You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী মান্না দে - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী মান্না দে

মান্না দে, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী (১৯১৯-২০১৩) ভারতের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। তাঁর প্রকৃত নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। তিনি ১৯১৯ সালের ১লা মে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল ও স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। অধ্যয়নকালে তিনি তাঁর কাকা কৃষ্ণ চন্দ্ৰ দে (কে সি দে)-সহ অন্যান্য খ্যাতনামা সংগীত শিক্ষকদের কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) গমন করেন এবং সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন (১৯৪২)। তামান্না চলচ্চিত্রে (১৯৪২) দ্বৈত সংগীত ও রাম রাজ্য চলচ্চিত্রে (১৯৪৩) একক সংগীত গেয়ে গায়ক হিসেবে তাঁর অভিষেক ঘটে। পঞ্চাশ-সত্তরের দশকে গায়ক হিসেবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের শতাধিক সংগীত পরিচালকের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। বাঙালি শ্রোতাদের কাছেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের বিখ্যাত সংগীতকারদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং মূলধারার বাংলা সংগীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হিন্দি ও বাংলা ছাড়াও তিনি ভারতের সব প্রধান আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়েছেন। বিভিন্ন ভাষায় তিনি ৪ হাজারের অধিক গান রেকর্ড করেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি হিন্দি সংগীত জগৎ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন, কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রে, বিভিন্ন ভাষায় ভজন ও গজল গাওয়া অব্যাহত রাখেন এবং বিভিন্ন স্টেজ শো-তে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। সংগীত জগতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ (১৯৭১), ‘পদ্মভূষণ’ (২০০৫) এবং ‘দাদাসাহেব ফালকে’ (২০০৭) পদকে ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৪) ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৮) তাঁকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রদান করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে মান্না দে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং নিজে তাতে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর গান সেই দুঃসময়ে বাংলাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। সংগীতের মাধ্যমে তিনি মানুষের মনে মুক্তির চরম আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে তিনি শরণার্থীদের জন্য অর্থসংগ্রহ করে তা শরণার্থী শিবির-এ প্রেরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মান্না দে-কে ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি ২০১৩ সালের ২৪শে অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড