You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাদারীপুর ৯নং ব্রিজ অপারেশন (মাদারীপুর সদর)

মাদারীপুর ৯নং ব্রিজ অপারেশন (মাদারীপুর সদর) পরিচালিত হয় ৩০শে সেপ্টেম্বর। ব্রিজটি ছিল মাদারীপুর- মস্তফাপুর রোড়ে। এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের পেতে রাখা শক্তিশালী এন্টিট্যাংক মাইন বিস্ফোরণে ৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে ৯নং ব্রিজের ঢালে পিচের রাস্তা খুঁড়ে নিপুণ হাতে মাইন পেতে রাখার দুঃসাহসিক কাজটি করেছিলেন খাগদি গ্রামের সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সরদার (পিতা কলম সরদার)। তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁর ছোটভাই আজাহার সরদার এবং একই গ্রামের আবু তালেব বিশ্বাস (পিতা ঝিয়া বিশ্বাস)। শাহজাহান সরদার ছিলেন মুক্তিবাহিনীর একজন বিশ্বস্ত গোয়েন্দা। ৯নং ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকে বর্তমান যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাছে সড়কের ওপর এন্টিট্যাংক মাইন পুঁতে হানাদার সেনাবোঝাই বাস উড়িয়ে দিয়েছিলেন এ তিন দুঃসাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। শাহজাহান সরদারের গোয়েন্দা টিমের জন্য ৪টি রিকশা, ৪টি ডিঙ্গি নৌকা এবং একটি বাইসাইকেল ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গোপনে সেলাই করা যুদ্ধপোশাক আনতে ঘটনার আগের দিন বিকেলে শাহজাহান সরদার মাদারীপুর পুরান বাজারের লাকি টেইলার্সে যান। লাকি টেইলার্সের মালিক হাজিরহাওলা গ্রামের দর্জি এস্কেন্দার আলী গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মোটা কালো কাপড়ের হাফপ্যান্ট ও হাফহাতা জামা সেলাই করে দিতে রাজি হন। এসব জামা আনতে গিয়ে শাহজাহান জানতে পারেন যে, পরের দিন পাকিস্তানি সেনারা সমাদ্দার ব্রিজের আশপাশের গ্রামগুলোতে আক্রমণ করবে। একথা শুনে পোশাক না নিয়েই তিনি দ্রুত কমলাপুর গ্রামের ডাক্তার বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে রিপোর্ট করেন। খলিল বাহিনীর কমান্ডার মেজর খলিল খান তাঁকে দুটি এন্টিট্যাংক মাইন দিয়ে তা নির্দেশিত স্থানে পুঁতে রাখার দায়িত্ব দেন। শাহজাহান সরদারের তেমন প্রশিক্ষণ ছিল না। তিনি ভারতেও যাননি। নাজিমউদ্দিন কলেজ মাঠে মার্চ মাসে কিছু প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। খলিল খান তাঁকে মাইন পুঁতে রাখার কৌশল শিখিয়ে দেন।
পরদিন খুব সকালে এক বোতল এসিড, দুটি শাবল এবং ছোটভাই আজাহার ও আবু তালেবকে সঙ্গে নিয়ে শাহজাহান একটি ডিঙ্গি নৌকায় ৯নং ব্রিজের কাছে সিএন্ডবি রাস্তায় যান। সকাল ৯টার দিকে রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মি বোঝাই ৩টি বাস মস্তফাপুরের দিকে চলে গেলে খুব দ্রুত তাঁরা ৯নং ব্রিজের ঢালে পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০০ গজ রাস্তা খুঁড়ে মাইন পুঁতে রাখেন। এসিড ঢেলে দিলে পিচ গলে নরম হয়ে যায়। শাবলের মাথা দিয়ে পিচ সরিয়ে ইট তুলে গর্ত খুঁড়ে মাইন বসিয়ে আবার খোয়া, গলা পিচ দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দেন যাতে সহজে কিছু বোঝা না যায়। রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়ি সমাদ্দার ব্রিজের আগে ঘটকচর ব্রিজের কাছে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধে তারা আর সামনে অগ্রসর না হয়ে ফিরে আসে। তাড়া খেয়ে আসায় তাদের গাড়ির বেপরোয়া গতি ছিল। ৯নং ব্রিজের ঢালে আসতেই মাইন বিস্ফোরিত হয়। তিনটি বাসের প্রথম দুটিতে ছিল পাকিস্তানি সেনারা। পেছনের বাসে ছিল রাজাকাররা। পাকসেনাদের প্রথম বাস মাইনের আঘাতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে ৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। পেছনের বাস দুটির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বিস্ফোরণের পর হানাদাররা হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। তারপর বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে আরম্ভ করে। মস্তফাপুরের দিক থেকে গাড়িবহর ফিরতে দেখে শাহজাহান ও তাঁর দলের সদস্যরা সামনের ধানক্ষেতে আত্মগোপন করেন। [মো. শহীদুল কবীর খোকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!