মামারিশপুর যুদ্ধ (ভালুকা, ময়মনসিংহ)
মামারিশপুর যুদ্ধ (ভালুকা, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ২০শে নভেম্বর। দুঘণ্টা স্থায়ী এ-যুদ্ধে ৫ জন পাকসেনা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। অপরদিকে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং কয়েকজন আহত হন।
মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা অঞ্চলের সবকটি হানাদার ও রাজাকার ক্যাম্প দখল করার পর ভালুকা থানা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা আফসার বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে শেষ ঘাঁটি ভালুকা থানা ক্যাম্প দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রায়শ রাজাকারআলবদরদের সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে তাদের মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আফসার বাহিনীর ৭৫০ বর্গমাইল মুক্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্স ভেদ করে হানাদার সৈন্যদের প্রবেশ করা ছিল কঠিন ব্যাপার। পাকবাহিনীর শক্তিশালী ও সুসজ্জিত ঘাঁটি ভালুকা থানার দক্ষিণে কালিয়াকৈর, উত্তরে ত্রিশাল, পূর্বে গফরগাঁও এবং পশ্চিমে টাঙ্গাইল সদর ছাড়া সকল এলাকাই তখন প্রায় মুক্ত। ভালুকা সদর থেকে প্রায় ২ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে মামারিশপুর গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবাধ বিচরণ এবং গ্রামের সকলেই ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তাছাড়া কৌশলগত অবস্থান সুদৃঢ় থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই এ গ্রামে প্রবেশ করে বিভিন্ন দিক থেকে ভালুকা থানার ওপর গেরিলা আক্রমণ চালাতেন। এ কারণে পাকবাহিনী মামারিশপুর গ্রামে প্রবেশ করে বেশ কয়েকবার লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে।
২০শে নভেম্বর পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী মামারিশপুর গ্রামে প্রবেশ করে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এ খবর সিগন্যালম্যান দ্রুত মল্লিকবাড়ীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেন। সংবাদ পাওয়া মাত্রই মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দলে বিভক্ত করে মামারিশপুর গ্রামে মুভ করার নির্দেশ দেন।
মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একদল ও কোম্পানি কমান্ডার সিরাজুল হকের নেতৃত্বে অপর একটি দল মামারিশপুর গ্রামে প্রবেশ করে পাকহানাদার ও রাজাকার বাহিনীর ওপর হামলা করে। উভয় পক্ষের দীর্ঘ দুঘন্টার যুদ্ধে ৫ জন পাকসেনা নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। হানাদার বাহিনীর লোকবল এবং ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা বেকায়দায় পড়ে পিছু হটেন। পিছু হটতে গিয়ে তাঁদের অনেকে লাউতির খাদে পড়ে যান। সবাই উঠে আসতে সক্ষম হলেও মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক এক বুক কাদায় আটকে যান। কোনো অবস্থাতেই তিনি কাদা থেকে উঠতে পারছিলেন না। তাঁর সঙ্গে থাকা এসএলআর কাদায় আটকে গিয়ে বিকল হয়ে যায়। চেষ্টা করেও তিনি তাঁর অস্ত্রটি সচল করতে পারেননি। এ সুযোগে হানাদার বাহিনী অতি কাছে এসে জহিরুল হককে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ জহিরের লাশ অনেকক্ষণ কাদায় পরে থাকে। হানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা জহিরুল হকের লাশ উদ্ধার করে ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ডালুয়া পাড়া গ্রামে নিয়ে আসেন এবং কেমত আলী খানের বাড়ির পুকুর পাড়ে সমাহিত করেন। মামারিশপুর গ্রাম যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। [মো. শফিকুল ইসলাম কাদির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড