মুক্তিযুদ্ধে মিরসরাই উপজেলা (চট্টগ্রাম)
মিরসরাই উপজেলা (চট্টগ্রাম) ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে মিরসরাইবাসীর সংগ্রামী ঐতিহ্য রয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর অসহযোগ আন্দোলন- শুরু হলে এ অঞ্চলের সংগ্রামী জনগণ তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেয়। এরপর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিলে সারা দেশের ন্যায় মিরসরাইয়েও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয়। আওয়ামী লীগ-এর নেতা ফজলুল হক বিএসসি এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিএ-এর নেতৃত্বে এখানে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু হয়। মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের নতৃত্বে এ উপজেলার পাড়া, মহল্লা, ইউনিয়ন ও থানায় সংগ্রাম কমিটি এবং ছাত্রলীগ-এর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন সাবের আহমদ আসগরী। মিরসরাই থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. অহিদুল হককে আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন রাশেদকে সদস্য-সচিব করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন— রাখালচন্দ্র বণিক (সভাপতি, চট্টগ্রাম উত্তর মহকুমা ছাত্রলীগ), জাফর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, বেলায়েত হোসেন চৌধুরী (সভাপতি, নিজামপুর কলেজ ছাত্রলীগ, ১৯৭০-৭১), সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (সাধারণ সম্পাদক, নিজামপুর কলেজ ছাত্রলীগ, ১৯৬৯-৭০), ফখরুউদ্দিন চৌধুরী (জিএস, নিজামপুর কলেজ ছাত্র সংসদ, ১৯৬৮-৬৯), মো. মহিউদ্দিন (সভাপতি, নিজামপুর কলেজ ছাত্রলীগ, ১৯৬৯-৭০), জাহাঙ্গীর চৌধুরী (ভিপি, নিজামপুর কলেজ ছাত্র সংসদ, ১৯৬৯-৭০), মো. ইলিয়াস (ভিপি, নিজামপুর কলেজ ছাত্র সংসদ, ১৯৭০-৭১), মেসবাহ উদ্দিন (জিএস, নিজামপুর কলেজ ছাত্র সংসদ, ১৯৭০-৭১), ফেরদৌস বারী চৌধুরী মিহির, মাহবুবুল আলম (সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন, মিরসরাই থানা এবং জিএস, নিজামপুর কলেজ ছাত্র সংসদ) এবং এ কে এম আলাউদ্দিন (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন, মিরসরাই থানা)।
মিরসরাই উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন- ফজলুল হক বিএসসি, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপিএ, মওলানা আহমেদুর রহমান আজমী, এবাদুর রহমান বিকম, মাস্টার আবুল কালাম, এ টি এম শামসুদ্দিন, মাস্টার নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মেজবাহ উল আলম, নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. ফজলুল হক চেয়ারম্যান, জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ মন্টু, মাহবুবুল ইসলাম চৌধুরী, এডভোকেট আবুল কাশেম চৌধুরী, এডভোকেট রবিউল হোসেন, নুরুল আবছার চৌধুরী, আবু জাফর আহমদ সাঈদ, এডভোকেট আবুল খায়ের, মির্জা ফিরোজ, কেফায়েত উল্লাহ মিঞা, এ টি এম ইসমাইল, শেখ আবুল কাসেম, শেখ সোলেমান, আলী আকবর চৌধুরী, আবদুর রব, নৃপেন্দ্র কুমার চৌধুরী, এডভোকেট সঞ্জীব কুমার বড়ুয়া, সাংবাদিক কাজী জাফরুল ইসলাম, মো. আলতাফ হোসেন, আসহাব উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
মিরসরাই উপজেলায় এফএফ গ্রুপ কমান্ডাররা হলেন- এ এফ এম নিজাম চৌধুরী, অহিদুল হক, আবুল কালাম আজাদ, আবু তাহের, মাঈনুদ্দিন মোমিন, নিজামউদ্দিন চৌধুরী, আহসানউল্লাহ, আলাউদ্দিন আহমদ, লোকমান হোসেন, সিরাজুল মোস্তফা প্রমুখ। ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন-
শাহ আলম, বজলুল হুদা, নির্মল চন্দ্র দেবনাথ, আফতাবউদ্দিন আহমদ প্রমুখ। বিএলএফ গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন— এরফানুল হক, হাবিবুর রহমান এবং জাফরউল্লাহ চৌধুরী। ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন- ময়েজউদ্দিন, শফিউজ্জামান এবং নিজামউদ্দিন।
