মাসদাইর কবরস্থান প্রতিরোধযুদ্ধ (নারায়ণগঞ্জ সদর)
মাসদাইর কবরস্থান প্রতিরোধযুদ্ধ (নারায়ণগঞ্জ সদর) সংঘটিত হয় ২৭শে মার্চ শনিবার দুপুর ১২টায়। এটি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা উপজেলার মানুষের প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ। এ-যুদ্ধে প্রতিরোধযোদ্ধা দারোগা সবুর শহীদ হন এবং মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন।
২৫শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামসুজ্জোহা ফতুল্লা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেন যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যেন নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে না পারে। এ নির্দেশ পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় তরুণরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেয়। এলাকার সাধারণ জনগণও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ২৬শে মার্চ রাত ১১টার দিকে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ-এর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে নিয়ে মাসদাইর কবরস্থানের তিনদিকে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করার নির্দেশ দেন। তিনি নিজে একটি দল নিয়ে মাসদাইর গ্রামের আবুল খায়েরের বাড়ির পাশে অবস্থান নেন। অপর দলটি কবরস্থানের পশ্চিম পাশে এবং তৃতীয় দলটি জামতলার পূর্ব- উত্তরে রেললাইনের কাছাকাছি অবস্থান নেয়। বাবু সারোয়ার, কচি, ফয়েজসহ শতাধিক মানুষ নিয়ে তৃতীয় দলটি রাত ১১.৩০টার দিকে চাঁনমারির কাছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন উপড়ে ফেলে সেখানেই অবস্থান নেয়। ২৭শে মার্চ শনিবার দুপুর ১২টায় অবাঙালিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ট্যাঙ্ক বহর নিয়ে গুলি ছুড়তে-ছুড়তে পঞ্চবটী হয়ে মাসদাইর গ্রামের দিকে এক নাগাড়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পাশাপাশি তারা ব্যারিকেডের গাছ ট্যাংক দিয়ে ঠেলে রাস্তা থেকে সরাতে থাকে। সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে কবরস্থানের সামনে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা ব্যারিকেড তৈরি করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকেন। পাকিস্তানি সেনারা ট্যাঙ্ক ও .ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যারিকেডের সামনে থামে এবং ট্যাংক থেকে শেল ও মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। গোপীনাথ দাস, জাহাঙ্গীর খোকা, রাসু, আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, খোরশেদ আলম দুদু, আশরাফ ও সাহাবুদ্দীন আহম্মেদসহ ছাত্রলীগের কর্মীবৃন্দ, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও আনসার সদস্যরা এ-যুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানি সেনাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্রের জবাবে মুক্তিযোদ্ধারা দোনলা বন্দুক দিয়ে ১ ঘণ্টার মতো যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে দারোগা সবুর শহীদ হন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে গেলে তাঁরা পিছু হটে জামিল ডক ইয়ার্ডের মালিক জসিমুল হকের বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির পেছনে ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। মাসদাইর প্রতিরোধযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড