You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইতালীয় ক্যাথলিক ধর্মযাজক মারিও ভেরোনিস

মারিও ভেরোনিস (১৯১২-১৯৭১) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইতালীয় ক্যাথলিক ধর্মযাজক। দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাসকারী এ ইতালীয় ধর্মযাজক যশোর শহরের গির্জায় পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের গুলিতে প্রাণ হারান। গির্জায় আশ্রয় নেয়া মানুষদের রক্ষার জন্য পাকিস্তানি সৈন্যদের দিকে এগিয়ে গেলে হন্তারকরা তাঁর বুকে গুলি করলে তিনি সঙ্গে-সঙ্গে প্রাণ হারান। এদিন তারা গির্জার ভেতরে আরো ৬ জন আশ্রয় নেয়া নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করায় ফাদার মারিও ভেরোনিসকে Friends of Liberation War সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। মারিও ভেরোনিস ১৯১২ সালের ১৯শে নভেম্বর ইতালির ট্রেন্ট-র রভারতো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে প্রবল ধর্মীয় অনুভূতি ও মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগের আগ্রহ জন্ম নেয়। ২৫ বছর বয়সে তিনি তাঁর শহরের ক্যাথলিক একশন ইয়ুথ-এর সভাপতি হন এবং মিশনারিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৮ সালে ক্যাথলিক যাজক হন। এর ৭ বছর পর ১৯৫৫ সালে তিনি মিশনারি দায়িত্ব পালনের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায় আসেন। দীর্ঘদিন তিনি খুলনা ও যশোর এলাকায় ক্যাথলিক ধর্মের প্রচার ও আর্ত মানবতার সেবায় নানা ধরনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
১৯৭১ সালের এপ্রিলে মারিও ভেরোনিস যশোর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী শিমুলিয়া চার্চে ছিলেন। পাকিস্তানিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অনেক লোক মার্চের শেষ ও এপ্রিলের শুরুতে যশোর শহরের ক্যাথলিক চার্চে আশ্রয় নেয়। তাদের সেবা করার প্রয়োজনে মারিও তাঁর একজন সহযোগী মিশনারিকে নিয়ে শিমুলিয়া থেকে ৩রা এপ্রিল যশোর শহরের চার্চে আসেন। ৪ঠা এপ্রিল চার্চে বিশেষ ধর্মীয় আলোচনা ও প্রার্থনার ব্যবস্থা ছিল। চার্চের স্বাভাবিক কার্যক্রম যখন চলছিল, তখন কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা চার্চে হামলা করে। চার্চে আশ্রয় নেয়া মানুষরা ছিল তাদের লক্ষ্য। অস্ত্রহাতে পাকসেনারা চার্চের ভেতরে ঢুকলে মারিও বুক উঁচিয়ে সামনে এগিয়ে যান। তৎক্ষণাৎ হানাদার সৈন্যরা তাঁকে লক্ষ করে গুলি করে। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে সঙ্গে-সঙ্গে তিনি লুটিয়ে পড়েন। আর্ত মানবতার সেবার জন্য যিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন, সেই ফাদার মারিও ভেরোনিস বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন। কেবল তাঁকে নয়, হন্তারকরা সেদিন চার্চে আশ্রয় নেয়া আরো ৬ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। প্রথমে শহরের চার্চে মারিওর শেষকৃত্য হয়। পরে তাঁর দেহাবশেষ শিমুলিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। এখন প্রতিবছর ফাদার মারিও ভেরোনিসকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ হিসেবে স্মরণ ও তাঁর স্মৃতি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ ফাদার মারিও ভেরোনিসকে Friends of Liberation War (মরণোত্তর) সম্মাননা প্রদান করে। বাংলাদেশের এ বন্ধুর স্মৃতি এদেশের মানুষের হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!