মাজাট যুদ্ধ (ফরিদপুর, পাবনা)
মাজাট যুদ্ধ (ফরিদপুর, পাবনা) সংঘটিত হয় ১৭ই নভেম্বর। এতে প্রায় ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে ফরিদপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামের ৩ জন এবং মাজাট গ্রামের ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার বড়াল নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা ডেমরা হয়ে ফরিদপুর (পাবনা) যাবার পথে মাজাট গ্রামটি অবস্থিত। ১৭ই নভেম্বর (২৭শে রমজান) এ গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন শাহজাদপুর এবং ফরিদপুরের বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আঞ্চলিক কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক মুকুল, মনজুর মোর্শেদ সেলিম, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল মোমিন, রফিকুল ইসলাম বাবু, আব্দুল ওহাব, আবু বকর, আব্দুল লতিফ প্রমুখ। এছাড়া পাবনার আবুল মনসুর এবং শাহজাদপুরের ফকরুল ইসলামসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে অংশ নেন।
দূরবর্তী এবং নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে এ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন। স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের এ খবর জানিয়ে দেয়। এ খবরের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দেখানো পথে বাঘাবাড়ী থেকে প্রায় দেড় শতাধিক পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে আসে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক মুকুলের নেতৃত্বে প্রায় ৪০-৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা মাজাটে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের অপেক্ষায় থাকেন। বড়াল নদীর পূর্ব এবং পশ্চিম পাড়ে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকেই অবস্থান নেন। হানাদার বাহিনী মাজাট পৌঁছানোর সঙ্গে- সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা দুই-দিক থেকে গেরিলা কায়দায় তাদের ওপর আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ-যুদ্ধে প্রায় ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে ফরিদপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামের ৩ জন এবং মাজাট গ্রামের ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। এ-সময় পাকসেনাদের বেশকিছু অস্ত্র ও গোলা-বারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। মাজাট যুদ্ধের সাফল্যে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বহুগুণ বেড়ে যায়। [মো. আশরাফ আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড