মান্দারপুর গণহত্যা (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
মান্দারপুর গণহত্যা (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংঘটিত হয় ৮ই সেপ্টেম্বর। এতে ৩৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ৩০ জনকে জীবিত মাটিচাপা দেয় হয়। নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ৮ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মান্দারপুর গ্রামের আখতার উদ্দিনের বাড়িতে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন এক সঙ্গে মিলিত হয়ে রাজাকার এবং পাকিস্তানি সেনাদের পৈশাচিক নির্যাতন, জনসাধারণের বাড়িঘরে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলছিল। ঐ বাড়ির সন্নিকটে রাজাকার এবং পাকিস্তানি সেনাদের ক্যম্প ছিল। একজন রাজাকার গোপনে পাকিস্তানি সেনাদের এদের সম্বন্ধে সংবাদ দেয়। সঙ্গে-সঙ্গে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং অতর্কিতে স্টেনগান থেকে ঘরটি লক্ষ করে আক্রমণ চালায়। তাদের এ আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য যারা রাস্তায় বের হয়ে আসছিল, তাদের মধ্যে অনেকে গুলিতে নিহত হয়। মুমুর্ষু লোকদের ওপর চলে বেয়নেট চার্জ। ফলে ঘটনাস্থলেই ৩৪ জন লোক শহীদ হন। তাঁদের কয়েকজন হলেন— অশ্বিনী পোদ্দার, মহানন্দ আচার্য, আব্দুল মিছির, মেথর ছামারিয়া ও কাঞ্চন মিঞা। এছাড়াও অত্র এলাকার ও অন্যান্য এলাকার ৩০ জন লোককে সন্দেহবশত জীবন্ত মাটিচাপা দেয়া হয়। মোগড়া গ্রামের গোলাম শফিককে ঘরের মধ্যে রশি দ্বারা বেঁধে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ফলে তিনি আগুনে পুড়ে মারা যান।
পাকিস্তানি সেনারা মনিয়ন্দ ইউনিয়ন ও অন্যান্য এলাকা থেকে বহু মেয়েকে ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন চালায়। ফলে এ এলাকার অধিকাংশ লোক দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেয়। [জয়দুল হোসেন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড