You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে মানিকছড়ি উপজেলা (খাগড়াছড়ি)

মানিকছড়ি উপজেলা (খাগড়াছড়ি) পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- এই ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই সারাদেশের মতো এ উপজেলার মানুষও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে।
মানিকছড়িতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী সবির আহম্মদ। তিনি বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এ অঞ্চলের সার্কেল প্রধান মংরাজা মং প্রুসাইন চৌধুরী পাকবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর সহযোগীদের অন্যতম ছিলেন থৈইচাই মারমা। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিসেনাদের রান্না করে খাওয়াতেন এবং পথ দেখাতেন। এছাড়া অংগ্য দেওয়ান মুক্তিযোদ্ধাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করতেন। মানিকছড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে রামগড়ে এবং পরবর্তীতে ভারতের উত্তরখণ্ড রাজ্যের দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নেন।
এ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন মো. শফিউল আলম চৌধুরী। তাঁর সহযোগী ছিলেন আক্তার আহমেদ, মো. শাজাহান, মো. হাফিজুল্লা, মাস্টার মো. তাজুল ইসলাম, মো. হাবিব, মো. আব্দুল ছোবাহান, মো. কুদ্দুস আলী, মো. আলী হোসেন, সুকোমল নাথ, মো. আব্দুল হামিদ, পূর্ণ চন্দ্ৰ নাথ, মো. আবুল কালাম, মো. হোসেন, মো. দুদুমিয়া খন্দকার, মো. রুহুল আমিন, রুস্তম আলী, বদিউল আলম, ইসরাফিল, মো. আবদুল মজিদ, নিতাই চন্দ্র দাশ, আব্দুল হালিম, আমিন উদ্দিন, আবু আহম্মদ মোল্লা, শফিউল্লা, আনু মিয়া, আয়াত আলী, আবদুল মান্নান, বাবুল কান্তি দাশ, মো. ছিদ্দিকুর রহমান, মো. মোকলেছুর রহমান, ঝন্টু কুমার ঘোষ, ফরিদ মিয়া, এবাদ উল্লাহ ও মো. আমান উল্লাহ।
পাকবাহিনী যাতে সহজে মানিকছড়িতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা যোগ্যাছালা বাজারে অবস্থান নিয়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ফলে পাকবাহিনী এ অঞ্চলে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
পাকহানাদার বাহিনী ফটিকছড়ি হয়ে পেকুয়া চা বাগান ও যোগ্যাছালা বাজারে হামলা চালিয়ে প্রতিরোধ ভেঙ্গে দিয়ে মানিকছড়িতে অনুপ্রবেশ করে এবং যোগ্যাছালায় ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর তারা রাজবাড়িতে এসে রাজপরিবারের ওপর হামলা চালায় এবং রাজবাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করে। এখানকার কালীমন্দির নামক স্থানেও তারা ক্যাম্প স্থাপন করে। এ উপজেলায় পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করার মতো কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন ছিল না। তবে তারা বেশকিছু লোককে তাদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে সহযোগী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করে। মানিকছড়িতে প্রবেশের সময় তারা যোগ্যাছালা বাজারে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর পাকসেনারা মানিকছড়ি সদরে মং প্রু সেইন-এর রাজবাড়িতে লুণ্ঠন চালায়। তারা একাধিক আদিবাসী নারীকে নির্যাতন করে।
যোগ্যাছালার নোনাবিল নামক এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ১৬ই ডিসেম্বর মানিকছড়ি উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [ক্যচিং মারমা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!