You dont have javascript enabled! Please enable it!

মানরা গণকবর (মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা)

মানরা গণকবর (মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা) মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মানরা গ্রামে অবস্থিত। মানরা গ্রামের মুন্সি বাড়ি গণহত্যায় ১৩ শহীদকে এ গণকবরে সমাহিত করা হয়।
১০ই সেপ্টেম্বর হানাদার বাহিনীর একটি দল ডাকাতিয়া নদীর চিতোষী খেয়াঘাট পার হয়ে হাসনাবাদ অভিযানে আসে। অভিযানের খবর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আগেই জানতে পারেন। সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠান, বি এম কলিম উল্লাহ, আবুল কাশেম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের প্রতিহত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা আশিয়াদারী মসজিদের কর্ণারে, হাসনাবাদ জম্মাদার বাড়ির পুকুরের উত্তর পাড়ে, তালগাছের গোড়ায় এলএমজি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। আওতার মধ্যে এসে গেলে তাঁরা হানাদারদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করেন। আকস্মিক আক্রমণে হানাদাররা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অর্ধশতাধিক হানাদার সদস্য নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হানাদার বাহিনী মরিয়া হয়ে ওঠে তিন দিন পর ১৩ই সেপ্টেম্বর চারদিক থেকে হানাদার বাহিনী হাসনাবাদ ও মানরা আক্রমণ করে।
১৩ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মানরা গ্রামের মুন্সি বাড়িতে গণহত্যা চালায়। একই দিন তারা হাসনাবাদ বাজার এবং পার্শ্ববর্তী গোবিন্দ গোপাল চৌধুরী বাড়ি, আশিয়াদারী ভূঁইয়া বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার দিন খুব ভোরবেলা হানাদার বাহিনীর আক্রমণে গ্রামের সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। কয়েকজনকে ধরে হানাদাররা গাছ থেকে ডাব পাড়িয়ে খায়। এরপর সকলকে একত্রে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ গণহত্যায় মুন্সি বাড়ির ১৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। তারা হলেন— জিন্নত আলী, রৌশন আলী, কেরামত আলী, নোয়াব আলী, সায়েদ আলী, আরব আলী, তৈয়ব আলী, কুটু মিয়া, সরওয়ার মিয়া, চাঁন মিয়া, ইউনুস মিয়া, কামাল উদ্দিন এবং সাতঘড়িয়া গ্রামের মোসলেমুর রহমান ওরফে মোসলেম মিয়া। ঘটনাক্রমে আবুল খায়ের, নূরুল হক, একরামুল হক, হাসান আলী ও আলী আশ্বাদ বেঁচে যান। গণহত্যার পর এলাকাবাসী শহীদদের মানরা গ্রামে গণকবরে সমাহিত করে, যা মানরা গণকবর হিসেবে পরিচিত। গণকবরটি সংরক্ষণের কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। [নঈম আজাদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!