You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাধবপুর থানা সদর গণহত্যা (মাধবপুর, হবিগঞ্জ)

মাধবপুর থানা সদর গণহত্যা (মাধবপুর, হবিগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৮শে এপ্রিল। এতে ১৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
১৫ই এপ্রিল আশুগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পাকবাহিনী মাধবপুরের দিকে অগ্রসর হলে ৩নং সেক্টরের অধিনায়ক কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বে শাহবাজপুরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ২১শে এপ্রিল শত্রুরা শাহবাজপুর দখল করে সেখানে তাদের সৈন্য সমাবেশ ঘটায়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন মাধবপুরে এসে অবস্থান নেন। সেখান থেকে শাহবাজপুরে পাকসেনাদের অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি আক্রমণ রচনা করে। ২৮শে এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে শত্রুদের গোলন্দাজ বাহিনী মাধবপুরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মারাত্মক আগুনের বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চারপাশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখা দেয়। বেলা ১২টার দিকে শত্রুরা ৩টি কলামে বিভক্ত হয়ে সোনাই নদীকে মাঝখানে রেখে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। ভয়াবহ এ-যুদ্ধে পাকবাহিনী সর্বশক্তি নিয়োগ করে সামনে অগ্রসর হয়। ফলে বিকেলের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন এবং মাধবপুরের পতন ঘটে।
মাধবপুর থানা সদরে সংঘটিত এ-যুদ্ধের ভয়াবহতায় ভীত হয়ে সেখানকার প্রায় সব মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে যায়। সামান্য কিছু লোক আড়ালে- আবডালে লুকিয়ে থাকে। মাধবপুর পতনের পর পাকসেনারা থানা সদরে যাকে যেখানে পেয়েছে, তাকে সেখানে গুলি করে হত্যা করেছে। এতে ১৫ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ শহীদ হন। অবস্থা এমন ছিল যে, গণহত্যার শিকার এ মানুষগুলোকে সমাহিত করার কেউ তখন সেখানে ছিল না। কেউ-কেউ কুকুর-শেয়াল-শকুনের খাবারে পরিণত হয়। দু-তিন দিন পর কিছু লোক তাদের ঘরবাড়ি চুপি-চুপি দেখার জন্য এসে এসব লাশ পড়ে থাকতে দেখে। তখন তারা পড়ে থাকা লাশ ও দেহাবশেষ এক স্থানে জড়ো করে মাটিচাপা দেয়। এর মধ্যে অহিদ হোসেন পাঠান, ময়েজ উদ্দিন, জনব আলী, চেরাগ আলী, বিধু রায়, বঙ্কবিহারী রায় ও মধু সুইপারের মৃতেদহ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!