You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মাহফুজুর রহমান খান

মাহফুজুর রহমান খান, বীর প্রতীক (১৯৫৪- ১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৪ সালের ১২ই এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলাধীন হরিরামপুর উপজেলার পিপুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জিয়ারুল হক খান ও মাতার নাম শামসুন্নাহার খানম ফিরোজা। মাহফুজুর রহমান খান দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে জয়দেবপুরে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে মেকানিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মার্চ মাসের -অসহযোগ আন্দোলন-এ তিনি জয়দেবপুরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মাহফুজুর রহমান খান প্রথমে ২য় ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ভারতের মেলাঘরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩নং সেক্টরে যোগদান করে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি নিজ এলাকা মানিকগঞ্জে গিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর সিও (সার্কেল অফিসার) কার্যালয় ছিল বারৈখালীতে। সেখানে অবস্থিত পাকবাহিনীর ক্যাম্পে সেনাসদস্য, ইপিআর ও রাজাকার বাহিনীর ১০০ জনের মতো সদস্য ছিল। ইপিআরদের অধিকাংশ ছিলেন বাঙালি। মাহফুজুর রহমান গোপনে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে লাল মিয়া নামে একজন প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্প আক্রমণ করলে সকল বাঙালি ইপিআর সদস্য পাকবাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেবে।
এরপর ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৫০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিকেল ৪টার দিকে মাহফুজুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধারা ওয়ারলেস অফিস থেকে কাঠের সেতু পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার পূর্বপার্শ্বে অবস্থান নেন। রাইফেল, এসএলআর, গ্রেনেড ইত্যাদি সাধারণ অস্ত্র নিয়েই মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ শুরু করেন। সঙ্গে-সঙ্গে ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগদান করেন। ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যদের পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকবাহিনী অল্পক্ষণেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। মুখোমুখি যুদ্ধের এক পর্যায়ে ওয়ারলেস স্টেশনে থাকা পাকসেনারা পিছু হটে সিও অফিসের মূল ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তখন মাহফুজুর রহমান কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে ওয়ারলেস অফিস ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হন। এ অবস্থায় পাকসেনারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলে সঙ্গে-সঙ্গে সেখানে আগুন ধরে যায় এবং মাহফুজুর রহমান ও বজলুল হুদার (পান্নু) দেহ ঝলসে যায়। তাঁদের উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পথে মাহফুজুর রহমান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান ও আত্মোৎসর্গের জন্য মাহফুজুর রহমান খানকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!