You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম মাহবুবউদ্দিন আহমদ

মাহবুবউদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪৫) মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী। তাঁর পিতার নাম আলতাফ উদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম জেবুন্নেছা বেগম। ১৯৪৫ সালের ৩রা জানুয়ারি বরিশাল শহরের আমানতগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদি নিবাস মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার রব নগরকান্দি গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ও ১৯৬৫ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি দুবছর পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ সুপার নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ঐদিন রাতেই তিনি বিদ্রোহ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ২৯শে মার্চ তিনি তাজউদ্দীন আহমদ- ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে ঝিনাইদহ থেকে ভারত সীমান্তে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। ১৭ই এপ্রিল তিনি মুজিবনগরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানে নেতৃত্ব দেন।
মাহবুবউদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ৮ নং সেক্টরের ভোমরা সাব- সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। শুরুতে ঝিনাইদহে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একই সময়ে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ ও বিষয়খালীতে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেন। মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতক্ষীরার ভোমরা বাঁধের যুদ্ধ-এ ৯ নম্বর পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে পরাস্ত এবং এর বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করেন। সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা, কলারোয়া ও বালিয়াডাঙ্গার যুিদ্ধে তিনি সফল নেতৃত্ব দেন। ২০শে সেপ্টেম্বর বালিয়াডাঙ্গার যুদ্ধ-এ তিনি শত্রুর ছোড়া গুলিতে আহত হন। তিনি ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরে ব্যাংক ও ট্রেজারি থেকে সংগৃহীত চারকোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা এবং ২৫ কেজি সোনা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে প্রশংসিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ২১৩, খেতাবের সনদ নং ১৩৮)। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ২৮শে জানুয়ারি মাহবুবউদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপ-সচিব হিসেবে যোগদান করেন। দুমাসের মাথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর চাকরি স্থানান্তরিত হয়। জুন মাসে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি তাঁকে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের হত্যাযজ্ঞের পর ঐদিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। দুবছরের অধিক সময় কারাগারে আটক থেকে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে তিনি মুক্তিলাভ করেন। বর্তমানে তিনি শিপিংসহ নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয় আছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম নুপুর আহমদ। মাহবুব দম্পতির দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!