You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাহমুদপুর যুদ্ধ (মেলান্দহ, জামালপুর)

মাহমুদপুর যুদ্ধ (মেলান্দহ, জামালপুর) সংঘটিত হয় নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এতে কয়েকজন সাধারণ মানুষ নিহত হন।
মেলান্দহের শেষ প্রান্তে এবং মাদারগঞ্জের পার্শ্বে বিনেতটংগী হাই স্কুল মাঠে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্পে আলম কোম্পানির ৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন অন্যদিকে মাহমুদপুর ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ি মাটিলা ব্রিজের কাছে ছিল পাকবাহিনীর ক্যাম্প। এখানে পাঞ্জাবি মিলিশিয়া, রাজাকার ও -আলবদর বাহিনীর ৪৬ জন সৈনিক ছিল। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা বানিয়াবাড়ি মাটিলা ব্রিজের ওপর পাহারারত পাকসেনাদের ওপর এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করেন। অতর্কিত এ আক্রমণে বেশ কয়েকজন পাকসেনা ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাকিরা পজিশন নিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন এবং পাকসেনারা গুলি বর্ষণ করতে-করতে মাহমুদপুর বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনাদের গুলিতে মানি সরকারসহ কয়েকজন সাধারণ মানুষ নিহত হন। মাহমুদপুর বাজারে প্রবেশ করে পাকসেনারা বহু দোকানপাট ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। আলম কোম্পানির নেতৃত্বে মেলান্দহ হাই স্কুলের পশ্চিম পাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধা আ. করিম এলএমজি দিয়ে কয়েকটি ব্রাশ ফায়ার করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে কিছুক্ষণের মধ্যে রাজাকার কমান্ডার আ. হক সরকারের ভাই মোজাম্মেল হক মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয় এবং গোলাগুলি বন্ধ করার অনুরোধ জানায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তাব অনুযায়ী মিলিশিয়া, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা মেলান্দহ থানায় অস্ত্র জমা দিয়ে মেলান্দহ হাই স্কুলে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেজাউল করিম (নলছিয়া, মাদারগঞ্জ), সালাউদ্দিন (আদিইপত, মেলান্দহ), হায়দার আলী (নলছিয়া, মাদারগঞ্জ), ইউসুফ (দেওলাবাড়ি, মেলান্দহ), লোকমান হাকিম (কাজলা, ইসলামপুর) প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা।
নভেম্বর মাসে বদি কোম্পানির নেতৃত্বে মাহমুদপুর বানিয়াবাড়িতে আরো একটি যুদ্ধ হয়। ঐদিন স্থানীয় চেয়ারম্যান লেবু মিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দাওয়াত দেন। ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হন। এ খবর পেয়ে শতাধিক আলবদর, রাজাকার পাকসেনা লেবু চেয়ারম্যানের বাড়িতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এ-যুদ্ধে পাকসেনাদের ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
১০ই নভেম্বর সকালে রাজাকার কমান্ডার আ. হক সরকার এক চিঠিতে বিনেতটংগী স্কুলের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দেয়। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদপুর পয়লার ব্রিজে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পর ব্রিজের কাছে ২০ জন পাকসেনা নৌকা দিয়ে নদী পার হচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী তাদের লক্ষ করে এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করেন। এতে ২০ জন পাকসেনাই নিহত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র- থেকে এ খবর ঐদিনই প্রচারিত হয়। এরপর পাকবাহিনী তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করতে থাকে। পেছনে ছিল নদী। অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা রমেজ উদ্দিন ও আ. কুদ্দুছ শহীদ হন। [এস এম জুলফিকার আলী লেবু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!