মিঠাছরা-বামনসুন্দর-দারোগাহাট যুদ্ধ (মিরসরাই, চট্টগ্রাম)
মিঠাছরা-বামনসুন্দর-দারোগাহাট যুদ্ধ (মিরসরাই, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকে। এ-যুদ্ধে ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে দিলাল মিস্ত্রি ও নজির আহমদসহ ৭-৮ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
মিরসরাই উপজেলায় এ-যুদ্ধ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জুলাই মাসের প্রথমদিকে একদিন খুব ভোরে পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্রাকযোগে পশ্চিম দারোগাহাট পর্যন্ত গিয়ে মিঠাছরা- বামনসুন্দর গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে হানা দেয়। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যদের ফেরার পথে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষ্যে তাঁরা দিলাল মিস্ত্রির বাড়িতে অবস্থান গ্রহণ করেন। ট্রাকযোগে ফেরার পথে পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা অহিদুল হক ও শাহ আলম (ধুম) জোড়পুকুর পাড়ে একটি এন্টিট্যাংক মাইন পুঁতে রাখেন। পাকসেনারা ট্রাক থেকে নেমে আক্রমণ করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধা শফি ও নুরুজ্জামান গোপনে তেলের ট্যাঙ্কের ভেতর বালু ঢেলে ট্রাকটি বিকল করে দেন। ট্রাক বিকল হওয়ায় কিছু সময় পর ২০-২৫ জন পাকিস্তানি সেনা হেঁটে ফেরত আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ না করে নিরাপদে যেতে দেন। এবার মুক্তিযোদ্ধারা কৌশল পরিবর্তন করে রমেশ মহাজনের বাড়িতে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী অচল হয়ে যাওয়া ট্রাকটি নিয়ে যেতে একটি ক্রেন নিয়ে আসতে থাকে। জোড়পুকুর পাড়ে আসামাত্রই মাইনের আঘাতে ক্রেনটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এতে ক্রেনে থাকা ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পাকিস্তানি বাহিনীর আরেকটি দল ঘটনাস্থলে আসে এবং জোড়পুকুর পাড়ের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে তারা দিলাল মিস্ত্রি (চিত্র পরিচালক মোস্তফা মাহমুদের পিতা) ও নজির আহমদসহ ৭-৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এরপর বিকল ট্রাকটি উদ্ধারের জন্য সামনে এগুতে থাকে। দারোগাহাট বাজারে পৌঁছানোর পূর্বেই অহিদ গ্রুপ ও কাসেম রাজার গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ-যুদ্ধ চলে। ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পাকিস্তানি সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা গ্রুপটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক এ অপারেশনটি পরিচালনা করে। এ আপরেশনে অংশগ্রহণ করেন কমান্ডার অহিদুল হক গ্রুপের নুরুজ্জামান কামরানী, দিদারুল আলম, এমদাদ হক, মো. শফি, নুরুন্নবীসহ কাসেম গ্রুপের কয়েকজন সদস্য ও স্থানীয় জনগণ। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড