বীর প্রতীক মিজানুর রহমান
মিজানুর রহমান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৩) অনারারি ক্যাপ্টেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্লাটুন কমান্ডার। তিনি ১৯৪৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল খালেক খান এবং মাতার নাম মাহফুজা খানম|
মিজানুর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনারারি ক্যাপ্টেন ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তাঁর কর্মস্থল ছিল জয়দেবপুর সেনানিবাসে। অবাঙালি পাকসেনাদের বিমাতাসুলভ আচরণে তিনি বিক্ষুব্ধ ছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-এর নিরঙ্কুশ বিজয়ে তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ে প্রচণ্ড আশাবাদী হয়ে ওঠেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পূর্ব বাংলায় -অসহযোগ আন্দোলন এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের দিকনির্দেশনামূলক ঐতিহাসিক ভাষণ তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করে। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি ও বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনিকদের ওপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ৩ নম্বর সেক্টর ও পরবর্তীতে ‘এস’ ফোর্সে যুক্ত হয়ে যুদ্ধ করেন। ৩০শে নভেম্বর থেকে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আখাউড়ার আজমপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এখানকার যুদ্ধে কোম্পানি অধিনায়ক ক্যাপ্টেন বদিউজ্জামানসহ ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ২০ জন আহত হন। অপরপক্ষে ২০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং অনেকে আহত হয়। বেশকিছু পাকসেনা এখানে মুক্তিযোদ্ধাকের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ-যুদ্ধে মিজানুর রহমান অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মিজানুর রহমানের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নূরজাহান বেগম। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড