You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাধবদী যুদ্ধ (নরসিংদী সদর)

মাধবদী যুদ্ধ (নরসিংদী সদর) সংঘটিত হয় ৮ই অক্টোবর। এতে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও দুজন আহত হন। কয়েকজন পাকসেনাও আহত হয়।
অক্টোবর মাসে দিঘীরপাড়ের মনির উদ্দিন আহমেদ ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ নিয়ে এলাকায় আসেন। তাঁর গ্রুপটি তিনটি সেকশনে বিভক্ত ছিল। একটি সেকশনের দায়িত্বে ছিলেন নোয়াপাড়ার মোজাম্মেল, একটির দায়িত্বে কাঠালিয়ার রহিম এবং অপরটির দায়িত্বে ছিলেন মনির নিজে। তিনটি গ্রুপই মাধবদী এলাকায় অবস্থান করছিল।
৮ই অক্টোবর বেলা ১০টার দিকে জয়দেবপুরের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল মাধবদী বাজারে আসে। তাঁরা ভারতে ট্রেনিং শেষে নিজ এলাকায় ফিরছিলেন। উল্লেখ্য যে, জয়দেবপুর, রূপগঞ্জ, তারাবো ও ভুলতা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই মাধবদী হয়ে নিজ-নিজ এলাকায় প্রবেশ করতেন। জয়দেবপুরের দলটি মাধবদী এসে পৌছলে মনির গ্রুপের মোতালিব পাঠানসহ নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। এমন সময় বেলা ১১টার দিকে খালেক প্রধানের ক্যালেন্ডার মিলের বিহারি সিকিউরিটি গার্ড খান এসে খবর দেয় যে, আজ যে-কোনো সময় পাকসেনারা মাধবদী ও শেখেরচর বাজারে আসতে পারে। তারা যদি আসে তাহলে তার পক্ষে এ বাজারদুটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না, যা এতদিন সে করে এসেছে। সে মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানায়। উল্লেখ্য যে, এই খান বিহারি হলেও দীর্ঘদিন এলাকায় বসবাস করায় এবং এলাকার অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে এলাকাবাসীর কোনোরূপ অনিষ্ট তার কাম্য ছিল না। এ কারণেই সে পাকসেনাদের আগমনের খবরটি মুক্তিযোদ্ধা ও বাজারের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে দেয়।
এদিকে পাকসেনাদের আগমনের খবর পেয়ে মনির তাঁর গ্রুপ নিয়ে তাদের প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর তিনটি সেকশনের একটিকে মাধবদী মোড়ের পশ্চিম পাশে কান্দাপাড়ায় এম্বুশ করতে বলেন। ঢাকার দিক থেকে যদি পাকসেনারা আসে সে সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে তাদেরকে বাঁধা দেয়ার জন্য এই এম্বুশ রচনা করা হয়। অন্যদিকে নরসিংদী থেকে পাকসেনাদের আসার সম্ভাবনা বেশি থাকায় মাধবদী ও নোয়াপাড়ার মাঝখানে গনেরগাঁওয়ের ঈদগাহের কাছে নরসিংদী-ডেমরা সড়কের পূর্বপাশে একটি ও পশ্চিম পাশে একটি সেকশন এম্বুশ রচনা করে অপেক্ষা করতে থাকে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নরসিংদীর দিক থেকে পাকসেনাদের ৪টি জিপ মাধবদীর দিকে অগ্রসর হয়। এম্বুশের কাছাকাছি আসামাত্র পশ্চিম দিকের গ্রুপটি গাড়ি লক্ষ করে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পাকসেনাদের দুটি জিপের টায়ারে গুলি লেগে চাকা বসে যায়। কিছুক্ষণ উভয় পক্ষে গোলাগুলি চলার পর পাকসেনারা পিছু হটে নরসিংদীর দিকে চলে যায়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর কয়েকজন সৈন্য আহত হয়। পক্ষান্তরে তেতুলিয়ার বাবুল মাস্টার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ভূঁইয়মের আবুল হাসেম ও কাঠালিয়ার মোসলেম আহত হন। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!