You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাঝদিয়া মাদ্রাসা বধ্যভূমি ও গণকবর (ঈশ্বরদী, পাবনা)

মাঝদিয়া মাদ্রাসা বধ্যভূমি ও গণকবর (ঈশ্বরদী, পাবনা) পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়।
পাকবাহিনী ১১ই এপ্রিল ঈশ্বরদীতে পৌঁছে শান্তি কমিটি- ও রাজাকার বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করে। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী ও অবাঙালিরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়। বিশেষ করে জামায়াত নেতা খোদাবক্স খান প্রথম থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ঈশ্বরদী থানার বিভিন্ন ইউনিয়নের জামায়াত অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের জন্য তারা প্রচেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ঈশ্বরদীর পশ্চিমে পদ্মাতীরবর্তী গ্রাম মাঝদিয়াকে তারা বেছে নেয়। কারণ এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এবং এখানকার বহু পুরনো মাঝদিয়া বাবউল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সুপার মওলানা নাজিম উদ্দিন খান ছিল ঘোরতর জামায়াত সমর্থক। তার উদ্যোগে এলাকার জামায়াত সমর্থক ও মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সে নিজেও থানা শান্তি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়। রাজাকার বাহিনী গঠনের পর ভারতে আশ্রয় নেয়া ললিত পালের বাড়ি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে রাজাকার ক্যাম্প করা হয়। শান্তি কমিটি গঠনের পর তাদের সহায়তায় পাকবাহিনী মাঝদিয়া গ্রামে প্রবেশ করে এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক সন্দেহে ৩ জন নিরীহ বাঙালিকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশ পাকশী রেল স্টেশন সংলগ্ন ইঁদারায় ফেলে দেয়। নিহতরা হলেন ইসাহক মোল্লা, জমসেদ মোল্লা ও নিয়াত আলী মণ্ডল। এরা সবাই মাঝদিয়ার পার্শ্ববর্তী ধাপাড়ি গ্রামের মোল্লাপাড়ার অধিবাসী।
মাঝদিয়া ক্যাম্পে ছিল ২৫ থেকে ৩০ জন রাজাকার। তারা সমস্ত গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ইতোমধ্যে ভারতে ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আগমন শুরু হলে তাঁদের মাঝদিয়া নদীর ঘাট থেকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে সাবেক ইউপি সদস্য দেলওয়ার হোসেনের পরিবার। এরই মধ্যে এ এলাকায় রেকি করতে আসা সানিকদিয়াড় চরের একজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লে তাঁকে পদ্মাচরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে মুক্তিযোদ্ধা আগমনের অজুহাতে একদিন ভোরবেলা রাজাকার ও অবাঙালিরা একযোগে গ্রামের ঘুমন্ত নরনারীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। এ গ্রামের অধিবাসী পাকশী পেপার মিলস হাইস্কুলের শিক্ষক অশোক ঘোষ জানান, সেদিন প্রায় ৪০-৪৫ জনের লাশ একটি শিমুল গাছের নিচে স্তূপ করে রাখা হয়। এ লাশগুলোই পরে রাজাকাররা ফাজিল মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদের পাশের ইঁদারায় ফেলে দেয়। একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দেলওয়ার হোসেনের ভাষ্যমতে, পরবর্তীকালে এ ইঁদারা থেকে ৩৮টি মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। নিহতদের অধিকাংশই মাদ্রাসাপাড়া ও মৃধাপাড়ার অধিবাসী ছিলেন। তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায়, তারা হলেন- আরশেদ আলী, ইশরাত, ডুমনা, ডাক্তার হারুবাবু, রূপবান ও হাবিল। [আবুল কালাম আজাদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!