২৫শে মার্চের পরপরই মিরসরাইয়ের সর্বস্তরের জনগণ ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে’ পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে প্রস্তুতি নিতে থাকে। কুমিল্লা থেকে পাকসেনারা যাতে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য চট্টগ্রাম জেলার নেতৃবৃন্দ শুভপুর ব্রিজ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোশাররফ হোসেন এমপিএ মিরসরাইয়ের সংগঠকদের শুভপুর ব্রিজ ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে এ অঞ্চলের ছাত্র-জনতা শুভপুর ব্রিজে জমায়েত হতে থাকে। এরপর তারা বড়তাকিয়া থেকে গ্যাস নিয়ে ব্রিজের কিছুটা ধ্বংস করে এবং পরে ব্রিজটিতে তেল ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২৬শে মার্চ দুপুরের দিকে পাকবাহিনী কুমিল্লা থেকে এসে শুভপুর ব্রিজ পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মিরসরাইয়ের এবাদুর রহমান, ইদ্রিস মিয়া (প্রাক্তন চেয়ারম্যান), শান্তু মিয়া প্রমুখ তাদের গাদা বন্দুক দিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৬শে মার্চ পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে নেট দিয়ে শুভপুর ব্রিজ পার হয়ে মিরসরাই উপজেলায় অনুপ্রবেশ করে। পথে তারা রিক্সাচালক আবুল কাসেমকে হত্যা করে।
মিরসরাই উপজেলায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর- ও মুজাহিদ বাহিনী গঠিত হয়। শান্তি কমিটির প্রধান ছিল মেজর আলী আকবর চৌধুরী ওরফে ছুট্টু মিয়া। রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিল মিঠাছরা মাদ্রাসার শিক্ষক কুখ্যাত মওলানা আজহার সোবহান (পিতা আবু হাবিব)। মিরসরাইয়ের স্টেশন রোডের মধ্যস্থান বরাবর লোহারপুল সংলগ্ন এলাকায় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সে নিজ হাতে জবাই করে হত্যা করে। এজন্য সে ‘আজরাইলের সোবহান’ নামে কুখ্যাতি অর্জন করে (স্বাধীনতার পর এই কুখ্যাত রাজাকার বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে নিহত হয়)। রাজাকার বাহিনীর অন্য সদস্যরা হলো— শামশুদ্দিন, মৌলভী ওরফে ছরু মৌলভী, রাজা মিয়া চৌধুরী, আলী মর্তুজা চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার সিরাজ, দিন মোহাম্মদ, মফিজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, ছলিম উল্লাহ ওরফে সেলিম এবং সিরাজুদ্দৌলা সিরাজ। মিরসরাইয়ে আলবদর বাহিনীর তিন শতাধিকের মতো সদস্য ছিল। মোহাম্মদ নোমান এবং জালাল উদ্দিন চৌধুরী ছিল আলবদর বাহিনীর দুজন উল্লেখযোগ্য কমান্ডার।
এ উপজেলায় মুজাহিদ বাহিনীর সদস্য-সংখ্যা ছিল পাঁচ শতাধিকের মতো। এ বাহিনীর কমান্ডারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— মাস্টার নূর ছালাম, মোশাররফ হোসেন (কচুয়া) এবং মাজহারুন্নবী ওরফে আজিম। অধ্যাপক মফিজুর রহমান, নূরুল করিম (কোরমাওয়ালাপাড়া), মৌলভী আমিনুল হক, নুরুজ্জমান, হোসেন মোমিন মাস্টার এবং নুরুল আমীন এ বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় সদস্য।
২০শে এপ্রিল তানাদাররা সৈদালী গ্রামে বর্বর গণহত্যা চালায়। তাতে একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ২৩ জন মানুষ শহীদ হন। যা সৈদালী গ্রাম গণহত্যা নামে পরিচিত|
পাকসেনারা মোস্তফা গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা হরিদাসকে করেরহাটে বেয়নেট চার্জ করে মৃত মনে করে শুভপুর ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান এবং জনৈক বড়ুয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। লোকমান গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা মুজিবল হক বাড়িতে গেলে রাজাকাররা তাঁকে ধরে এনে হত্যা করে। মাতব্বরহাটে মুক্তিবাহিনীর শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জেনে পাকবাহিনী মাতব্বরহাট ঘেরাও করে কবির চৌধুরী ও মহিউদ্দিন রাশেদের বাড়িসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এখানকার রাজাকাররা জাকির হোসেন, সিরাজুল মোস্তফা, সতীশ চন্দ্র, আবুল বশর, আবুল কালাম, কামালউদ্দিন, শাহাদাত, কোব্বাত আলী, নজির আহমদ, আবদুস সাত্তার, নুর হোসেন এবং নুরুল আলম চৌধুরীসহ বহু মানুষকে হত্যা করে। ১০ই জুলাই পাকবাহিনী সুফিয়ার আশপাশে অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। তারা নুরুল মোস্তফা চৌধুরী, বদরুদ্দোজা, আবদুল জলিল, ওয়ারতউল্লাহ এবং সামসুজ্জোহাকে গুলি করে হত্যা করে। সুলতান আহমদ ভূঁইয়া নামে একজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে।
মিরসরাই হাইস্কুল এবং মিঠানালা রাজাকার ক্যাম্প ছিল পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির। বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন বয়সের নারীদের ধরে এনে মিরসরাই হাইস্কুলের একটি ছোট কক্ষে বন্দি করে তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হতো। কামাল উদ্দিন গেদুর নেতৃতে মুক্তিযোদ্ধারা এখান থেকে ৩১ জন নারীকে বিবস্ত্র এবং রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। মিঠানালা ইউনিয়ন অফিস রাজাকার ক্যাম্প ছিল রাজাকারদের শক্তিশালী ঘাঁটি| এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনগণকে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা মিরসরাইয়ের বহু মানুষকে হত্যা করে কখনো নির্দিষ্ট স্থানে আবার কখনো পথে-ঘাটে ফেলে রাখত। এসব স্থান এখানকার বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত। মিরসরাইয়ে বেশ কয়েকটি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো— হিঙ্গুলী খালের পূর্ব পাশ বধ্যভূমি, কোটের পাড় বধ্যভূমি, নাপিত বাড়ি বধ্যভূমি, জোরারগঞ্জ উত্তর বাজার বধ্যভূমি, ছুটি খাঁ জামে মসজিদের দিঘির দক্ষিণ পাড় বধ্যভূমি, খৈয়াছড়া বধ্যভূমি ও মিরসরাই সদর বধ্যভূমি।
যুদ্ধের সময় বাঙালি সেনাসদস্যদের থাকা-খাওয়ার দায়িত্বে ছিল এ অঞ্চলের সাধারণ জনগণ। এছাড়া তারা শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করত। এ কাজগুলোকে সমন্বিত করতে বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপিত হয়েছিল। এসব ক্যাম্পের মধ্যে করেরহাট, বারৈয়াহাট, মিঠাছরা ও জোরারগঞ্জ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পাকবাহিনীর অত্যাচারের ফলে যারা চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে মিরসরাই দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত, তাদের জন্য মিরসরাই সদর, নিজামপুর কলেজ, মিঠাছরা, বাংলাবাজার, জোরারগঞ্জ এবং বুরবুরিয়াঘাটে শরণার্থী ক্যাম্প খোলা হয়।
মিরসরাইয়ের যুদ্ধের কার্যক্রমকে প্রধানত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়- দালাল নিধন, রাজাকার ও পাকবাহিনীর ক্যাম্প অপারেশন, পাকসেনা ও রাজাকারদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এম্বুশ এবং স্যাবোটেজ, যেমন- রেল লাইন ও ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া, গ্রেনেড ছোড়া ইত্যাদি। যুদ্ধের পাশাপাশি এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা জনগণের মনোবল চাঙ্গা করতে প্রচারধর্মী, সাংগঠনিক, স্থানীয় ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ এবং অন্য এলাকার যোদ্ধা ও যুদ্ধাহতদের সহায়তা করার কাজও করতেন।
২৬শে মার্চ পাকবাহিনী শুভপুর ব্রিজ পার হয়ে যাওয়ার সময় ব্রিজ পাহারা দেয়ার জন্য ১৩-১৪ জন সৈন্যকে সেখানে রেখে যায়। ৩-৪ দিন পর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে অপারেশন চালান। শুভপুর ব্রিজ অপারেশনএ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকীরা পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। ২০শে এপ্রিল ভোরে পাকসেনারা মিরসরাই থানা সদরে ঢুকে পড়ে। এ-সময় ক্যাপ্টেন অলি আহমদ তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে যুদ্ধ শুরু হয়। এ-যুদ্ধে পাকসেনারা পিছু হটে। এটি মিরসরাই থানা সদর প্রতিরোধযুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। ১০ই জুলাই সুফিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে কমান্ডার অহিদুল হকের নেতৃত্বে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করলে যুদ্ধ হয়। সুফিয়ার যুদ্ধ-এ কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জয়নাল আবেদীন, নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া, মোজাম্মেল, কেনু, মিহির চৌধুরী, নুরুদ্দিন, শাহ আলম (ধুম), সাহাবুদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, রবিউল হোসেন, শফি, নাসির, নুরুজ্জামান কামরাণী, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, জামশেদ আলম, হারুন ও ফয়েজ আহমদসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। ১৪ই জুলাই এ এফ এম নিজাম চৌধুরী আবুতোরাব বাজারে পেট্রলরত পাকবাহিনীর একটি দলের ওপর গ্রেনেড চার্জ করেন। এতে কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। এটি আবুতোরাব বাজার অপারেশন নামে পরিচিতি।
জুলাই মাসের প্রথমদিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্রাকযোগে পশ্চিম দারোগাহাট পর্যন্ত গিয়ে মিঠাছরা বামনসুন্দর-দারোগাহাট রোড সংলগ্ন কয়েকটি বাড়িতে হানা দেয়। ফেরার পথে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। এ অপারেশনে অংশ নেন অহিদুল হক, নুরুজ্জামান কামরাণী, দিদারুল আলম, এমদাদুল হক, মো. শফি, নুরুন্নবী গ্রুপ, কাশেম রাজার গ্রুপ এবং স্থানীয় জনগণ। এখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ১১ই জুলাই নিজাম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মিরসরাই থানা থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে অবস্থিত হেনাপুনি ব্রিজটি উড়িয়ে দেন। এ অপারেশনে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সলিমউদ্দিন এবং নুরুল ইসলাম। ১৮ এবং ২৩শে জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা এখানে মাইনের সাহায্যে মিরসরাই ও বড়তাকিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে রেল লাইনে অপারেশন করে ট্রেন লাইনচ্যুত করে দেন। দুটি অপারেশনই হয় এ এফ এম নিজাম চৌধুরীর নেতৃত্বে। এতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন শাহজাহান এবং শফিকুল ইসলাম।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা দক্ষিণ আমবাড়িয়া ঝিলপুর রেললাইনে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। নভেম্বরের শেষের দিকে পাকহানাদাররা আবুতোরাব বাজার আক্রমণ করতে আসলে এ এফ এম নিজাম চৌধুরী, সাহাবউদ্দিন এবং জাফরউল্লাহর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বাজারের পেছন দিক থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে হানাদাররা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সাহেরখালিতে নিজাম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনা ও রাজাকারদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া পাকসেনারা পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা খেওয়ারহাট বাজারে ঢুকে আগুন লাগাতে থাকে। খবর পেয়ে জাফরউল্লাহ গ্রুপ দ্রুত পেছন দিক থেকে তাদের আক্রমণ করে। অতর্কিত আক্রমণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পালানোর সময় একজন পাকসেনাকে জনতা ধরে ফেলে এবং তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
আবুতোরাব ভূঁইয়া হাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ কেনু, নির্মল দেবনাথ এবং গোলাম রসুল এতে নেতৃত্ব দেন। দীর্ঘ সময় ধরে থেমে-থেমে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনী আশপাশের ঘরবাড়িতে ব্যাপক লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার আক্রমণে একজন পাকসেনা নিহত হয়।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা ওসমানপুর বাজার লুট করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলে মাঈনউদ্দিন মোমিন, অহিদুল হক, দুলাল, নুরুজ্জামান কামরাণী, জয়নুল আবেদীন এবং শাহ এমরান গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে তাদের আক্রমণ করেন। ওসমানপুর বাজার যুদ্ধ-এ একজন মেজরসহ বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয় এবং তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাবাজারে টহলরত পাকসেনাদের আক্রমণ করলে যুদ্ধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পাকবাহিনী পিছু হটে। বাংলাবাজার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান শহীদ হন। জয়নুল আবেদীন, শাহ আলম, নুরুন্নবী, ওহিদুন্নবী প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। এছাড়া জুলাই মাসের প্রথমদিকে মিঠাছরা- বামনসুন্দর-দারোগাহাট যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে দিলাল মিস্ত্রী ও নজির আহমদ সহ ৭-৮ জন গ্রামীবাসী শহীদ হন।
মিঠানালার রাজাকার কমান্ডার মুজিবুল হকের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন করেন। এ অপারেশনে মুজিবুল হক এবং তেতাইয়া নামে দুজন রাজাকার নিহত হয়। এ এফ এম নিজাম চৌধুরী, শহীদ, লোকমান প্রমুখ এতে অংশ নেন। মঘাদিয়ার সংযোগকারী ম্যানশনগঞ্জ রোডে যাতায়াতের সময় প্রায়ই রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যরা আশপাশের জনগণকে উত্যক্ত করত। এ উৎপাত বন্ধ করার লক্ষ্যে অহিদুল হক, মফিজুল ইসলাম, অসীত বরণ মজুমদার, ইসহাক, আবুল হোসেন প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা তাদের ওপর আক্রমণ করলে তারা পালিয়ে যায়।
মস্তাননগর-চৈতন্যের হাটের পশ্চিমে রাজাকার বাড়িতে রাজাকাররা আবস্থান নিয়েছে জানতে পেরে শাহ আলম তাঁর গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এ বাড়ি আক্রমণ করেন। এতে তিনজন রাজাকার নিহত হয়। ঠাকুরদীঘি নামে পরিচিত পান্থার পুকুরপাড়ে টহলরত পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা আহত হয় এবং দ্রুত গাড়িসহ পালাতে সক্ষম হয়। অহিদুল হক, নিজামউদ্দিন, নুরুদ্দিন, শাহ আলম প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা পান্থার পুকুরপাড় যুদ্ধে অংশ নেন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় খুরশিদ আলম ভূঁইয়া এবং নাছির আহমদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মহালংকার পিতল মোহাম্মদ ভূঁইয়ার বাড়ির নিকটে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম টিপু, আবুল হোসেন ভূঁইয়া এবং আবদুল মোতালেব শহীদ হন। মহালংকার যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
পাকসেনারা দুর্গাপুর রোড দিয়ে যাতায়াতের সময় একদিন সকাল ৬টায় নিজাম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে সকাল ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে পাকবাহিনী পিছু হটে। দুর্গাপুর রোড যুদ্ধ-এ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। করেরহাট রোডে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন, ৩৭ জন সৈন্য এবং ৫০ জন রাজাকার নিহত হয়। করেরহাট রোডের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
দুর্গাপুর হাইস্কুলের মুজাহিদ ও রাজাকার ক্যাম্পটি ছিল স্থানীয় রাজাকারমুজাহিদদের শক্ত ঘাঁটি ও নির্যাতনকেন্দ্র। ১লা অক্টোবর আবুল কালাম আজাদ এবং এ এফ এম নিজাম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্পে সাঁড়াশি আক্রমণ করলে যুদ্ধ শুরু হয়। এতে রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনীর ১৩ জন সদস্য নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৭টি রাইফেল উদ্ধার করেন। দুর্গাপুর হাইস্কুল মুজাহিদ রাজাকার ক্যাম্প অপারেবশ- মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী শহীদ হন।
পাকবাহিনী শিকাজনার্দনপুর রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা এরফানুল হক, সাহাবুদ্দিন, নুরুল আফসার প্রমুখ দ্রুত চৈতন্যের হাটের কাছে গিয়ে এম্বুশ করেন। পাকসেনারা রেঞ্জে আসা মাত্রই তাঁরা আক্রমণ শুরু করেন। আক্রমণের মুখে পাকসেনারা সেখান থেকে পিছু হটে। মুক্তিযোদ্ধারা করেরহাট কেরৈলিয়া টিলার পাকক্যাম্প আক্রমণ করলে ২ জন পাকসেনা এবং ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ১০নং মিঠানালা ইউনিয়ন অফিস ছিল রাজাকারদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ও নির্যাতনকেন্দ্র। অহিদুল হক, এ এফ এম নিজাম চৌধুরী, আওয়াল এবং লোকমান হোসেন গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে এ ক্যাম্প আক্রমণ করলে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মিঠানালা রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ-এ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লোকমান শহীদ হন এবং জয়নাল, মোজাম্মেল ও হারুন আহত হন। বিপরীত পক্ষে রাজাকার কমান্ডার মুজিবুল হকসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার হতাহত হয়। আবুরহাটের পূর্বপাশে কমরিপোলের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনা ও রাজাকারদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে কয়েকজন রাজাকার হতাহত হয়। এতে অহিদ গ্রুপ, ফয়েজ আহমদ, নুরুল আফসার, শফি, সুবেদার রফিক (একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন), কবির আহমদ, কামালউদ্দিন ইউছুফ এবং সাইফুল ইসলামসহ ৪০-৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। এটি কমরিপোল যুদ্ধ নামে পরিচিত।
নিজাম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা সদমারদিঘির রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন করে রাজাকারদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলেন। এ অপারেশনে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন ফয়েজ আহমদ। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পাকহানাদার বাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী ৯ ও ১০ নং ইউপি সীমান্তে আমানটোলায় সড়ক দিয়ে এগিয়ে এলে মুক্তিযোদ্ধা ইরফানুল হক, মফিজ, সাহাবুদ্দিন ও নূরুল আবসার তাদের ওপর আক্রমণ চালান উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদাররা পিছু হটে এ এফ এম নিজাম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অপারেশন চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর আহত অবস্থায় পালিয়ে যায় (পরবর্তীতে মারা যায়)। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা লোকমান এবং শাহজাহান শহীদ হন।
২রা সেপ্টেম্বর নিজাম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মহামায়া ব্রিজটি বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন। এতে ব্রিজে পাহারারত বেশকিছু পাকসেনা নিহত হয় (এ খবর বিবিসি থেকে প্রচারিত হয়েছিল)। মুক্তিযোদ্ধারা মিরসরাই- মস্তান নগরের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ঘোড়ামারা রেল সেতুটি বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন। মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে এ অপারেশনে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, রবিউল হোসেন, নিজামউদ্দিন প্রমুখ। ক্যাপ্টেন রফিকের নেতৃত্বে বাঙালি সেনারা হিঙ্গুলি ব্রিজটি ধ্বংস করে দেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা অহিদুল হক, সাহাবুদ্দিন আহমদ প্রমুখ এতে সহায়তা করেন।
৮ই সেপ্টেম্বর গভীর রাতে নিজাম চৌধুরী তাঁর দল নিয়ে মিরসরাইয়ের পশ্চিমে রাজাকার ক্যাম্পটি আক্রমণ করেন। এতে ক্যাম্পের অধিকাংশ রাজাকার নিহত হয় এবং পাকবাহিনী ক্যাম্পটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এটি মিরসরাই রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন হিসেবে পরিচিত। মস্তান নগরে পাকসেনাদের ক্যাম্পের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। পরবর্তীতে মস্তান নগরে পাকসেনাদের সঙ্গে বাঙালি সৈনিকদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এতে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। মস্তান নগর যুদ্ধে বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে ইরফানুল হক (বিএলএফ গ্রুপ কমান্ডার), জাফর, জায়েদী, গোফরান, ফজলুল হক, কাজী সিরাজ, আমির হোসেন, কবির আহমদ ও ডা. জুলফিকারসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। ইসমাইল কার্পেট সংলগ্ন এলাকায় পাকসেনাদের সঙ্গে বাঙালি সেনাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এটি ইসমাইল কার্পেট এলাকার যুদ্ধ বলে পরিচিত। ১৩ই ডিসেম্বর মিরসরাই থানা অপারেশনএর মাধ্যমে মিরসরাই হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মোজাহার উল্লাহ, বীর উত্তম (পিতা শহীদ আলী আযম, ভালুকিয়া), মো. নূরুল হক ভূঁইয়া, বীর প্রতীক (পিতা সিরাজুল হক ভূঁইয়া, দুর্গাপুর), মোজাম্মেল হক, বীর প্রতীক (পিতা মনির আহমেদ, মধ্যম মায়ানি), কবির আহমেদ, বীর প্রতীক (পিতা বদিউর রহমান, মোবারকঘোনা) ও সিরাজুল হক, বীর প্রতীক (পিতা ছামছুল হক ভূঁইয়া, মধ্যম ওয়াহিদপুর)।
মিরসরাই উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- সিরাজুল হক, বীর প্রতীক (৪ঠা আগস্ট নকশী বিওপি-র যুদ্ধে শহীদ), রবিউল আনোয়ার (পিতা শাহজাদা চৌধুরী, মিঠানালা ; বিলোনিয়া সীমান্তে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবদুল জলিল (পিতা মো. মফিজুর রহমান, মহালংকা; কুমিরা ঘাটঘরে ১৪ই ডিসেম্বর সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল হোসেন ভূঁইয়া (পিত আবদুল লতিফ, মহালংকা; ৪ঠা সেপ্টেম্বর এম্বুশ করতে গিয়ে নিজ গ্রামে শহীদ), মো. শাহজাহান (পিতা আবদুল লতিফ ভূঁইয়া, মঘাদিয়া; বালিগঞ্জে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মুন্সি মিয়া (পিতা শেখ আহমদ, দুর্গাপুর; মে মাসে শুভপুরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), তাজুল ইসলাম (পিতা জাকির আহমদ, মান্দারবাড়িয়া ; মে মাসে শুভপুরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আজিজুল হক (পিতা আবুবকর মিস্ত্রী, পশ্চিম মলিয়াইশ; ৭ই নভেম্বর পশুরামে শৈলারদিঘিতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল কালাম (পিতা ডা. জামাল উল্লাহ, মঘাদিয়া; ১৪ই ডিসেম্বর কুমিরা ঘাটঘরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মো. নূরুল হুদা (পিতা ডা. আবদুল গণি, পূর্ব দুর্গাপুর; চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মীর কাশেম আলীর টর্চার সেন্টার ডালিম হোটেলে ধরে নিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করে), মাহাবুব আলম (পিতা মো. আমান উল্লাহ, পূর্ব দুর্গাপুর; মিরসরাই স্টেশন রোডের লোহারপুল এলাকায় শহীদ), জহির আহমদ (পিতা সৈয়দ আহমদ, পূর্ব দুর্গাপুর; মিরসরাই স্টেশন রোডের লোহারপুল এলাকায় শহীদ), শফিকুল ইসলাম (পিতা ছালামত উল্লাহ, আবুনগর; রাঙ্গামাটিতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), নূরুল গনি (পিতা আহমদ ছোবহান, মান্দারবাড়িয়া; শুভপুরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মোহাম্মদ মোস্তাফা (পিতা আলী আহমদ, মধ্যম মঘাদিয়া; নভেম্বর মাসে শেখেরতালুক গ্রামে শহীদ), ফরিদ আহমদ চৌধুরী (পিতা বজলুস ছোবহান চৌধুরী, হাজীসরাই; ২৮শে সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর হাইস্কুলের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল কালাম (পিতা ফয়েজ আহমদ, পূর্ব মায়ানী; ১৪ই নভেম্বর কুমিরায় সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবু তাহের (পিতা ছিদ্দিক আহমদ, সাহেরখালী; ২৫শে মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শহীদ), শাহ আলম (পিতা বজলুর রহমান, ডোমখালী; হাদি ফকিরহাটে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল কালাম (পিতা ছালামত উল্লাহ, কাটাছড়া; সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), কামাল উদ্দিন খন্দকার (পিতা বদিউর রহমান, পূর্ব মায়ানী; ১৪ই ডিসেম্বর কুমিরায় সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল বশর (পিতা ওবায়দুল হক, মঘাদিয়া; পশুরামের শৈলারদিঘিতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মো. মোস্তফা (পিতা মুজিবুল হক, তালবাড়িয়া), সফিউল্লাহ (দূর্গাপুর; মে মাসে শুভপুর ব্রিজে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মো. লোকমান (পিতা বজলে সোবহান, তারাকাটিয়া; সুফিয়া রোডে শহীদ), সিরাজুল হক (পিতা সামশুল হক, ওয়াহেদপুর; সেনাবাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন, সিরাজগঞ্জে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল মনসুর (পিতা আবদুচ সাত্তার, তুলাবাড়িয়া; শান্তিরহাট বাজারে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), হায়তুল ইসলাম (পিতা শেখ আহমদ, উত্তর হাইতকান্দি; ঈশ্বরদীতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মোস্তাফিজুর রহমান (পিতা মতিয়ার রহমান, ধুম; ১৭ই জুন বাংলাবাজার সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), জাকির হোসেন (পিতা বজলুর রহমান, ছত্তরুয়া; ৭ই নভেম্বর গুতুমা বিলোনিয়া সীমান্তে শহীদ), রফিকুল ইসসলাম (পিতা মকবুল আহমদ, ছত্তরুয়া; মার্চ মাসে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় শহীদ), সফিউল আলম (পিতা জহির আহমদ, লুদ্দখালি; জুন মাসে বেগুনছড়িতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মুজিবুল হক (পিতা আহমদ ছোবহান, তারাকাটিয়া; অক্টোবর মাসে নিজ এলাকায় শহীদ), নূরুল ইসলাম (পিতা হাজী আবদুস ছাত্তার, উত্তর ভূঁইয়া; কুমিল্লা সেনানিবাসে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আমীর হোসেন (পিতা শেখ আহমেদ, আজমপুর; মে মাসে শুভপুরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল কাশেম (পিতা আবদুল গণি মুন্সি, পরাগপুর; ২৬শে মার্চ যশোর ক্যান্টেনমেন্টে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), শাহ আলম (পিতা আহমদুর রহমান, উত্তর সোনাপাহাড়; পশুরামে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবদুল মোতালেব (পিতা মকবুল আহমদ মিস্ত্রী, মহালংকা; এম্বুশ করতে গিয়ে নিজ গ্রামে শহীদ), নায়েক সাইফুল্লা চৌধুরী (পিতা এনায়েত উল্লাহ, কচুয়া; সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), নূরুল ইসলাম (পিতা আলী আজম ভূঁইয়া, মিঠানালা; ইপিআর বাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), নায়েক সুবেদার সিদ্দিক আহমদ (পিতা বজলুর রহমান, মোবারকঘোনা; ইপিআর বাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), গোলাম রব্বানী (পিতা রহিম উল্লাহ, পশ্চিম মায়ানী; মে মাসে শুভপুর ব্রিজে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), জয়নাল আবেদীন (পিতা লোকমান মিয়া, ওসমানপুর; সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আলী আহমদ (পিতা ধন মিয়া, মধ্যম মুরাদপুর; সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), ওয়াহিদুর নবী (পিতা আবদুল ওয়াসু চৌধুরী, মোবারকঘোনা; সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), আবুল খায়ের (পিতা আবদুর রহমান, পূর্ব ডোমখালী; সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মোহাম্মদ আমীন উল্লাহ (পিতা আজহার উল্লাহ, অলিনগর; সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), সিপাহী শাহ আলম (পিতা ছালে আহমদ, মঘাদিয়া; সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ) এবং সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী (পিতা জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, শেখেরতালুক; অক্টোবর মাসে মিঠাছরায় শহীদ)।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্র্যাংক রোডের পাশে মিরসরাই স্টেশন রোডে লোহারপুল সংলগ্ন উত্তর তালবাড়িয়া বধ্যভূমিতে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া সৈদালী গ্রাম গণহত্যায় শিকার ২৩ শহীদের একটি নামফলক রয়েছে। [মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড