মাকড়াই যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল)
মাকড়াই যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১৬ই আগস্ট। এতে ৩৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়। মাকড়াই গ্রাম থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা ২৮ জন রাজাকারকে ধরে ফেলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে ঘাটাইল-ধলাপাড়া সড়কের পাশে মাকড়াই অবস্থিত। ১৬ই আগস্ট মাকড়াইয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ- যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম। ১৬ই আগস্ট ধলাপাড়া আক্রমণে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ঘাটাইলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। পশ্চাদপসরণরত পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য কাদের সিদ্দিকী মাকড়াই গ্রামে অবস্থান নেন। তাঁর সঙ্গে সাইদুর রহমান (কামার্তী, কালিহাতী), শামসু (কস্তুরীপাড়া, কালিহাতী), ফজলুল হক (উপলদিয়া, ঘাটাইল), আবদুল কদ্দুস (ছাব্বিশা, ভূঞাপুর), হাবিবুর রহমান খোকা (শানবান্ধা, সখিপুর), সেলিম সিদ্দিকী (সরাবাড়ী, ঘাটাইল), আবদুল হালিম (কাহারতা, সখিপুর), দুলাল (আকুরটাকুরপাড়া, টাঙ্গাইল), ফজলু (দিগর, ঘাটাইল), আবুল কাশেমসহ ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সবার কাছে চাইনিজ হালকা মেশিনগান, স্টেনগান ও পর্যাপ্ত গোলাবারুদ ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের রেঞ্জের মধ্যে আসতেই কাদের সিদ্দিকী ফায়ার ওপেন করেন। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর সহযোদ্ধারাও ফায়ার শুরু করেন। অতর্কিত এ আক্রমণে ২০-২৫ জন পাকিস্তানি সেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে চলে অবিশ্রান্ত গুলিবর্ষণ। হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া একটি গুলি কাদের সিদ্দিকীর ডান হাতে এসে বিদ্ধ হয়। তাঁর হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। রক্তে চোখমুখ ঢেকে যায়। তিনি বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে, ক্ষতস্থান চেপে ধরে এলএমজির ট্রিগার চেপে যুদ্ধ চালিয়ে যান। তিনি আহত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এমতাবস্থায় মাত্র ১০ মিনিট যুদ্ধ চলার পর পাকিস্তানি বাহিনী পলায়ন করে। এ যুদ্ধে ৩৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়। মাকড়াই গ্রাম থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা ২৮ জন রাজাকারকে ধরে ফেলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। ইতোমধ্যে ঘাটাইল থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি কলাম মাকড়াইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। তারা পথিমধ্যে হাবিবুল হক খান বেনু কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেখানে গৌরাঙ্গীর হাতেম আলী (পিতা হাছেন আলী, গৌরঙ্গী, ঘাটাইল) পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড