You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.26 | মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণ (মুজিবনগর, মেহেরপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণ (মুজিবনগর, মেহেরপুর)

মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণ (মুজিবনগর, মেহেরপুর) পরিচালিত হয় তিনদিন – ২৬শে জুলাই, ১লা আগস্ট ও ৩রা আগস্ট। এতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত এবং তাদের বেশকিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
মানিকনগরে পাকবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় মুজিবনগর এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এ আর আযম চৌধুরী জুলাই মাসের শেষদিকে মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ২৬শে জুলাই তাঁর নির্দেশে কমান্ডার সুবেদার আব্দুল মতিন পাটোয়ারী এবং আল আমিন ৯নং প্লাটুনের যোদ্ধাদের নিয়ে মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এতে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়।
হাবিলদার আবু তৈয়ব এবং ল্যান্স নায়েক রহমতুল্লাহ খান সোনার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ১লা আগস্ট মানিকনগর পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। ঘণ্টাখানেকের যুদ্ধে একজন পাকসেনা নিহত হয়। এ- যুদ্ধের ফলাফলে ক্যাপ্টেন এ আর আযম চৌধুরী সন্তুষ্ট হতে না পেরে মানিকনগর ক্যাম্প আক্রমণের জন্য ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। মুক্তিযোদ্ধা আল আমিন বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের ৫০-৬০ জনকে ডেকে ২রা আগস্ট রাতে সবাই মিলে একযোগে মানিকনগর গিয়ে পাকসেনা ক্যাম্পের চতুর্দিকের বাংকারে হ্যান্ড গ্রেনেড ও শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আবদুল মতিন পাটোয়ারী সি-কোম্পানির ৯নং প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে রাত ২টার পর মানিকনগরে অবস্থান নেন। বোমা বাহিনী যথারীতি ক্যাম্প এবং বাংকারগুলিতে সফলভাবে বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালায়। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে গোলাবর্ষণ শুরু করেন। রাতের অন্ধকারে হঠাৎ আক্রমণে পাকসেনারা দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। সকালে অবশিষ্ট সৈন্যরা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা মানিকনগর ক্যাম্প থেকে ২৭টি এ্যান্টিপার্সন মাইন ও ৮২টি মিনি মর্টার বোমা উদ্ধার করেন। মানিকনগর ক্যাম্প উঠে যাওয়ার সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে নুরপুর ক্যাম্পও উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি সৈন্যরা। এদুটি ক্যাম্প উঠে যাওয়ার ফলে মুজিবনগর এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। [মো. জামালউদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড