You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে মাটিরাঙ্গা আদর্শ উপজেলা (খাগড়াছড়ি) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে মাটিরাঙ্গা আদর্শ উপজেলা (খাগড়াছড়ি)

মাটিরাঙ্গা আদর্শ উপজেলা (খাগড়াছড়ি) ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন-এর ডাক এবং ৭ই মার্চের দিকনির্দেশনাপূর্ণ ভাষণ সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায়ও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি করে। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’ – বঙ্গবন্ধুর ভাষণে এ আহ্বান এ অঞ্চলের মুক্তিকামী জনতাকে প্রচণ্ডভাবে উদ্বুদ্ধ করে। বিক্ষুব্ধ জনতা আর কোনো নির্দেশের অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে তবলছড়ির ইপিআর ক্যাম্পে (বর্তমানে বিজিবি ক্যাম্প) আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন ও দেওয়ান বাজার ইপিআর ক্যাম্পে ৬ জন মোট ১২ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে।
তবলছড়ি ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. আমানউল্লা চৌধুরীর নেতৃত্বে মাটিরাঙ্গার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের মে মাসে স্থানীয় তরুণদের নিয়ে তবলছড়ি হাসপাতাল মাঠে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়। কিছু তরুণ ও ইপিআর সদস্য একত্রিত হয়ে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানালে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়। এরপর ৫০-৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের জন্য তবলছড়ি হাসপাতালে জড়ো করা হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ শুরু করার আগের দিন আনুমানিক রাত ৩-৪টার দিকে পাকহানাদার বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ছিলেন বিধায় কোনো প্রতিরোধ ছাড়া সেখান থেকে সরে গিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শিলাছড়ি বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এ-সময় মো. আবুল হাশেম ও মো. মুক্তল হোসেনসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এরপর তবলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানউল্লা চৌধুরী এবং মেম্বারবৃন্দসহ অনেক ব্যক্তি শিলাছড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়ে মো. আমানউল্লা চৌধুরী পুনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। উক্ত ক্যাম্পে বিশিষ্টজনরা অবস্থান করছিলেন। এরপর তাদের উদ্যোগে শিলাছড়ি থেকে ৬০-৬৫ জন মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হরিণা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এ ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত টুআইসি ক্যাপ্টেন এনামুল হকের নেতৃত্বে তাঁদের ত্রিপুরা রাজ্যের অম্পিনগরে পাঠানো হয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিক তাঁদের বুঝে নিয়ে বিভিন্ন তাঁবুতে ভাগ করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘ একমাস অম্পিনগর ক্যাম্পের এডজুট্যান্ট মিত্রবাহিনীর মেজর বিজয় সিং-এর অধীনে হাবিলদার মো. আলীর সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ‘সি’ কোম্পানি ৯৪নং প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাইফেল, স্ট্যান্ডগান, এলএমজি ও গ্রেনেডসহ মাটিরাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের আবার হরিণা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এর কিছুদিন পর মুক্তিযোদ্ধারা মেজর রফিকের কাছে রিপোর্ট করলে প্রথম গ্রুপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি কমান্ডার আলী আশ্রাফের অধীনে ন্যস্ত করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন।
অন্যদিকে এ উপজেলার ৪৫-৫৫ জনের অপর একটি দল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অনুপ্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করার জন্য শপথ নেন। সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকের নির্দেশে তাঁরা প্রথমে ভারতের হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে এবং পরে বগাপাড়া ও পালাটানা ট্রেনিং সেন্টারে যোগদান
করেন। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান (স্বাধীরতা-পরবর্তী এমপি) অবস্থান করছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি পালাটানায় ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অধীনে ৪৫ দিন ট্রেনিং নিয়ে হরিণায় ফিরে আসলে তাঁদেরকে কোম্পানী কমার সুবোধ বিকাশ ত্রিপুরার অধীনে ন্যস্ত করা হয় ৷ সেখানে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার পর তাঁদেরকে ১১২ নং প্লাটুনের গ্রুপ কমান্ডার নুরনবীর নেতৃত্বে ভারতের শিলাছড়ি বর্ডার পার করে যুদ্ধ করার জন্য তবলছড়িতে পাঠানো হয়। এছাড়া ১১২ নং প্লাটুনের কমান্ডার মো. মনসুর আহম্মদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা হরিণা থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে পালাটানা, বগাপাড়া, অম্পিনগর ও আসামের লোহারবন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মাটিরাঙ্গায় ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার ৯৪ নং প্লাটুনের কমান্ডার ছিলেন মো. আলী আশ্রাফ (পিতা আবিদ আলী, বড়বিল, তবলছড়ি) এবং সহকারী কমান্ডার ছিলেন মো. আলী আহমদ (পিতা সফর আলী, শনটিলা, পানছড়ি উপজেলা; মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এলএমজি ম্যান ছিলেন) ও মো. আবুল হাশেম (পিতা আলী মিয়া মজু, বড়বিল, তবলছড়ি)। ২১২নং প্লাটুনের কমান্ডার ছিলেন মো. নুরনবী (পিতা সেকান্দর আলী, বড়নাল; পরবর্তীতে কুকিছড়ায় গিয়ে তাঁর গ্রুপ ৯৪নং প্লাটুন কমান্ডার আলী আশ্রাফের অধীনে যোগদান করে ও তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে) এবং সহকারী কমান্ডার ছিলেন মো. আব্দুল খালেক (পিতা মো. মোস্তফা)।
২৩ ও ২৪শে সেপ্টেম্বর ডাইনছড়ি প্রতিরোধযুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম গ্রুপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্লাটুন কমান্ডার মো. আলী আশ্রাফের অধীনে ভারতের হরিণা ক্যাম্প থেকে বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছলায় যুদ্ধ করার জন্য পাঠানো হয়। তাঁরা ডাইনছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করে রাস্তায় পাকবাহিনীর চলাচলের ওপর নজরদারি করতে থাকেন এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প মানিকছড়ির রাজবাড়ি থেকে পাকসেনারা এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালালে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা মুখোমুখি যুদ্ধের পর পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের সাক্রম বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে ওঠেন। ডাইনছড়ির প্রতিরোধযুদ্ধএ ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মনসুর আহম্মদের গ্রুপ মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের সহদেব হেডম্যানের বাড়িতে স্থাপিত পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে সেখান থেকে তাদের হটিয়ে দেয়।
মাটিরাঙ্গা আদর্শ উপজেলা ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় পাকবাহিনী এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এখানে প্রবেশ করলেও এ অঞ্চলে তারা কোনো স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারেনি। তবে স্থানীয় রাজাকার দের সহযোগিতায় এ উপজেলার দক্ষিণাংশে বেলছড়ি ইউনিয়নে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে।
১০ই এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী অযোধ্যা বাজার, লাচারীপাড়া, দেওয়ান বাজার, ডাকবাংলা, তবলছড়ি বাজার, কুমিল্লা টিলা ও তাইন্দং বাজার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ২৫শে মে বিকেল ৫টায় তারা তবলছড়ির কুমিল্লা টিলার করাটি সিদ্দিকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আলী আশ্রাফের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার কারণে পাকবাহিনী ২০শে জুন ভোর ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে স্থানীয় ২০ জনকে ধরে এনে তাইন্দং উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পাশে হত্যা করে। তাইন্দং গণহত্যায় মো. হারুন অর . রশিদ (পিতা আব্দুর রহমান মাস্টার, ১নং তাইন্দং ইউনিয়ন) এবং মো. আব্দুল কাদের (পিতা আলী আহম্মদ, ১নং ওয়ার্ড, ২নং তবলছড়ি ইউনিয়ন) সপরিবারে নিহত হন। ২৮শে জুন রাত ১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা মোক্তল হোসেনের বাড়ি এবং রাত ৩টার দিকে আলী আহমদের বাড়ি পাকহানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দেয়। ৩০শে সেপ্টেম্বর তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বার্তাবাহক হাছি রঞ্জন ত্রিপুরাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে লোহার রড দিয়ে পেট ও দুই হাত এবং পেরেক দিয়ে দুই চোখ ছিদ্র করে তিলে-তিলে কষ্ট দিয়ে হত্যা করে। পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক সাহেরা খাতুন নামে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হন।
মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার খাওয়ানো ও সহযোগিতা করার কারণে পাকবাহিনী বাচ্চু ড্রাইভারের পিতা অহিদুর রহমানের বাড়িতে বারবার হানা দিয়ে গোলাগুলি করে এবং বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। অহিদুর রহমানকে পাকবাহিনী নিয়ে যেতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আলী আশ্রাফ ক্রসিং ফায়ার করার পর তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পাকহানাদাররা তবলছড়ির সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মো. আমিনুর রহমানের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। তাঁর পিতার হাত-পা বেঁধে গোয়াল ঘরে আগুন দেয়। তবলছড়ি থেকে তারা বহু গরু ও ছাগল লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়।
পাকবাহিনী সাধারণ জনগণকে যেখানে পেয়েছে, সেখানেই নির্যাতন করেছে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো নির্যাতনকেন্দ্র বা বন্দিশিবির ছিল না।
মাটিরাঙ্গা উপজেলায় কোনো বধ্যভূমি বা গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে তাইন্দং উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পার্শ্বের গণহত্যার স্থানটি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত মধ্য জুলাই ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা তবলছড়ি সীমান্ত দিয়ে ফেনী খাল পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গেলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা পাকহানাদার বাহিনী তবলছড়ি হাসপাতাল, কুমিল্লা টিলা ও সিংহপাড়া নামক স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা ফেনী খালের ভেতর থেকে পাল্টা গুলি চালান। এভাবে সারাদিনব্যাপী যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটে লালকুমার পাড়ায় গিয়ে অবস্থান নেয়। এটি ফেনী খাল যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। লালকুমার পাড়ায় পাকবাহিনীর অবস্থানের খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে গিয়ে এম্বুশ নেন। এ সময় রেকি করতে আসা ৮ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়। এ সংবাদ পেয়ে পাকবাহিনী পানছড়ির দিকে চলে যায়। গ্রুপ কমান্ডার নুরনবীর অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ছোট পানছড়ির দিকে ও অপর একটি দল কমলাবাগান হয়ে ভাইবোনছড়ার দিকে অগ্রসর হয়। গৌরাঙ্গপাড়া নামক স্থানে তাঁদের সঙ্গে পাকসেনাদের গুলিবিনিময় হয়। গৌরাঙ্গ পাড়ার যুদ্ধে কেউ হতাহত হয়নি। এরপর ভাইবোনছড়ায় পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম দিন চেঙ্গী নদীর এপার থেকে পাকবাহিনীর দিকে গুলি চালান এবং পরদিন ছোট পানছড়ি গিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী ভাইবোনছড়া ও ছোট পানছড়ি ছেড়ে চলে যায়।
১২ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ভাইবোনছড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে এক ঘণ্টার মতো গোলাগুলির পর পাকসেনারা কুকিছড়ায় চলে যায়। পরদিন ১৩ই ডিসেম্বর কুকিছড়ায় (গাছবান) মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। আড়াই ঘণ্টার মতো এ-যুদ্ধ চলে। -কুকিছড়া যুদ্ধএ অনেক পাকসেনা নিহত হয় এবং পাকবাহিনী সেখান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় তবলছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন হাছি রঞ্জন ত্রিপুরা, কঠিন কুমার ত্রিপুরা, শান্তি রঞ্জন ত্রিপুরা, করাটি সিদ্দিক ও রহমান। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তবলছড়িতে প্রবেশ করে কুমিল্লা টিলায় করাটি সিদ্দিকের বাড়িতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেন। এখান থেকে তাঁরা হাছি রঞ্জন ত্রিপুরা এবং রহমানের মাধ্যমে রেকি করে কুমারপাড়ায় পাকবাহিনীর অবস্থানের খবরাখবর নিতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এক-একদিন এক-এক জায়গায় থাকতে হতো গেরিলা কায়দায়। এ-সময় হাছি রঞ্জন ত্রিপুরা, কঠিন কুমার ত্রিপুরা ও শান্তি রঞ্জন ত্রিপুরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এলাকাবাসীর কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ ও পাকবাহিনীর অবস্থানের খবরাখবর রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন। বিশেষ করে হাছি রঞ্জন ত্রিপুরা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে যুদ্ধ করা খুবই কষ্টকর ছিল। ভাইবোন ছড়া, পানছড়ি ও কুকিছড়ায় পাকবাহিনীর অবস্থানের খবর জানার জন্য তিনি জীবন বাজি রেখে কাজ করার জন্য ছদ্মবেশে গামছা পরে হাতে দা নিয়ে বের হতেন। রাতের অন্ধকারেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের গাইড করতেন। ১৫ই ডিসেম্বর এ উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- মালু মিয়া, বীর প্রতীক (পিতা আফতাব উদ্দিন মিয়া, নতুন পাড়া)। [প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড