মালিগ্রাম গণহত্যা (কানাইঘাট, সিলেট)
মালিগ্রাম গণহত্যা (কানাইঘাট, সিলেট) ১৯শে আগস্ট সংঘটিত হয়। এতে ১৯ জন গ্রামবাসী নির্মম হত্যার শিকার হন। তাদের গণকবর দেয়া হয়।
সিলেট জেলা শহর থেকে পূর্বদিকে ভারত সীমান্ত ঘেঁষে কানাইঘাট উপজেলা। কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি নিভৃত পল্লি মালিগ্রাম। কানাইঘাট থেকে একটি সড়ক এ গ্রামের পাশ দিয়ে দরবস্ত পর্যন্ত চলে গেছে। সিলেট শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এটিই ছিল একমাত্র সড়কপথ। মালিগ্রামের পাশে এ সড়কের ওপর নির্মিত বাজারবন্দ ও নাপিতখাল সেতুতে রাজাকার রা সর্বক্ষণ সশস্ত্র পাহারায় থাকত। তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাঝে-মাঝে মালিগ্রামে হানা দিয়ে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি লুট করত এবং মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালাত। সীমান্তের ওপারে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা এ সংবাদ জানতে পেরে বাজারবন্দ সেতু পাহারায় নিয়োজিত রাজাকারদের ওপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে ১৮ই আগস্ট রাতে মালিগ্রামের কুতুবউদ্দিন, হাবিব আলী ও মবশ্বর আলীর বাড়িতে এসে অবস্থান নেন। অতঃপর গভীর রাতে সেততুে পাহারারত রাজাকারদের ওপর আক্রমণ চালান। রাজাকাররাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে দুজন রাজাকার নিহত হয়। পরদিন ১৯শে আগস্ট কানাইঘাট ডাকবাংলোতে স্থাপিত পাকহানাদার ক্যাম্প থেকে হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের একটি বিশাল গ্রুপ মালিগ্রামে প্রবেশ করে ১৯ জন গ্রামবাসীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এদিন গণহত্যায় মালিগ্রামের শহীদরা হলেন- আরব আলী, ইউসুফ আলী, কনাই মিয়া, ফরমান আলী, তোতা মিয়া, মুর্শেদ আলী, ফকির আলী, ওয়াজিদ আলী, আবদুল ওহাব ফকির, ইছাক আলী, আবদুল মতালিব, জহির উদ্দিন ওরফে কালা, তবারক আলী, কালা মিয়া, শওকত আলী, মোবারক আলী, জমির উদ্দিন, আবদুর রশিদ ও শামসুল হক। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড