মিরসরাই থানা সদর প্রতিরোধযুদ্ধ (মিরসরাই, চট্টগ্রাম)
মিরসরাই থানা সদর প্রতিরোধযুদ্ধ (মিরসরাই, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২০শে এপ্রিল। এ-যুদ্ধে দেড়শতাধিক পাকসেনা হতাহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার সিদ্দিক ও ল্যান্স নায়েক কালাম শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মিরসরাই থানা প্রতিরোধযুদ্ধ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেনারা তখন চট্টগ্রাম থেকে দূরে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছিলেন। ক্যাপ্টেন অলি আহমদের নেতৃত্বে একদল বাঙালি বিদ্রোহী সেনা মিরসরাই থানা সদরে ঘাঁটি স্থাপন করেন। এখানে তাঁরা দুভাগে ভাগ হয়ে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করেন। সামনে ও পেছনে ছিল দুটি ডিফেন্স পজিশন। সাধারণত পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে ভোরের দিকে এ অভিজ্ঞতা থাকায় ক্যাপ্টেন অলি মুক্তিযোদ্ধাদের ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধাবস্থায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।
২০শে এপ্রিল খুব ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী মিরসরাই থানা সদরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। সুবেদার সিরাজুল ইসলাম ও তাঁর এক সঙ্গীর নিকট থেকে এ খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন অলি মুক্তিযোদ্ধাদের হানাদারদের ওপর আক্রমণের নির্দেশ দেন। অলি আহমেদ নিজেও একটি রাইফেল থেকে হানাদারদের ওপর আঘাত হানেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আরো পাকিস্তানি সৈন্য এ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। সারাদিনব্যাপী এ-যুদ্ধে দেড়শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার সিদ্দিক এবং ল্যান্স নায়েক আবুল কালাম (পিতা ছালামত উল্লাহ) শহীদ হন। সামান্য অস্ত্র ও লোকবল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবেলা করা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে এটিই ছিল মুখোমুখি লড়াইয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত। যুদ্ধ শেষ হলে মুক্তিযোদ্ধারা এ অবস্থান ত্যাগ করে মস্তাননগরে চলে আসেন। এ প্রতিরোধযুদ্ধে মিরসরাইয়ের কমান্ডার অহিদুল হক, নিজাম চৌধুরী, ওয়ারত উল্লাহ, আবু তাহের, মাঈনুদ্দিন মোমিন, নিজামউদ্দিন চৌধুরী, সিরাজুল মোস্তফা, সালাউদ্দিন আহমদ, নায়েক ফয়েজ আহমদ, কাসেম রাজা প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড