-স্ব দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। দুদিন পর কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও ছাত্রনেতাগণ ভারতে চলে যাওয়ার পর আব্দুর রব মিয়ার সভাপতিত্বে পাইকপাড়ায় চাঁদপুর মহকুমার মুক্তিযুদ্ধ, স্থানীয় প্রশাসন, অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। বৈঠকে ৯ সদস্য- বিশিষ্ট মহকুমা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। এ পরিষদই পরবর্তীতে ‘মিনি পরিষদ’ নামে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নেয়।
কয়েকদিন পর আব্দুর রব ও এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া সোনাপুর ও রামগঞ্জ ব্যাংক থেকে সংগৃহীত অর্থ নিয়ে ভারতে চলে গেলে নতুন করে মিনি পরিষদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। প্রশাসন ও সমন্বয় আব্দুল করিম পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা – বি এম কলিমউল্যা ভূঁইয়া ও সুবেদার জহিরুল হক পাঠান, অর্থ ও খাদ্য – এডভোকেট আবু জাফর মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন এবং সচিব ও তথ্য-যোগাযোগ – জীবন কানাই চক্রবর্তী। এ পরিষদ ছায়া মন্ত্রিসভা হিসেবেও পরিচিত ছিল। পরিষদের কর্মকর্তারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে কোনো প্রকার সমস্যা না হয়, সেজন্য জহিরুল হক পাঠান ও কলিমউল্যা ভূঁইয়া পরিষদের কাছ থেকে একটি চুক্তিনামা অনুমোদন করিয়ে নেন। চুক্তিটি হলো— সিভিল প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করবে এবং তা এক জায়গা থেকে সরবরাহ করা হবে; খাদ্য সংগ্রহ করা হবে সরকারি খাদ্য ভাণ্ডার ও দালালদের মজুদ থেকে, এক্ষেত্রে ডিফেন্সের প্রয়োজন হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাহায্য করবেন; সামরিক নিয়ম অনুযায়ী সুবেদার জহিরুল হক পাঠানের কমাণ্ডে সকল যুদ্ধ পরিচালিত হবে; যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ সিভিল প্রশাসন উপযুক্ত প্রমাণের মাধ্যমে জনগণকে ফেরত দেবে, প্রমাণ না পাওয়া গেলে পরিষদ অন্য যে- কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে; প্রতিমাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্য হলেও নির্দিষ্ট পরিমাণে ভাতা ও সপ্তাহে ৫ প্যাকেট সিগারেট দেয়া হবে, যাতে তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ও নিয়ম ভঙ্গ করে হাটে-বাজারে ঘোরাফেরা করতে না হয়। এরূপ ব্যবস্থার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সমস্যা হয়নি। তাঁরা জহিরুল হক পাঠান ও কলিমউল্যা ভূঁইয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে মুক্তিযুদ্ধ এগিয়ে নেন। [দেলোয়ার হোসেন খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!