You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম মাসরুরুল হক সিদ্দিকী

মাসরুরুল হক সিদ্দিকী, বীর উত্তম (জন্ম ১৯৪১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কমল সিদ্দিকী নামে সমধিক পরিচিত তিনি ১৯৪১ সালে নড়াইল জেলার সদর উপজেলার হবখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জহুর আহমেদ এবং মাতার নাম ওয়াজেদা বেগম৷ মেধাবী ছাত্র কমল সিদ্দিকী কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বুয়েট) থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে এমএস ডিগ্রি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
তৎকালীন সংস্কৃতি অঙ্গনে পরিচিত মুখ কমল সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সকল আন্দোলন ও সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে গণআন্দোলন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। কমল সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। এদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যেমন- হাসান ইমান, ওয়াহিদুল হক প্রমুখের সঙ্গে তিনি ২রা এপ্রিল ঢাকা ত্যাগ করেন এবং ৪ঠা এপ্রিল তৌহিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম-এর সহায়তায় সীমান্ত অতিক্রম করে কলকাতা পৌঁছান। এরপর ভারতের চাকুলিয়া মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ওয়ার ফোর্স গঠন করা হলে তিনি লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদায় কমিশন প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরের খন্দকার নাজমুল হুদা, বীর বিক্রম-এর অধীনে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে- সবের মধ্যে ভাটিয়াপাড়ার যুদ্ধ – বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিক থেকেই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশন ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটি। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা চূড়ান্ত বিজয়ের কাছাকাছি এলেও ভাটিয়াপাড়ার পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটি দখলে আনতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ভাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা তখনো আত্মসমর্পণ করেনি। তাই মুক্তিবাহিনী তাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। ১৬ই ডিসেম্বর নাজমুল হুদার নেতৃত্বে কমল সিদ্দিকীসহ তাঁর বাহিনী ভাটিয়াপাড়ায় যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয়। সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে ১৬ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকসেনাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ১৯শে ডিসেম্বর পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে। ১৮ই ডিসেম্বর শত্রুসেনাদের গুলিতে কমল সিদ্দিকী মারাত্মকভাবে আহত হন। কলকাতার সম্মিলিত সামরিক পাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার মাসরুরুল হক সিদ্দিকীকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৭৪, খেতাবের সনদ নং ৬৭)। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সৈয়দা রোকেয়া সিদ্দিকী। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!