মাধুপুর কাচারির যুদ্ধ (মনোহরদী, নরসিংদী)
মাধুপুর কাচারির যুদ্ধ (মনোহরদী, নরসিংদী) সংঘটিত হয় ১লা অক্টোবর। এতে ৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৭ জন আহত হয়।
মনোহরদীর কতিপয় রাজাকার ও দালালের সহায়তায় মাধুপুর (হেতেমদি) কাচারিতে পাকসেনারা একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মনোহরদী ও সাগরদির মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটা উঠিয়ে দেয়া ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। সাগরদি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দুর্গ ছিল। সেখানে চালাকচর থেকে মনোহরদী যাওয়ার পথে মাধুপুর কাচারিতে কোনোভাবেই পাকবাহিনীর ক্যাম্প থাকতে দেয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধারা এ এলাকাকে হানাদারমুক্ত রাখার জন্য উক্ত ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। অক্টোবর মাসের ১ তারিখ দুপুর ১২টার দিকে খবর পাওয়া যায় যে, পাকবাহিনীর পেট্রল দল হেতেমদি গ্রামের ভেতর ঢুকেছে। সংবাদ পাওয়া মাত্রই মুক্তিবাহিনী হাতিয়ার ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রস্তুত হয়ে কাচারির পশ্চিম-দক্ষিণে একটি বাড়ির পাশে জঙ্গলে এম্বুশ করে। ইতোমধ্যে পাকবাহিনী তাদের দালালদের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর আগমনের কথা জেনে যায়। তারা গ্রাম থেকেই মুক্তিবাহিনীর পজিশন আন্দাজ করে ফায়ার করতে-করতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিবাহিনীও অনবরত ফায়ার করতে থাকে। প্রায় ১ ঘণ্টা গোলাগুলির পর মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা কভারিং ফায়ার দিয়ে পিছু হটে আসেন। এ-যুদ্ধে পাকসেনাদের ৩ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়। পরের দিন লাখপুর গ্রামে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের ওপর দিয়ে পাকিস্তানি ফাইটার খুব নিচু দিয়ে কয়েকবার চক্কর দেয়, কিন্তু কোনো প্রকার গোলাবর্ষণ করেনি। তাই যুদ্ধের ২-৩ দিন পর মনোহরদী বাজারের মোহাম্মদ আলী মার্কেটের মালিক মোহাম্মদ আলীকে পাকবাহিনীর দালালি করার অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধারা শাস্তি দেন। এ সময় মনোহরদীর চকপাড়া গ্রামের কুখ্যাত খুনী ও রাজাকার হাছেন আলীকে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করা হয়। [এম আর মাহবুব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড