মাকলা বাঁশতলা গণকবর (বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর)
মাকলা বাঁশতলা গণকবর (বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর) দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু লোককে হত্যার পর গণকবর দেয়া হয়।
বর্তমান বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কার্যালয় মুক্তিযুদ্ধের সময় সিও (ডেভ) কার্যালয় ছিল। এখানকার বিএডিসি-র বীজ গোডাউন নির্যাতনকেন্দ্র ও বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯শে এপ্রিল বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। সেতাবগঞ্জে প্রবেশ করেই তারা বাঙালিদের ওপর হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। তারা বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ক্যাম্প স্থাপন করে। এর মধ্যে সিও (ডেভ) অফিস ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সুবেদার আসলাম খান। সে ছিল হিংস্র প্রকৃতির এবং চরম বাঙালি বিদ্ধেষী। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে বাঙালিদের ধরে এনে প্রথমে নির্যাতন করত, তারপর তাদের হত্যা করত। এভাবে বীজ গোডাউনে শতশত লোককে হত্যা করা হয়। কাহারোল, বীরগঞ্জ ও বোচগঞ্জের বহু লোক ভারতে পালাতে গিয়ে সিও (ডেভ) অফিসে পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়, যাদের বেশির ভাগ ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কাহারোলের সিঙ্গারীগাঁসহ আশপাশের লোকদের এখানে ধরে এনে হত্যা করা হয়। সিও (ডেভ) অফিস ক্যাম্পের কাছে বিএডিসি-র বীজ গোডাউনে পাকিস্তানি ক্যাম্পে শিউরে ওঠার মতো বর্বরতা চলেছে।
গণহত্যার পর নিহতদের লাশ বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে সেতাবগঞ্জ-কাহারোল রোডের পাশে মাকলা বাঁশতলা এবং তৎসংলগ্ন শিমুল গাছ তলায় গণকবর দেয়া হতো। গণকবরের স্থানটিতে মাকলা বাঁশ গাছের পরিমাণ বেশি হওয়ায় জায়গাটি ‘মাকলা বাঁশতলা’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। এ কারণে এখানকার গণকবরগুলো মাঁকলা বাঁশতলা গণকবর নামে পরিচিত। তবে গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড